বড় দলকে হারাতে সালমাদের আরও মানসিক শক্তি প্রয়োজন : আঞ্জু জৈন

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২০
বড় দলকে হারাতে সালমাদের আরও মানসিক শক্তি প্রয়োজন : আঞ্জু জৈন

ঠিক এক মাস আগে ভারতের মেয়েদেরকে হারিয়ে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলে অস্ট্রেলিয়ার মেয়ের। বিশ্বকাপ নতুন দল হিসেবে থাইল্যান্ড কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশও নিউজিল্যান্ডকে কাঁপন ধরিয়েও হারাতে পারেনি, হিথার নাইট ও লিজি লিয়ের শতক, আর মেলবোর্ন ৮০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ভারত অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে পর্দা নামে আড়াই সপ্তাহের এই বিশ্ব আসরের।

দিনশেষে আমরা কেবল বিজয়ীর কথা মনে রাখি তাই না? তবে এমন কিছু দল আছে যারা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ উন্নতি করেছে যার মাঝে একটি হলো বাংলাদেশ। তারা ২০১৯ সালে সর্বোমোট ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে যেখানে ১০টিতেই জয় লাভ করেছে। এই ম্যাচ গুলো বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও এশিয়ান গেমসের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ১৩ ম্যাচের মাঝে নিগার সুলতানা জ্যোতি ও ফারজানা হোক সেঞ্চুরি করেছিলেন।

২০১৯ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণজয় করে বাংলাদেশের মেয়েরা।শুধু তাই নয় ভারতে অনুষ্ঠিত চার দলের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। তবুও কেন বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়। তবে কি বড় দল গুলোর সাথে খেলার সময় আলাদা ভয় কাজ করে?

সাম্প্রতিক সময়ে উইমেনস ক্রিকআইনসাইটের সাথে এক আড্ডায় বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের হেড কোচ আঞ্জু জৈন, সহকারী কোচ দেভিকা পলশিকার ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার নিগার সুলতানা জ্যোতি।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রাশুরু করে বাংলাদেশ। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে হেরে যায়। পাওয়ার প্লে তে শেফালী ভার্মার ১৭ বলে ৩৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ভালো শুরু পায় ভারত। মাঝের দিকে বাংলাদেশের বোলাররা ভরতকে চেপে ধরলেও শেষদিকে ভেদা কৃষ্ণমূর্তির ১১ বলে ২০ রানের সুবিধা ২০ ওভারে ১৪২ রানের সংগ্রহ পায়। ডিভিয়েকা পলশিকার মনে করছেন শেষদিকে আরও ভালো বোলিং করতে পারতো আর জ্যোতি কৃতিত্ব দিচ্ছেন ভেদা কৃষ্ণমূর্তিকে।

সহকারী কোচ পলশিকার বলেন, আমাদের কিছু বোলিং পরিবর্তনে ভালো করার সুযোগ ছিল। রুমানা প্রথম দুটি ওভার দুর্দান্ত করেছিল তাই শেষ পাঁচ ওভারে সে বল করলে ভিন্ন কিছু হতো।

জ্যোতি বলেন, ভারত পাওয়ার প্লে ও শেষ ৫ ওভারে দুর্দান্ত করেছে। তবে আমরা মাঝখানে আরও ভালো করতে পারতাম আর শেফালিকে শুরুর দিকে আউট করার সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা পারিনি। শেষ দিকে ভেদার দ্রুততম ইনিংস খেলার পার্থক্য গড়ে দেয়। অন্যথায় স্কোর ১৩০ এর কাছাকাছি থাকতো।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ও নিগার সুলতানা ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতে পারেনি। মুর্শিদা খাতুন ২৬ বলে করেন ৩০ রান আর ৫ চারের সাহায্যে ২৬ বলে ৩৫ রান করেন জ্যোতি। শেষদিকে জ্যোতির বিদায়েই হারতে হয় বাংলাদেশকে।

সহকারী কোচ পলশিকার বলেন, আমরা অস্ট্রেলিয়াতে খুব দ্রুতই গিয়েছিলাম কিন্তু বৃষ্টির কারণে পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে পারিনি। কেবল ইনডোরেই অনুশীলন করতে হয়েছে আমাদের। শেষ ৫ ওভারে আমাদের দ্রুত রান তোলার প্রয়োজন ছিল কিন্তু আমরা তা পারিনি জাহানরা ও ফাহিমা সবসময়ই এই জায়গাটায় ব্যাট করে। তাদের উপর আমাদের বিশ্বাস ছিল। কিন্তু আমরা পারিনি।

জ্যোতি বলেন, যেহেতু আমাদের বড় দলের বিপক্ষে খেলা হয়না তাই বিশ্বকাপের মত বড় আসরে স্নায়ু ধরে রাখার মত মেজাজ আমাদের নেই। ভারতের শেফালি যা করেছিলো তা মুর্শিদা পূরণ করেছে, রদ্রিগজ যা করেছে তা আমি করেছি কিন্তু ভেদা যা করেছে আমাদের হয়ে তা কেউ করতে পারেনি। আমার মনে হয় আমি খুব ভুল সময়ে বের হয়ে এসেছিলাম। আমি থাকলে হয়তো ফলাফলটা ভিন্ন হতো।

sportsmail24ভারতের বিপক্ষে ওপেনাররা ভালো করতে না পারলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে অজি মেয়েরা। প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ তাই শুরু থেকেই ছন্নছাড়া ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। ১৭তম ওভারে গিয়ে মাত্র উইকেট নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। অজিদের হয়ে ১০ চারের সাহায্যে ৫৩ বলে ৮৩ রান করেন হিলি, ৯ চারে ৫৮ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন মুনি আর শেষ দিকে গার্ডনারের ৯ বলে ২২ রানে বড় সংগ্রহ তুলে। হেড কোচ আঞ্জু জৈন মনে করেন অজিরা বেশ ভালো প্রস্তুতি ছিল আর তারা বেশ কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলেছে।

হেডকোচ আঞ্জু জৈন বলেন, আমরা এর আগে কখনও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলিনি। আমরা বেশ কিছু ক্যাচ মিস করেছি। আমরা যদি ১৩০ রানের মাঝে আটকাতে পারতাম তাহলে চেষ্টা করে সম্ভব ছিল। ১৮০ রান খুব বেশি হয়ে গিয়েছিল আর আমরা ফিল্ডিংয়েও ভালো করতে পারিনি।

পলশিকার বলেন, তারা বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল বলে প্রথমবারের মত অজিদের মুখোমুখি হতে ভয় পায়নি। আর জ্যোতি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা কম থাকার কারণে খেলাতে প্রভাব পড়েছে।

পলশিকার বলেন, এমন নয় যে আমরা তাদের বিপক্ষে খেলিনি বলে হেরেছি। মূল কথা হলো আমরা তাদের বিপক্ষে আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। বোলিং ফিল্ডিং কোনদিকেই ভালো হয়নি। আপনি বোলিং কিংবা ব্যাটিংয়েই হোক ভালো শুরু গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর ৬-৭ ওভারে তাদের ২টি উইকেট নিতে পারলে অন্যরকম কিছু হতো।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ কিছু পরিবর্তনে দুর্দান্ত করেছিল কিন্তু জয় নিয়ে ফিরতে পারেনি। জৈন বলেন, আমরা বোলিং ও ফিল্ডিং দুইটাই ভালো করেছিলাম। নিউজিল্যান্ড ধীরতগতির বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশ লড়াই করেছে যা রিতুর বোলিং সহায়তা করছে। সে বেশ ভালো সুইয়িং করাতে যা সে দেখিয়েছ।

রিতুর ৪ উইকেট, ৭ রানে সালমার ৩ ও ১৭ রানে রুমানার ২ উইকেটে নিউজিল্যান্ড মাত্র ৯১ রানেই আটকে যায়। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জ্যোতি (২১), মুর্শিদা (১১) ও রিতু (১০) ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কে পোঁছাতে পারেনি। জ্যোতির ইনজুরি আর শেষ দিকে পরপর ২টি রান আউটে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

পলশিকার বলেন, জ্যোতির ইনজুরি অন্যতম কারণ হতে পারে তবে এটা অজুহাত দেখাবো না। আমাদের এত ভালো ব্যাটিং ছিল যে একজন ইনজুরি হলেই হারবো এমন নয়। তার চোটের পরে আরও দুটি রানআউট হয়ে যায়। হারার এটাই অন্যতম কারণ হতে পারে।জ্যোতি যখন আসে তখন মাত্র ৩ ওভার ছিল তবে সে থাকলে কিছুটা পার্থক্য তৈরী করতে পারতো। রান তাড়া করতে গিয়ে একমাত্র তিনিই ইতিবাচক ছিল।

জ্যোতি বলেন, আমি সুইপ শট খেলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বলটি ব্যাটের এক কিনারায় লেগে আমার ঘাড় ও গলার মাঝে আঘাত করে। আমার মাথা ঘুরতেছিল আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি চোখে কিছু দেখতেছিলাম না আর আমার হাত পা অসাড় হয়ে গেল। ফিজিওরা ভেবেছিল আমার ভয় ছিল।

মেডিকেল দল আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল যেখান থেকে আমি খেলা দেখতে পেরেছি। ওই সময় আমরা বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়েছি। আমি তখন খেলতে নামতে চেয়েছিলাম কিন্তু ডাক্তাররা আমাকে নামতে দেয়নি। আমি খেলতে অনড় থাকায় ফিজিওরা ঝুঁকি নিয়েছিল। খেলার সুযোগ পেতে তাকে লিখিত দিতে হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডকে ১০০ রানের নিচে আটকে দিয়ে জয় তুলতে না পারাটা সত্যিই হতাশাজনক। সমর্থন পেলে আমি ভালো করতে পারতাম।

বড় দল গুলোর মাঝে বাংলাদেশ কেবল পাকিস্তানের সাথেই খেলে। তাদের সাথে চেষ্টা করেও সিরিজ জিততে পারেনি। জ্যোতির মতে গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে কিভাবে জিততে হয় তা কেবল আরও প্রতিযোগিতামূলক খেলা খেললেই শিখতে পারবো। অল্প ম্যাচ সীমাবদ্ধতা তৈরী করে।

বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ও চারদেশীয় সিরিজে ভালো করে তবে তা বড় মঞ্চে রুপান্তর করতে পারেননি। ব্যবধানটা কেবল তখনই কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে যখন তারা নিয়মিত বড় দলের বিপক্ষে খেলবে। এ দলের বিপক্ষে খেলে বড় মঞ্চ মনে হয় না মনে করেন কোচ জৈন।

তিনি আরও যোগ করেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ দিকে তাদের প্রতিভা দেখিয়েছেন। তারা উন্নতি করছে।

কিছু নেতিবাচকতার মাঝেও কিছু ইতিবাচক দিক ছিল যা মাঝে ওপেনার মুর্শিদা খাতুন অন্যতম। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় থেকে ১ বছরপ উভয় কোচ মিলে তাকে প্রস্তুত করেন। পুরো টুর্নামেন্টে আশানুরূপ করতে না পারলেও ওপেনিংয়ে তার শট গুলো স্বস্তি দিয়েছে।

sportsmail24হেড কোচ জৈন বলেন, সে মাত্রই শিখছে তবে তার ব্যাটিং, ফিটনেস আর ফিল্ডিং সবক্ষেত্রেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে উন্নতি হয়েছে। সে ভবিষ্যতের জন্য বেশ ভালো সম্ভবনাময় ক্রিকেটার। আমাদের খুব একটা বাম হাতি ছিল না তবে মে-জুনের পর থেকেঔ তাকে তালিকা ভুক্ত করেছি।

প্রতিযোগিতামূলক খেলা কম হওয়া তাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ, তবে তাদের সেখানে কাজ করতে হবে। সহকারী কোচ পলশিকার মতে, তাদের চাপ নিতে শিখতে হবে তার পাশাপাশি তাদেরও আরও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। হেডকোচ আঞ্জু জৈন বলেন, মানসিকভাবে তাদের আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার। তাদের জন্য একটি ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করতে বিসিবির কাছে অনুরোধ করেছেন।

অন্যদিকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার নিগার সুলতানা তার এমন পারফরম্যান্সের কৃতিত্ব তার কোচদের দিয়েছেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ ম্যাচে ১১৪ রান করেন।

কোচদের প্রশংসা করে নিগার সুলতানা বলেন, আঞ্জু ম্যাডাম আর ডিভিয়েকা ম্যাডাম উভয়েরই বেশ ভালো পরিকল্পনা ছিল যা আমাদের জন্য কাজে এসেছে। তারা জানে কে কি করতে পারে। আমরা বিশ্বকাপের ম্যাচ গুলো হেরে গেলেও তারা আমাদের অনুপ্রানিত করেছিল। আমাদের কি প্রয়োজন তা তারা ভালো করে জানে। আমাদের মাঝে সম্পর্কগুলো আমাদের ভালো করতে সহায়তা করেছে।


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

মাইক্রোফোন তুলে রাখতে চান হোল্ডিং

মাইক্রোফোন তুলে রাখতে চান হোল্ডিং

টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানকে শীর্ষে দেখতে চান আজহার আলী

টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানকে শীর্ষে দেখতে চান আজহার আলী

নির্ধারিত তারিখেও আইপিএল অসম্ভব : রাজীব শুক্লা

নির্ধারিত তারিখেও আইপিএল অসম্ভব : রাজীব শুক্লা

ক্লার্কের মতের বিরোধীতা করলেন পেইন

ক্লার্কের মতের বিরোধীতা করলেন পেইন