এক দশক আগের দুঃস্মৃতি নিয়ে মাঠে নামছেন আমির

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৯:০৭ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২০
এক দশক আগের দুঃস্মৃতি নিয়ে মাঠে নামছেন আমির

তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও সফরকারী পাকিস্তান। এ ম্যাচে পাকিস্তানের একাদশে সুযোগ পেলে ১০ বছর আগের দুঃস্মৃতি ফিরে আসবে পেসার মোহাম্মদ আমিরের মনে।

২০১০ সালের ২৬ আগস্ট লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে পাকিস্তান। ওই ম্যাচে স্পট ফিক্সিং করেছিলেন আমির। ২৮ আগস্ট হওয়ায়, আর ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলা হওয়ায় সেই স্পট ফিক্সিংএর স্মৃতি ফিরে আসবে আমিরের চোখের সামনে। যার ফলে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার হওয়ার সুযোগটি হারান আমির।

ওই সফরকালে আমিরের বয়স ছিল ১৮ বছর । ঠিক এক দশক আগে লর্ডসে ইচ্ছাকৃতভাবে নো-বল করেন তরুণ আমির। পরবর্তীতে সেটি প্রমানিত হওয়ায় সখানেই থেমে যায় আমিরের সম্ভাবনাময় দুর্দান্ত ক্যারিয়ারটি। স্পট-ফিক্সিংয়ের সাথে আমিরের সাথে জড়িত ছিলেন আরেক পেসার মোহাম্মদ আসিফ ও ওই সফরে পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান বাট। পাঁচ বছর করে নিষিদ্ধ ও কারাভোগ করেছেন আসিফ ও বাট।

তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বয়স কম থাকায়, ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে সহানুভূতি পেয়েছিলেন আমির। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৬ সালে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেন তিনি। কিন্তু ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কাটান আমির। তার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেকেই উচ্চাশা পোষণ করতেন।

পাকিস্তানের সাবেক কোচ মিকি আর্থার এএফপিকে বলেন, ‘ওই বছরগুলো হারানোয় তার প্রতি করুণা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেরা হয়ে উঠার চেষ্টার করেছিলেন তিনি এবং এই পাঁচ বছর মারাত্মকভাবে ক্ষতি করেছে, কিন্তু বলতে হচ্ছে- সে এখনও সেরা একজন বোলার। আমি যাদের সাথে কাজ করেছি, তার মধ্যে আমির অন্যতম।’

পাকিস্তানের পরিসংখ্যানবিদ মাজহার আরশাদেও অনুমান নিষেধাজ্ঞা না থাকলে টেস্ট-ওয়াানডে দু’টি ফরম্যাটেই ২৫০টি করে উইকেট পেতেন আমির। পাকিস্তানের পক্ষে মাত্র চারজন বোলার টেস্টে অন্তত ২৫০ উইকেট পেয়েছেন। তারা হলেন- ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, ইমরান খান ও দানিশ কানেরিয়া। গত বছর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলা আমির ৩৬ টেস্টে ১১৯টি, ৬১টি ওয়ানডেতে ৮১টি ও ৪৮টি টি-টোয়েন্টিতে ৫৯টি উইকেট নিয়েছেন।

আরশাদ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পাঁচ বছরে আমির ৪৩টি টেস্ট, ১৩৭টি ওয়ানডে ও ৫৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মিস করেছেন। ধারণা অনুযায়ী, টেস্ট ও ওয়ানডেতে ২৫০ করে উইকেট পেয়ে যেতেন তিনি। কে জানে, ২০১১ সালে পাকিস্তান বিশ্বকাপও জিততে পারতো (২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে সেমিফাইনালে হারে পাকিস্তান)।

টেপ বল দিয়ে খেলা শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের দক্ষিণে চাঙ্গা বঙ্গাল নামে গ্রামে বেড়ে উঠা আমির। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তবে খুব শীঘ্রই রাওয়ালপিন্ডির আসিফ বাজওয়া একাডেমিতে তার বোলিং প্রতিভা দেখা গেল এবং সেখানে পাকিস্তানের কিংবদন্তি বাঁ-হাতি পেসার ওয়াসিম আকরামকে আউট করেন তিনি।

২০০৮ সালে প্রথম শ্রেণির মৌসুমে ৫৫ উইকেট শিকার করে সবার নজরে আসেন আমির। ফলে ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচকদের বিবেচনার জন্য পথ তৈরি করেন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা বলেছেন, আমিরের প্রতিভা সকলের কাছে পরিস্কার ছিল।

তিনি জানান, ‘প্রথম আমি যখন তাকে দেখি, তখন আমি তাকে চতুর ও দক্ষ বলে বুঝতে পেরেছিলাম। সে দ্রুতই শিখতে পারে এবং খুবই দক্ষ এবং এই পাঁচ বছর না হারাতেন, তবে সব ফরম্যাটে সেরা তারকা হতে পারতেন।’

২০০৯ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাঁচ উইকেট ও ২০১০ সালে লর্ডসে সাত উইকেট নিয়েছিলেন আমির। দু’বারই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। যা টেস্টে আমিরের দলে সুযোগ পাওয়াকে প্রশস্ত করে। আমিরের পেস, সুইং ও উইকেট শিকারের ক্ষমতাকে অনেকেই আকরামের সাথে তুলনা করা হচ্ছিল। লর্ডসে স্পট ফিক্সিংয়ের আগে ওই সফরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার টেস্টে ১৯ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।

জুলাই মাসে ইউটিউবে এক সাক্ষাৎকারে আমির বলেন, ‘একজন ক্রিকেটারের জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত হয়, বিশেষভাবে পেসারদের ক্যারিয়ার এবং এই পাঁচ বছরে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার শরীর এক প্রকার নিঃশেষ হয়েছে। ২০১৬ সালে ফিরে আসার পর আমি নিয়মিত খেলেছি এবং যাতে আমরা শরীরে সমস্যা হয়েছে, আর এ কারণেই আমি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছি।’

গত বছর টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ২৮ বছর বয়সী আমির। কিন্তু বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনিস ‘দলকে বিপদে ফেলার’ মত গুরুত্বর অভিযোগ আমিরের বিপক্ষে এনেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন আমির। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আমির বলেছিলেন, আরও একটি বড় ট্রফি জয়, তার ক্যারিয়ারকে উচ্চতায় রেখে শেষ করতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি যে ফরম্যাটেই খেলি না কেন, আমার বুকে পাকিস্তানের পতাকা থাকে। আমি যদি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ৫শ উইকেটও পাই এবং একটি ট্রফি জিততে পারি, তবে আমি মনে করবো ক্যারিয়ার সঠিকভাবেই শেষ করেছি।’

[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ক্রিকেটার যুবাদের প্রশিক্ষণ

তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ক্রিকেটার যুবাদের প্রশিক্ষণ

বৈরি আবহাওয়া, শেষ ম্যাচও ড্র

বৈরি আবহাওয়া, শেষ ম্যাচও ড্র

সাকিবের তিনে খেলা বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট : ম্যাকেঞ্জি

সাকিবের তিনে খেলা বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট : ম্যাকেঞ্জি

প্রথম পেসার হিসেবে অ্যান্ডারসনের ৬০০ টেস্ট  উইকেট

প্রথম পেসার হিসেবে অ্যান্ডারসনের ৬০০ টেস্ট উইকেট