ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডিংয়ের মতোই রাষ্ট্রকেও আন্তর্জাতিকভাকে ব্র্যান্ডিং করতে হয়। কূটনৈতিক বৈঠক বা সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি খেলাধুলা, সংস্কৃতি কিংবা ভাষার মতো সফট পাওয়ার দিয়েও দেশগুলো বিশ্ব দরবারে নিজেদের উপস্থাপন করে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজে পুরস্কার বিতরণে আফগান মুদ্রায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠছে -এটি কি শুধু আনুষ্ঠানিকতা, নাকি এক ধরনের জাতীয় ব্র্যান্ডিং ও জিও পলিটিক্যাল বার্তা?
প্রথমত, এটি সফট পাওয়ার শক্তির প্রকাশ৷ স্থানীয় মুদ্রায় পুরস্কার প্রদান মানে আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে জাতীয় প্রতীককে দৃশ্যমান করা।
দ্বিতীয়ত, ডলার নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা৷
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর প্রচেষ্টা চলছে। রাশিয়া ও চীন নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করছে৷ আফগানিস্তানের এই উদ্যোগও সেই প্রবণতার প্রতিফলন হতে পারে।
চীন যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইংরেজির পাশাপাশি মান্দারিন ভাষার ব্যবহার বাড়াতে শুরু করে, তখন অনেকেই এটিকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। কিন্তু এটি ছিল তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ। একইভাবে, আফগানিস্তান যদি তাদের মুদ্রা আফগানি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ম্যাচে পুরস্কার প্রদান করে, সেটিও এক ধরনের জাতীয় ব্র্যান্ডিংয়ের কৌশল।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত মার্কিন ডলার বা অন্য কনভার্টিবল মুদ্রায় পুরস্কার দেওয়া হয়। আইসিসি আয়োজিত বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপে তো সব সময়ই ডলার ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দুই দেশের বোর্ডের চুক্তি অনুযায়ী সাধারণত ডলার বা ইউরোর মতো মুদ্রা ব্যবহৃত হয়।
তবে ঘরোয়া আসরে চিত্র আলাদা। বিপিএল কিংবা জাতীয় লিগে চ্যাম্পিয়ান, রানারআপ ও সেরা খেলোয়াড়দের পুরস্কার সব সময় বাংলাদেশি টাকায় দেওয়া হয়। আবার জাতীয় দলের বিশেষ সাফল্যের পর ঘোষিত বোনাসও টাকায় প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চাইলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে পুরস্কার অর্থ বাংলাদেশি টাকায় প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। এটি জাতীয় ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হিসেবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে বাস্তবতার জায়গায় রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের সীমাবদ্ধতা, আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতা এবং ডলার নির্ভর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো। ফলে এখনই বড় কোনো পরিবর্তন সম্ভব না হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি হতে পারে কৌশলগত পদক্ষেপ।

মশিউর রহমান শাওন