একুশ শতকের চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘রোমাঞ্চকর’ পাঁচ ফাইনাল

সৌরভ কুমার দাস সৌরভ কুমার দাস প্রকাশিত: ০২:৪২ পিএম, ২৮ মে ২০২২
একুশ শতকের চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘রোমাঞ্চকর’ পাঁচ ফাইনাল

চ্যাম্পিয়নস লিগ; ক্লাব ফুটবলে বিশ্বের সেরা টুর্নামেন্ট হিসিবে বিবেচিত। অনেকে আবার আরও একধাপ এগিয়ে বিশ্বকাপের চেয়েও এগিয়ে রাখতে চান। ১৯৫৫ সালে শুরু হওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগ এখন ধাঁরে-ভারে ঐতিহ্যবাহী। ইউরোপের সব ক্লাবের স্বপ্ন চ্যাম্পিয়ন লিগের শিরোপা। যেখানে প্রথম পাঁচ আসরেই শিরোপা জিতেছিল স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। 

১৯৯২ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র দেশের লিগ জয়ী দলগুলো অংশ্রগ্রহণ করতে পারতো। ১৯৯২ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে আসে আমূল পরিবর্তন। ওই আসর থেকে পূর্ণাঙ্গ চ্যাম্পিয়নস লিগ প্রতিযোগিতার শুরু হয় বলেও অনেকের মত। 

চ্যাম্পিয়নস লিগের আসরগুলোতে এখন পর্যন্ত অজস্র রোমাঞ্চকর ফাইনাল হয়েছে। সবাইকে অবাক করে তুলনামূলক অনেক ছোট দলই বড় দলকে হারিয়ে শিরোপা বাগিয়ে নিয়েছে। আবার প্রথমার্ধে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে অনেক ক্লাব।

একুশ শতকে চ্যাম্পিয়নস লিগ যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে শুরু হয়েছিল। প্রতি আসরেই আগের আসরকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। একুশ শতকের এমন শীর্ষ পাঁচ ফাইনালের আদ্যোপান্ত পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছে স্পোর্টসমেইল২৪.কম। 

রিয়াল মাদ্রিদের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন (২০১৩-১৪)
চ্যাম্পিয়নস লিগকে যেন নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯৫৫ সালে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টে প্রথম পাঁচবারই শিরোপা জিতেছিল দলটি। এরপর এখন পর্যন্ত আরও আটটি শিরোপা জিতে নিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাবটি।

২০১৩-১৪ মৌসুমে এক যুগ পর ফাইনালে উঠেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে প্রতিপক্ষ তাদেরই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আথলেটিকো মাদ্রিদ। ৪-১ গোলের ব্যবধানে জিতলেও ম্যাচটি আপনি দেখে থাকলে নিশ্চয়ই বুঝবেন- কতটা কঠিন ছিল।

ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে প্রথম গোল হজম করে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটে সেই গোল শোধ দিতে পারেনি লস ব্লাংকোসরা। ইনজুরি সময়ও শেষের দিকে ৯৩তম মিনিটে রিয়ালকে সমতায় ফেরান সার্জিও রামোস।
sportsmail24

ম্যাচ অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে রিয়াল যেন হিংস্র বাঘ হয়ে ওঠে। আধা ঘণ্টায় আথলেটিকোর জালে তিন বার বল পাঠিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলাররা। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল ও মার্সেলো ছিলেন গোলদাতা। রিয়াল সমর্থকদের নাভিঃশ্বাস তুলে দিয়ে নিজেদের দশম শিরোপা পুণরুদ্ধার করে তারা।

চেলসির প্রথম শিরোপা জয় (২০১১-১২)
চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম শিরোপার হাতছানি চেলসির সামনে, কিন্তু ম্যাচ পড়লো প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখের ঘরের মাঠেই! তবে যেখানেই পড়ুক ভাগ্য সে দিন পাশেই ছিল লন্ডনের দলটির।

ম্যাচের ৮৩তম মিনিটে প্রথম বল যায় চেলসির জালে। বায়ার্ন মিউনিখকে এগিয়ে দেন থমাস মুলার। পাঁচ মিনিট পরেই অবশ্য চেলসির পক্ষে গোল শোধ করে দেন দিদিয়ের দ্রগবা। ইনজুরি সময়ে বায়ার্ন মিউনিখ পেনাল্টি পেলে আশার বেলুন চুপশে যায় চেলসির।

তবে সে দিন চেলসির ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান গোলরক্ষক পিটার চেক। দারুণ দক্ষতায় মুলারের পেনাল্টি ফিরিয়ে দেন তিনি। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। ৪-৩ গোলে টাইব্রেকার জিতে প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে চেলসি।

টাইব্রেকারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রোমাঞ্চকর জয় (২০০৭-০৮)
অল ইংলিশ ফাইনালে ২০০৭-০৮ চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমে মুখোমুখি হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি। রোনালদোর গোলে ইউনাইটেড এগিয়ে গেলেও ল্যাম্পার্ডের গোলে সমতায় ফিরেছিল চেলসি।

টাইব্রেকারে ইউনাইটেডের হয়ে তৃতীয় শট নিতে আসেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ইউনাইটেড সমর্থকদের হতাশ করে পেনাল্টি মিস করে বসেন পর্তুগীজ সুপারস্টার। চেলসির হয়ে টাইব্রেকারের শেষ শট নিতে আসেন অধিনায়ক জন টেরি।

টেরি গোল করলেও চেলসির ঘরে আসবে শিরোপা। আর সেই শটেই স্লিপ করে মিস করেন টেরি। শিরোপা খোয়াতে হয় চেলসির। পরবর্তীতে ৬-৫ গোলের ব্যবধানে শিরোপা ঘরে তোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।  

ইস্তানবুলে লিভারপুলের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন (২০০৪-০৫)
২০০৪-০৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমে তুরস্কের ইস্তানবুলে মুখোমুখি হয়েছিল ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল ও ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান। ফেবারিট হিসেবে মাঠে নেমেও প্রথমার্ধেই তিন গোল হজম করে অলরেডরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে সমতায় ফেরে লিভারপুল।

ম্যাচের শুরুতেই লিভারপুলকে হতবাক করে গোল করেন এসি মিলান অধিনায়ক পাওলো মালদিনি। ম্যাচের ৩৯ ও ৪৪তম মিনিটে আরও দুই গোল হজম করে অলরেডরা। দুই গোলই আসে এসি মিলানের আর্জেন্টাইন ফুটবলার হার্নান ক্রেসপোর পা থেকে।

sportsmail24

৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে লিভারপুল। তখন হয়তো কোনো অলরেড সমর্থকই কল্পনা করেননি ম্যাচে ফিরে আসবে তাদের দল। কিন্তু সবার চোখে যেটা অসম্ভব সেটাই সম্ভব করে দেখিয়েছিল ইংলিশ ক্লাবটি।

দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ছয় মিনিটের ঝড়ে সমতায় ফেরে লিভারপুল। ৫৪ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে এসি মিলানের জালে তিন বার বল পাঠান অলরেড ফুটবলাররা। ম্যাচে ৫৪তম মিনিটে স্টিভেন জেরার্ড, ৫৬তম মিনীতে স্মাইচার ও ৬০তম মিনিটে জাভি আলোনোসোর গোলে স্বস্তি ফেরে অলরেড শিবিরে।

ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে ৩-২ গোলের ব্যবধানে জিতে নেয় লিভারপুল। ওই জয়ে তাদের ঘরে ওঠে পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।

পোর্তোর অঘটনের আসর (২০০৩-০৪)
২০০৩-০৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ মৌসুমে ‘আন্ডার-ডগ’ হয়ে একের পর এক অঘটনের জন্ম দিয়েছিল। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবল কোচ হোসে মরহিনহোর অধীনে রূপকথার জন্ম দিয়ে শেষ পর্যন্ত শিরোপা ঘরে তুলেই ক্ষ্যান্ত হয়েছিল।

sportsmail24

রিয়াল মাদ্রিদ, মার্সেইয়োর মতো দলের সাথে এক গ্রুপে থেকেও শেষ ষোলোতে উঠেছিল পর্তুগিজ দলটি। নক-আউটে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিয়ন এবং দেপোর্তিভো লা করোনার মতো ক্লাবকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল পোর্তো।

রূপকথার মিশনে পর্তুগিজের সামনে ফাইনালে শেষ বাধা ছিল এএস মোনাকো। তবে যেভাবে একের পর সিংহ শিকার করছিল পোর্তো তাতে মোনাকও যে বধ হবে না এই নিশ্চয়তা কেউ দেয়নি তখন। হলোও ঠিক তাই!

ফাইনালের মতো মঞ্চে মোনাকোর মতো ক্লাবকে উড়িয়ে দিল ৩-০ গোলের ব্যবধানে। চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ওঠের পর্তুগিজ ক্লাবটির ঘরে।

স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি/আরএস 


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

দীর্ঘদিন পর দুই সতীর্থের মহামিলন

দীর্ঘদিন পর দুই সতীর্থের মহামিলন

রিয়ালের অনুপ্রেরণা ২০১৪ ফাইনাল: আনচেলত্তি

রিয়ালের অনুপ্রেরণা ২০১৪ ফাইনাল: আনচেলত্তি

আমি প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না: ক্লপ

আমি প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না: ক্লপ

চ্যাম্পিয়নস লিগে দল বাড়ালো উয়েফা

চ্যাম্পিয়নস লিগে দল বাড়ালো উয়েফা