৮৩’র বিশ্বজয়ীদের আড়ালের নায়ক মান সিং

পার্থ প্রতীম রায় পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ০৭:৫১ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২
৮৩’র বিশ্বজয়ীদের আড়ালের নায়ক মান সিং

১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল ভারত, এতো সবাই জানে। এমনকি এ বিশ্বকাপ জয়ে ভারতের মাঠের গল্পগুলো কম-বেশি সব ক্রিকেটপ্রেমীরই জানা। তবে পর্দার পিছনের কে ঘটেছিল, সে খোঁজ কত জনের কাছেই বা আছে? না থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ পর্দার আড়ালের গল্প যে লোকের কাছে সহজেই পৌঁছে না।

ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ে মাঠের বাইরে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন একজনই। তিনি হলেন টিম ম্যানেজার পিআর মান সিং! সময়ের ব্যবধানে সবাই মান সিং-কে ভুলে গেলেও ক্রিকেট কখনই তাকে ভুলবে না।

পিআর মান সিংয়ের মূল পরিচয় ছিল একজন ক্রিকেট প্রশাসক।  শুধু ক্রিকেট প্রশাসন নয়, ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেট মাঠেও নেমেছিলেন মান সিং। এরপরেও ক্রিকেটার পরিচয়ের চেয়ে ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবেই ছিল তার পরিচিতি। অবশ্য এর জন্য দায়ী ছিল ক্রিকেট মাঠে বলার মতো কোনো পারফর্ম করতে না করার ব্যর্থতা।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মান সিং ছিলেন ডানহাতি ব্যাটার। পাশাপাশি অফ স্পিনে টুকটাক হাতও ঘোরাতেন। খেলেছিলেন ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে! রঞ্জি ট্রফিতে হায়দ্রাবাদকে বছর পাঁচেকের মতো প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। অবশ্য এ সময়ে হায়দ্রাবাদের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি পিআর মান সিং। খেলেছিলেন মাত্র পাঁচটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। এরপরেই অবশ্য ক্রিকেট মাঠ থেকেই উধাও হয়ে যান মান সিং।

sportsmail24

ক্রিকেট মাঠে তার ব্যাট-বল হাতে মাঠে নামার গল্পটাও বেশ আকর্ষণীয়। অন্য সবার মতো ছোট থেকেই ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না মান সিং। বেশ বড় হয়ে ক্রিকেটের সাথে তার পরিচয়। কলেজ জীবনে শুরু করেছিলেন ক্রিকেট খেলা। আর কলেজ জীবনে ক্রিকেট খেললেও খেলার থেকে বেশি দল সামলানোর কাযে বেশি মনযোগী ছিলেন। এটাও হয়তো ক্রিকেট মাঠে তার সফল না হওয়ার কারণ।

হায়দ্রাবাদের হয়ে সফলতা না পেয়ে পাঁচ বছরের খেলোয়াড় জীবনকে বিদায় বললেও ক্রিকেট থেকে দূরে সরেননি মান সিং। অবশ্য নিজের প্রিয় খেলাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি এটা বলাই মনে হয় উত্তম। 

কলেজ জীবনের দল সামলানোর ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যোগ দেন ক্রিকেট প্রশাসনে। হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সেখান থেকে সরাসরি যুক্ত হন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাথে।

sportsmail24
১৯৮৩ সালে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলের আড়ালের নায়ক মান সিং

ভারতীয় দলের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে নিজের কাজ শুরু করেন মান সিং। এর পিছনেও রয়েছে গল্প। যদিও রাজ্য ক্রিকেটের প্রশাসনে নিজের দক্ষতার বলেই এই সুবিধাটা পেয়েছিলেন মান সিং।

সালটা ১৯৭৮, দীর্ঘ ২০ বছর পর পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ভারতীয় দল। সফরে ক্রিকেট নয় বরং প্রাধান্য পেয়েছিল রাজনীতি। ক্রিকেট ছিল এখানে উপলক্ষ্য মাত্র। ক্রিকেটীয় সফরের আড়ালে রাজনীতি নিয়েই বৈঠকের ভাবনায় ছিল ভারত। স্বাভাবিকভাবেই দলের ম্যানেজার হিসেবে এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দেওয়া হয় দায়িত্ব। আর তিনি হলেন বারোদার মহারাজা।

দায়িত্ব দিলেই তো আর হবে না! মানতে হবে শর্তও। বারোদার মহারাজা জানালেন তার শর্ত মানলে তবেই তিনি পাকিস্তানের বিমান ধরবেন। নচেৎ যাচ্ছেন না পাকিস্তানে।

বারোদার মহারাজার শর্তানুযায়ী হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মান সিংয়ের হাতে উঠলো ভারতীয় দলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব। অবশ্য ততদিনে পুরো ভারতই ক্রিকেট প্রশাসনে তার দক্ষতার কথা জেনে গিয়েছিল। এ কারণেই হয়তো তাকে বাছাই করেছিলেন বারোদার মহারাজা।

সেখান থেকেই শুরু, এরপর ১৯৮৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ভারতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মান সিং। শুধু তাই নয় ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের নির্বাচকও ছিলেন এই ক্রিকেট প্রশাসক।

১৯৭৮ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করলেও ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় দলের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব বুঝে পান মান সিং। দায়িত্ব হাতে নিয়ে দারুণ কাজও করেছেন তিনি।

১৯৮৩'র বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সস্ত্রীক লন্ডনের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। ভারতীয় বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন মান সিং। ক্রিকেটারদের সাথে তাদের স্ত্রীদেরকে টিম বাসে লন্ডনের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দেন।

sportsmail24
ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব

খেলার মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে সবসময়ই দলকে সমর্থন জুগিয়েছিলেন মান সিং। মাঠের বাইরের ঘটনা কখনই ক্রিকেটারদের উপর পড়তে দেননি। একা হাতে সামলেছেন মাঠের বাইরের সকল ঘটনা।

মান সিংয়ের এই সাফল্য ভারতীয় বোর্ডকে মুগ্ধ করে। এর দরুণ ১৯৮৭'র বিশ্বকাপেও ভারতীয় দলের ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন। বিশ্ব আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিদায় ঘণ্টা বাজে সেমিফাইনালের মঞ্চে। এরপরেই ভারতীয় দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন মান সিং। ফিরে আসেন নিজের রাজ্যে। 

যেখান থেকে ভারতীয় দলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সেই হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনেই ফেরেন মান সিং। হায়দ্রাবাদে ফিরেই নিজের কাঁধে তুলে নেন সেক্রেটারির দায়িত্ব তুলে নেন মান সিং। শেষ পর্যন্ত এখানে ঘটে তার ক্রিকেট প্রশাসন অধ্যায়ের সমাপ্তি।

ভারতকে আড়াল থেকে বিশ্বকাপ জেতাতে নেতৃত্ব দেওয়া এই মান সিং সারাজীবন শুধু সাফল্যকে সঙ্গী করেই চলেননি। তার নামের পাশেও যুক্ত হয়েছিল হাজারো সমালোচনা। সেই সমালোচনাকে একপাশে সরিয়ে রাখলে ভারতের প্রথম বিশ্ব শিরোপা জয়ের নায়ক তিনিই।

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর

[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

রাজ বাওয়া : পারিবারিক ঐতিহ্যের বাহক

রাজ বাওয়া : পারিবারিক ঐতিহ্যের বাহক

লাল মাটির রাজা নাদাল

লাল মাটির রাজা নাদাল

প্রতিভার নিদারুণ অপচয় এক গুরাভ

প্রতিভার নিদারুণ অপচয় এক গুরাভ

রি-ক্রিয়েটিভো : স্প্যানিশ ফুটবলের পতাকাবাহক

রি-ক্রিয়েটিভো : স্প্যানিশ ফুটবলের পতাকাবাহক