হাইভোল্টেজ ম্যাচ, খেলা হলো একপেশে

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৩
হাইভোল্টেজ ম্যাচ, খেলা হলো একপেশে

ভারত-পাকিস্তান মানে আলদা উত্তেজনা, আলাদা লড়াই। চলমান বিশ্বকাপ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দুই দেশের খেলা নিয়ে তেমনি তৈরি হয়েছিল উত্তেজনা। তবে ভারতীয় বোলারদের দাপট এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাটিংয়ে পুরো ম্যাচটিই যেন একপেশে হয়ে গেল। টানা জয়ে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেট অনায়াসে হারিয়ে জয় তুলে নিলো ভারত।

চাহিদার তুঙ্গে থাকায় আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটিতে বাড়তি ১৮ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল। শহরের হোটেলগুলো খালি না থাকায় ভক্তরা কৌশলে জায়গা করে নিয়েছিলেন হাসপাতালে। তবুও যে ভারত-পাকিস্তান লড়াই মাঠে বসে দেখতে চাই।

তবে মাঠে বসে খেলা দেখা ভক্তরা অবশ্য হতাশ হয়নি। পাকিস্তানিরা ভিসা না পাওয়ায় প্রায় সবাই ছিলেন রোহিত-কোহলিদের সমর্থক। ম্যাচে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দর্শকদের মূলত হতাশ করেননি রোহিতরা।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) টস জিতে প্রথম ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। বিপরীতেতে প্রথমে ব্যাট করতে ভারতীয় বোলারদের দাপটে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি পাকিস্তান। ৪২.৫ ওভারে ১৯১ রানে পাকিস্তানি ক্রিকেট দলকে গুটিয়ে দেয়।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৩ ওভার বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। ব্যাট হাতে রোহিত শর্মার ৮৬ রানের ইনিংরেস পর অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন শ্রেয়াস আইয়ার।

এ জয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা অষ্টম ম্যাচ জয়ের নজির গড়লো ভারত। ১৯৯২ সালের পর বিশ্বকাপের মঞ্চে এ নিয়ে আটবার মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। সবগুলোতেই জয় পেয়েছে ভারত।

বিশ্বকাপের ১২তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করে ভারতীয় পেসারদের দারুণভাবে সামাল দিচ্ছিলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম উল হক। তবে অষ্টম ওভারের শেষ বলে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শফিককে ২০ রানে থামিয়ে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ।

সতীর্থকে হারালেও ইনিংস বড় করার পথে ছিলেন ইমাম। তবে ১৩তম ওভারে থামতে হয় তাকে। পেসার হার্ডিক পান্ডিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৬টি চারে ৩৬ রান করা ইমাম। ৭৩ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর পাকিস্তানের হাল ধরেন অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ভারতের বোলারদের স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ১৯তম ওভার দলের রান তিন অংকে নেন এ জুটি।

২৯তম ওভারে বাউন্ডারি মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৯তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন বাবর। পরের ওভারে বাবরকে বোল্ড করে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু এনে দেন সিরাজ। ৭টি চারে ৫৮ বলে ৫০ রান করেন বাবর। রিজওয়ান-বাবর তৃতীয় উইকেটে ১০৩ বলে ৮২ রান যোগ করেন।

দলীয় ১৫৫ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে বাবর ফেরার পর পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। ৮০ বল ও ৩৬ রান শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে ৪২.৫ ওভারে ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

বাবরের পর সৌদ শাকিলকে ৬ ও ইফতিখার আহমেদকে ৪ রানে স্পিনার কুলদীপ যাদব, রিজওয়ানকে ৪৯ ও শাদাব খানকে ২ রানে পেসার জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ নওয়াজকে ৪ রানে পান্ডিয়া ও হাসান আলিকে ১২ ও হারিস রউফকে ২ রানে শিকার করেন স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা। ২ রানে অপরাজিত থকেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।

ভারতের পক্ষে বুমরাহ-সিরাজ-পান্ডিয়া-কুলদীপ ও জাদেজা ২টি করে উইকেট নেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক ইনিংস পাঁঁচ বোলারের প্রত্যকে ২টি করে উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে এটি তৃতীয় ঘটনা। এর আগে ২০১১ সালে মোহালিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত এবং ২০১৫ সালে ক্রাইস্টচার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের পাঁচ বোলারের প্রত্যকে ২টি করে উইকেট শিকার করেছিলেন।

১৯২ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে ৫টি চারে ২২ রান নেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত ও শুভমান গিল। পরের ওভারে গিলকে থামিয়ে ভারতের উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন করেন পেসার আফ্রিদি। ৪টি চারে ১১ বলে ১৬ রান করেন গিল। গিলের বিদায়ের পর তিন নম্বরে নামা বিরাট কোহলিকে নিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন রোহিত। জুটিতে ৪২ বলে ৫৬ রান যোগ করেন তারা। ৩টি চারে ১৬ রান করা কোহলিকে থামিয়ে পাকিস্তানকে খেলায় ফেরার পথ দেখান পেসার হাসান।

কোহলি ফেরার পর ৩৬ বলে ওয়ানডেতে ৫৩তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন রোহিত। হাফ-সেঞ্চুরির পরও চার-ছক্কায় দলের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন রোহিত। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ার। ১৯তম ওভারে আইয়ারের সাথে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি করেন রোহিত।

আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড সেঞ্চুরি করা রোহিত আরও একটি শতকের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ২২তম ওভারে আফ্রিদির বলে ভুল শট খেলে আউট হন রোহিত। ৬টি করে চার-ছক্কায় ৬৩ বলে ৮৬ রান করে ফিরেন ভারত অধিনায়ক। এ ইনিংসে বিশ্বের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৩শ ছক্কার মালিক হন রোহিত। এর আগে পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি (৩৫১টি) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (৩৩১টি) তিনশ ছক্কা মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন।

এছাড়াও বিশ্বকাপের মঞ্চে এক ইনিংসে তিনবার পাঁচের বেশি ছক্কায় দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের গেইলকে স্পর্শ করেন রোহিত। বিশ্বকাপে তিনবার করে এক ইনিংসে পাঁচের বেশি ছক্কা মেরেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স ও গেইল।

রোহিত যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৩৬ রান দূরে ছিল ভারত। লোকেশ রাহুলকে নিয়ে ৫৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৬ রান তুলে ৩১তম ওভারে ভারতকে জয়ের বন্দরে নেন আইয়ার। চার মেরে দলের জয় নিশ্চিতের সাথে সাথে ওয়ানডেতে ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন আইয়ার।

৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬২ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন আইয়ার। ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল। পাকিস্তানের আফ্রিদি ২ উইকেট নেন।

এ জয়ে ৩ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষে উঠলো রোহিতের দল। ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে থাকায় দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেল নিউজিল্যান্ড। আর ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে আছে পাকিস্তান।


শেয়ার করুন :