আবারও অলআউট, ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারলো বাংলাদেশ

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ২৯ মে ২০২১
আবারও অলআউট, ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারলো বাংলাদেশ

তিন ম্যাচে প্রথম দুই ওয়ানডে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করলেও শেষ ম্যাচে বাজেভাবে হারলো বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় সফরর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে শেষ ম্যাচে ৯৭ রানের পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো অলআউট করলো লঙ্কানরা।

শুক্রবার (২৮ মে) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে অধিনায়ক কুশল পেরেরা সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের স্কোর গড়ে শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে ওপেনার ও দলের অধিনায়ক কুশল পেরেরা ১২০ রান করেন।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৪২ দশমিক ২ ওভারেই ১৮৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এক সিরিজে বাংলাদেশ দলকে দ্বিতীয়বারের মতো অলআউট করে ৯৭ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। বল হাতে দুশমন্থ চামিরা ৫ উইকেট শিকার করেছেন।

এ ম্যাচ হারলেও ৯ ম্যাচে ৫ জয় ও ৪ হারে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই থাকলো বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১২তমস্থানে শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচ দিয়ে সুপার লিগে প্রথম জয়ের স্বাদ নিল লঙ্কানরা।

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া, ফলে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে চারটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে তিনজনেরই অভিষেক ঘটে। আর বাংলাদেশের একাদশে ছিল দু’টি পরিবর্তন। ওপেনার লিটন দাসের পরিবর্তে মোহাম্মদ নাঈম এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গায় তাসকিন আহমেদ একাদশে সুযোগ পান।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দানুশকা গুনাতিলকাকে নিয়ে প্রথম ওভার থেকেই মারমুখী মেজাজে খেলেন পেরেরা। পাওয়ার-প্লেতে ৭৭ রান তুলে ফেলেন তারা। বাংলাদেশ বোলারদের কোন রকম সুযোগ না দিয়ে দু’জনই সমান ৩৮ রান করে তুলেন।

পাওয়া-প্লেতে অবিচ্ছিন্ন থাকায় আত্মবিশ্বাসে টপবগ করছিলেন গুনাতিলকা-পেরেরার। ১২তম ওভারে তাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরান বাংলাদেশের পেসার তাসকিন। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে গুনাতিলকার উইকেট উপড়ে ফেলেন তিনি। দলীয় ৮২ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ৩৩ বলে ৩৯ রান করেন গুনাতিলকা।

ওই ওভারের শেষ বলে আবারও শ্রীলঙ্কাকে ধাক্কা দেন তাসকিন। তিন নম্বরে খেলতে নামা পাথুম নিশাংকাকে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন। রানের খাতাই খুলতে পারেননি নিশাংকা। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দুই উইকেট নিয়ে বিধ্বংসী মেজাজে তাসকিন।

তাসকিনের জোড়া আঘাতের পর ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর পথের খোঁজে ছিল শ্রীলঙ্কা। পেরেরা ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সেই পথ পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় উইকেটে ৮০ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তারা। জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গতে বোলিংয়ে বারবার পরিবর্তন করেছিলেন অধিনায়ক তামিম। অবশেষে সেই তাসকিনই ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেন। ২২ রান করা মেন্ডিসকে শিকার করেন তাসকিন।

১৫১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হলেও অন্যপ্রান্তে দলের চাকা সচল রেখেছিলেন পেরেরা। সাকিবের বলে ৬৬ ও ৭৯ রানে যথাক্রমে মোস্তাফিজ-আফিফের হাতে দু’বার জীবন নিয়ে সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে যান পেরেরা। এরপর ৯৯ রানে আবারও জীবন পান পেরেরা। মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ ছাড়েন মাহমুুদউল্লাহ রিয়াদ।

তিনবার জীবন নিয়ে ৯৯ বলে ১০৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতো সেঞ্চুরির স্বাদ নেন পেরেরা। তিন অংকে পা দিয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন পেরেরা। তবে পেরেরাকে ১২০ রানে থামিয়ে দেন বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ১২২ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১২০ রান করেন পেরেরা।

৪০তম ওভারে দলীয় ২১৬ রানে আউট হন পেরেরা। পেরেরার আউটের পর শ্রীলঙ্কাকে বড় স্কোর এনে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। সিরিজের প্রথমবার খেলতে নামা নিরোশান ডিকবেলা ৭ রান করে রান আউট হন। আর হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ১৮ রান করে তাসকিনের চতুর্থ শিকার হন।

তবে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৭০ বলে ৪টি চারে অপরাজিত ৫৫ ও রমেশ মেন্ডিসের অপরাজিত ৮ রানে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের তাসকিন ৯ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ২৮৭ রানের লক্ষ্যমাত্রায় শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পেসার দুসমন্থ চামিরার তোপে পড়ে ২৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় টাইগাররা। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ১৭, মোহাম্মদ নাঈম ১ ও সাকিব আল হাসান ৪ রান করে ফিরেন।

শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন ইনফর্ম মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক হোসেন। উইকেটে সেটও হয়ে যান তারা। দলকে বড় জুটি উপহার দিতে দু’জনে ৫০ রানও করে ফেলেন মুশফিক-মোসাদ্দেক। কিন্তু ২৪তম ওভারে তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা অফ-স্পিনার রমেশ মেন্ডিস।

সিরিজে ১টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরি করা মুশফিককে ২৮ রানে থামিয়ে দেন মেন্ডিস। চতুর্থ উইকেটে ৮৩ বলে ৫৬ রান করেন মুশফিক-মোসাদ্দেক। মুশফিকের বিদায়ে ক্রিজে মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী হিসেবে পান মোসাদ্দেক। এ জুটিও দেখে শুনে খেলতে থাকেন। তাদেরও লক্ষ্য ছিল বড় জুটির। ততক্ষনে ৩৭ ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন মোসাদ্দেক।

হাফ-সেঞ্চুরির পরই মোসাদ্দেককে তুলে শ্রীলঙ্কাকে আবারও ব্রেক-থ্রু এনে দেন মেন্ডিস। দলীয় ১২৫ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন মোসাদ্দেক। এ অবস্থায়ও লড়াইয়ে ফেরার আশায় ছিল বাংলাদেশ। তবে মাহমুদুল্লাহর সাথে তাল মেলাতে পারেননি লোয়ার-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন ও মিরাজ। আফিফ ১৬ ও মিরাজ খালি হাতে ফিরেন। আর সেখানেই বাংলাদেশের ম্যাচ হার রচিত হয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ৪২ দশমিক ৩ ওভারে ১৮৯ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৬৩ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৫তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার চামিরা ১৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। ২৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিলেন তিনি।

স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস

[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং  সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

১৫-০-৪, বল-ব্যাটে হতাশার এক সাকিব

১৫-০-৪, বল-ব্যাটে হতাশার এক সাকিব

ডিপিএল সফল হলে বিপিএল নিয়ে ভাববে বিসিবি

ডিপিএল সফল হলে বিপিএল নিয়ে ভাববে বিসিবি

স্পিনে নাকাল ব্যাটাররা, হতাশ আর্থার

স্পিনে নাকাল ব্যাটাররা, হতাশ আর্থার

সিনিয়রদের থেকে যত দ্রুত শিখবো তত ভালো ক্রিকেটার হবো : মিরাজ

সিনিয়রদের থেকে যত দ্রুত শিখবো তত ভালো ক্রিকেটার হবো : মিরাজ