নীরব ‘যোদ্ধা’ হয়েও আড়ালে তাইজুল

পার্থ প্রতীম রায় পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, ১২ মে ২০২২
নীরব ‘যোদ্ধা’ হয়েও আড়ালে তাইজুল

বাংলাদেশের হয়ে খেলা সর্বশেষ চার টেস্টের তিনটিতেই পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। শুধু সর্বশেষ চার টেস্ট নয়, পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই পারফর্ম করেও বারবারই বলির পাঠা হয়েছেন এই স্পিনার। কখনও কন্ডিশন কিংবা একাদশ তৈরিতে সমন্বয় আনার জন্য একাদশে জায়গা মেলে না তাইজুলের। দলে অনিয়মিত হলেও সুযোগ পেলেই নিজেকে উজাড় করে দিতে কোনো কমতি রাখেন না। শুধু কি তাই, পারফর্ম করেও সবসময়ই আলোচনার বাইরে থাকেন এই স্পিনার। ক্যারিয়ারের পুরো সময় জুড়েই দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের ছত্রছায়াতেই কাটাচ্ছেন তিনি।

তাইজুল কেন দলে কম সুযোগ পান? এই প্রশ্নের উত্তরে দেখা মিলবে দুইটি কারণ। প্রথমত বাংলাদেশ দল এখন হয়ে উঠছে পেস আক্রমণ নির্ভর। এছাড়া টিম ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত ব্যাটার খেলানোর প্রবণতা। এ কারণেই পেস বোলারদের জায়গা করে দিতে কিংবা বেশি ব্যাটার খেলানোর অজুহাতে তাইজুলের জায়গা মেলে ডাগআউটে।

বাংলাদেশের হয়ে দারুণ পারফর্ম করে আলোচনায় না আসার ব্যাপারটি খুবই কম। এর ব্যতিক্রমী উদাহরণ তাইজুল। সুযোগ পেয়ে পারফর্ম করেও থেকে যান আড়ালে-আবডালে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগে অবশ্য তার দিকে ফোকাস করে আছে বাংলাদেশ দল। কারণ ইনজুরি আর করোনার কারণে খেলতে পারবেন না মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান।

ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৩৬ টেস্ট খেলেছেন তাইজুল ইসলাম। এই সময়ে ৩ দশমিক ০৯ ইকোনমিতে তার শিকার ১৫৩ উইকেট। আর প্রতি উইকেট শিকার করতে তার রান খরচের হারটাও বেশ ঈর্ষণীয়। প্রতি উইকেট নিতে তিনি খরচ করেছেন ৩২ রান!

sportsmail24

দেশ কিংবা দেশের বাইরে সবসময়ই বল হাতে উজ্জ্বল তাইজুল। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও তার শিকার ছিল ৯ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার ওই পেস বান্ধব উইকেটেও প্রমাণ করেছেন তিনি কতটুকু সামর্থ্যবান।

ঘরের মাঠে এখন পর্যন্ত ২৩ টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। আর এই সময়ে তিনি শিকার করেছেন ১১৫ উইকেট। দেশের বাইরের পারফর্মেন্সও তার পক্ষেই কথা বলে। বিদেশের মাটিতে খেলা ১৩ টেস্টে তাইজুলের শিকার ৩৮ উইকেট।

দলে অতিরিক্ত ব্যাটার খেলাতে চেয়ে তাইজুলকে একাদশ থেকে ছেটে ফেলতে একদমই কার্পণ্য করে না টিম ম্যানেজমেট। বিপরীতে ব্যাটিং দক্ষতার কথা বিবেচনায় রেখে সুযোগ মেলে সাকিব আল হাসান কিংবা মেহেদি হাসান মিরাজের।

তবে সাকিব-মিরাজরা যে তাদের কাজে এখনও দলকে কোনো সাফল্য এনে দিতে পারেননি তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অন্তত পরিসংখ্যান সেই কথাই বলে।

কোভিড পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দল খেলেছে ১১ টেস্ট। এই সময়ে একাদশে সবচেয়ে বেশি সুযোগটা অবশ্য পেয়েছেন তাইজুল ইসলামই। ১১ টেস্টের সাতটির একাদশেই ছিলেন এই ক্রিকেটার। যাদের কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়, সেই সাকিব খেলেছেন মোটে তিন টেস্ট আর মেহেদি হাসান মিরাজ খেলেন ছয় টেস্ট।

sportsmail24

অবশ্য, প্রতিটি সিরিজের আগেই সাকিবকে টেস্টে পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে উঠে নানা রকম প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ই টেস্ট না খেলেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার।

কোভিড পরবর্তী সময় বাংলাদেশের বোলিং রেকর্ডে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হয়ে আছেন তাইজুল। এই সময়ে খেলা ৭ টেস্টে তার শিকার ৩৯ উইকেট। আর সাকিবের ঝুলিতে গিয়েছে মাত্র ৫ উইকেট এবং মিরাজের পেয়েছেন ১৫ উইকেট।

সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রথম টেস্টে অতিরিক্ত ব্যাটার খেলানোর জন্য তাইজুল ইসলামকে একাদশের বাইরে রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট যখন অতিরিক্ত ব্যাটার আর পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছে, সেই সময়ই একাদশে দুইজন স্পিনার খেলিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ফলাফলস্বরুপ, টেস্টে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেন প্রোটিয়া স্পিনাররাই। দ্বিতীয় টেস্টে তাই একাদশে ফেরেন তাইজুল। অবশ্য তার একাদশে ফেরার জন্য খানিকটা কৃতিত্ব পেতে পারেন পেসার তাসকিন আহমেদ। হয়তো তিনি ইনজুরিতে না পড়লে দক্ষিণ আফ্রিকায় কোনো ম্যাচ না খেলেই তাকে দেশ ফিরতে হতো।

দক্ষিণ আফ্রিকার আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ছিল বাংলাদেশি বোলিং আক্রমণে ছিল পেসারদের দাপট। ওই সিরিজেও অতিরিক্ত ব্যাটার খেলানোর সুবিধার জন্য একাদশে জায়গা পান মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু তাসমান পাড়ের দেশটিতে ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে বলার মতো পারফর্ম করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার।

তবুও দক্ষিণ আফ্রিকায় স্পিন আক্রমণে ওই ভরসা নাম ছিলেন মিরাজই। তবে ওই সিরিজে দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ৬০ রান আর বল হাতে ৯ উইকেট ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি। বিপরীতে প্রোটিয়াদের ঘরের মাঠে এক ম্যাচ খেলেই ৯ উইকেট পকেটে ভরেছিলেন তাইজুল ইসলাম। দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে সংখ্যাটা আরও বাড়তো তা নিয়েই সন্দেহের অবকাশ না থাকাটাই যৌক্তিক।

sportsmail24

অপরদিকে টেস্ট খেলা না খেলার দোলাচলে থাকা সাকিব তিন টেস্টে শিকার করেছেন মাত্র ৫ উইকেট। তাও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাদের মাটিতে। আর বাকি দুই টেস্টেই ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে ব্যাট হাতে কিছুটা ঝলক দেখিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা কোনোভাবেই সাকিবসুলভ বলে অ্যাখ্যা দেওয়া যায় না।

অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তার সেই চেষ্টা বৃথা যায়, দলের অন্য ব্যাটারদের ধারাবাহিকতার চরম অভাবের কারণে।

কোভিড পরবর্তী সময়ে সাকিবের সাথে দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তাইজুল। এই সময়েও দু’জনের উইকেট পাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে তাইজুল ইসলাম। সাকিবের সাথে খেলা দুই ম্যাচে তাইজুল শিকার করেছিলেন ৬ উইকেট। বিপরীতে সাকিব ছিলেন উইকেটশূন্য।

আর মিরাজের সাথে খেলেছিলেন তিন টেস্ট। এই সময়ে তাইজুলের ঝুলিতে ঢুকেছিল ১৯ উইকেট আর মিরাজ মাত্র ৫ উইকেট!

বোলিং পরিসংখ্যানে সবদিক থেকেও এগিয়ে থাকলেও শুধুমাত্র ব্যাটিং দক্ষতার কথা বিবেচনাতেই তাইজুলকে দল থেকে বাদ দিতে উন্মুখ হয়ে থাকে টিম ম্যানেজমেন্ট। শুধু কি তাই, তার বিকল্প হিসেবে খেলা সাকিব কিংবা মিরাজরা যখন উইকেট শিকারে ব্যর্থ তখনও ডাগ আউটই তাইজুলের জন্য উপযুক্ত জায়গা মনে করে টিম ম্যানেজমেন্ট।

বারবার ব্যর্থ হলেও সাকিব-মিরাজরাই হয়ে আছেন ভরসার পাত্র! শ্রীলঙ্কা সিরিজে তাদের না থাকাটাই উচ্চারিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু নীরব যোদ্ধা হয়ে দলকে বারবার বিপদ থেকে রক্ষা করে যাওয়া তাইজুলই থেকে যাচ্ছেন আড়ালে-আবডালে।

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

অতীব প্রয়োজনে সাকিবকে না পাওয়ায় বোর্ড সভাপতির আক্ষেপ

অতীব প্রয়োজনে সাকিবকে না পাওয়ায় বোর্ড সভাপতির আক্ষেপ

রানে ফিরবেন মুশফিক-মমিনুল, আস্থা রাখছেন সিডন্স

রানে ফিরবেন মুশফিক-মমিনুল, আস্থা রাখছেন সিডন্স

মিরপুরে ভালো উইকেটে বানাতে ‌‘স্বয়ং বিধাতাও’ ব্যর্থ হবেন!

মিরপুরে ভালো উইকেটে বানাতে ‌‘স্বয়ং বিধাতাও’ ব্যর্থ হবেন!

মোস্তাফিজ ইস্যুতে ‘জল ঢেলে’ দিলেন নাজমুল হাসান পাপন

মোস্তাফিজ ইস্যুতে ‘জল ঢেলে’ দিলেন নাজমুল হাসান পাপন