দেড়শ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৬৪ রানে পিছিয়ে ভারত

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৬:৪৫ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৯
দেড়শ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৬৪ রানে পিছিয়ে ভারত

ভারতীয় বোলিং তোপে দুই ম্যাচ সিরিজের ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিনই ১৫০ রানে অলআউট হয়ে গেছে সফরকারী বাংলাদেশ। জবাবে দিন শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৬ রান তুলেছে ভারত। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৪ রানে পিছিয়ে টিম ইন্ডিয়া।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে অধিনায়ক হিসেবে নিজের অভিষেক টেস্টে টস জিতেন বাংলাদেশের মমিনুল হক। উইকেটে সামান্য ঘাস থাকায় প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন মমিনুল। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ইনিংসের শুরু করেন দুই বাঁ-হাতি সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস।

১৫০ রানে বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হওয়ার পর শেষ সেশনে ব্যাট হাতে নামে ভারত। মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন সর্বশেষ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ ইনিংসে ২টি সেঞ্চুরি ও ১টি ডাবল-সেঞ্চুরিতে ৫৩৫ রান করা রোহিত শর্মা। তবে এ ইনিংসে বড় স্কোর করতে পারেননি রোহিত। অষ্টম ওভারে বিদায় ঘটে তার।

বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামেন রোহিত। ১টি চারে ১৪ বলে ৬ রান করেন রোহিত। ফলে দলীয় ১৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত।

রোহিতকে হারানোর পর দলের হাল ধরেন আগারওয়াল ও চেতেশ্বর পূজারা। তবে এ জুটি ভাঙার পথও তৈরি করেছিলেন আবু জায়েদ। ২৪তম ওভারে দলীয় ৭৯ রানে আগাওয়ালের ব্যক্তিগত ৩২ রানে সময় স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু হাতের নাগালে থাকলেও সহজ ক্যাচ ফেলেছেন বাংলাদেশের ইমরুল। ফলে ২৬ ওভারে ১ উইকেটে ৮৬ রান তুলে দিন শেষ করে ভারত।

আগারওয়াল ৬টি চারে ৮১ বলে ৩৭ ও পূজারা ৭টি চারে ৬১ বলে ৪৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেন। দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭২ রান যোগ করেছেন আগারওয়াল-পূজার। বাংলাদেশের আবু জায়েদ ২১ রানে ১ উইকেট নেন।

এর আগে ক্রিজে গিয়ে বেশ চাপে পড়েন দুই টাইগার ওপেনার। ভারতীয় দুই পেসার ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদবের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম চার ওভারে তিনটি মেডেন দেন তারা। রান আসে মাত্র ২। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে গালি-পয়েন্টের মাঝ দিয়ে ম্যাচের প্রথম বাউন্ডারি মারেন সাদমান। পরের ওভারে দলকে দ্বিতীয় বাউন্ডারির স্বাদ দেন ইমরুল। ওই ওভারের শেষ বলে ৬ রান করা ইমরুল বিদায় নেন।

দলীয় ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পরের ওভারে ভারতের আরেক পেসার ইশান্ত শর্মার বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আরেক ওপেনার সাদমান। তার ব্যাট থেকেও আসে ৬ রান। অর্থাৎ ১২ রানেই বিদায় ঘটে বাংলাদেশের দুই ওপেনারের।

দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মমিনুল ও মোহাম্মদ মিঠুন। সর্তকতার সাথে খেলায় ১৭ ওভার পর্যন্ত কোন বাউন্ডারির দেখা পাননি তারা। ১৮তম ওভারে গিয়ে বাউন্ডারির দেখা পান মিঠুন। তবে ওই ওভারের শেষ বলে সামির বলে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন মিঠুন। ৩৬ বলে ১টি চারে ১৩ রান করে বিদায় নেন তিনি।

দলীয় ৩১ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন মমিনুল ও মুশফিকুর রহিম। মিঠুনের সাথে জুটিতে ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে স্লিপে একবার ক্যাচ দেন মমিনুল। তবে সেটি আজিঙ্কা রাহানে ধরতে না পারায় বেঁচে যান মুমিনুল। এরপর দ্রুত উইকেটে সেট হয়ে খেলতে থাকেন মমিনুল। অন্যপ্রান্তে ভারতীয় বোলারদের বুঝেশুনে খেলতে থাকেন মুশফিকুর।

২৪তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিককে আউট করার ভালো সুযোগ তৈরি করেছিলেন উমেশ। তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন মুশফিক। তবে ঝাপিয়ে পড়েও তা ধরতে পারেননি বিরাট কোহলি। জীবন পেয়ে দু’টি চার মারেন মুশফিক।

এরপর আর কোন উইকেট না হারিয়েই প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ। ২৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৩ রান তুলে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় টাইগাররা। বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আবারও জীবন পান মুশফিক। দ্বিতীয় জীবন পেয়ে আরও বেশি সর্তক হন তিনি। ৩৪তম ওভারে ভারতের অশ্বিনকে ১টি করে ছক্কা-চার মারেন মুশফিক।

মুশফিক-মমিনুলের ব্যাটিংয়ে শতরানের কাছে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। তবে এ জুটি দলকে শতরানের স্বাদ নিতে পারেননি। দলীয় ৯৯ রানে মমিনুলকে দারুণ এক ঘূর্ণিতে বোল্ড করেন ভারতের অশ্বিন। এতে দেশের মাটিতে ২৫০ উইকেট শিকারের স্বাদ নেন তিনি। ৬টি চারে ৮০ বলে ৩৭ রান করে মুশফিক সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি ভাঙেন মমিনুল হক।

মুশফিকের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ। উইকেটে গিয়ে দ্রুত বাউন্ডারিও তুলে নেন তিনি। তবে ৪৪তম ওভারে রাহানের কল্যাণে জীবন পেয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। জীবন পাওয়া অশ্বিনের বলেই বোল্ড হয়ে ৩০ বলে ১টি চারে ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।

এরপর মুশফিকের সাথে জুটি বাঁধেন উইকেটরক্ষক হিসেবে এ ম্যাচে খেলতে নামা লিটন দাস। প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেন লিটন। পরবর্তীতের ভারতের পঞ্চম বোলার রবীন্দ্র জাদেজাকে দু’টি ও সামিকে ১টি চার মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু চা-বিরতির আগের ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে ডাবল আঘাত হানেন ভারতের পেসার সামি।

৫৪তম ওভারের শেষ দু’বলে মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজকে তুলে নেন সামি। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৫ বলে ৪৩ রান করেন ৩ ও ১৪ রানে জীবন পাওয়া মুশফিক। সামির বলে বোল্ড হন মুশফিক। আর নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম ডেলিভারিতেই লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন মিরাজ।

চা বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ডেলিভারিতেই লিটনের বিদায় নিশ্চিত করেন ভারতের ইশান্ত। কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪টি চারে ৩১ বলে ২১ রান করে আউট হন লিটন। মুশফিক-মিরাজকে শিকার করে হ্যাটট্টিকের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন সামি। সামির হ্যাটট্টিক রুখে দিলেও উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তাইজুল। মাত্র ১ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়েন তাইজুল।

এরপর বাংলাদেশের শেষ উইকেট তুলে নিতে খুব বেশি সময়ক্ষেপণ করতে হয়নি ভারতের বোলারদের। বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান এবাদত হোসেনের উইকেট উপড়ে ফেলেন ভারতের উমেশ। ১৫০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এবাদত ২ রান করেন। ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন আবু জায়েদ। ভারতের সামি ৩টি, অশ্বিন-ইশান্ত-উমেশ ২টি করে উইকেট নেন।


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

দেড়শ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ

দেড়শ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ

এক নজরে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ফ্যাক্টবক্স

এক নজরে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট ফ্যাক্টবক্স

মুশফিকের সামনে দুটি রেকর্ডের হাতছানি

মুশফিকের সামনে দুটি রেকর্ডের হাতছানি

বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছি না : কোহলি

বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছি না : কোহলি