লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে এক বেলা

জান-ই-আলম জান-ই-আলম প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০২০
লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে এক বেলা

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের গণমানুষের বিনোদন, আমোদ-প্রমোদের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত বিভিন্ন সিরিয়াল, প্যাকেজ নাটক। আরব্য উপন্যাস, উপমহাদেশের রাজাদের কাহিনী, ইংলিশ সিরিয়ালের বাংলা ডাবিং নেশার মতো করে দেখা হতো গোটা দেশের ঘরে ঘরে।

ওই সময়টাতেই বিটিভিতে প্রচারিত হতো ‘সোর্ড অব টিপু সুলতান’। সেই থেকেই টিপু সুলতান নামটা বাঙালির অন্তরে গেঁথে আছে। বিশেষ করে নাইনটিজের কিডসদের অন্তরে। টিপু সুলতান নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম ‘সুলতান ফতেহ আলী খান সাহেব’। তাকে মহীশূরের বাঘও বলা হতো।

টিপু সুলতান ছিলেন ভারতের কর্নাটক-মহীশূর রাজ্যের রাজা। ব্রিটিশ আর্মি ও ট্রাবানকোরের সম্মিলিত প্রয়াসের যুদ্ধে রাজার মুকুট হারিয়েছিলেন অসীম সাহসী টিপু সুলতান। পিতা হায়দার আলীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই রাজ্য শাসন করতেন তিনি। মোঘল সাম্রাজ্যের শেষ দিকের প্রতিনিধি ছিলেন তারা। টিপু সুলতানের পরিচয় আপাতত এখানেই শেষ করা যাক।

ব্যাঙ্গালুরুতে এসে দ্বিতীয় দিনটাও বিশ্রামে কাটিয়েছিল বাংলাদেশ দল। অগত্যা মাঠে যাওয়ার তাড়া ছিল না আমাদেরও। হোটেলে ম্যানেজারের সহযোগিতায় শুক্রবার (১৮ মার্চ) জুম্মার নামাজ আদায়ের পর ট্যাক্সি চেপে চলে যাই টিপু সুলতানের স্মৃতি বিজড়িত বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখতে।

জায়গাটার নাম লালবাগ। টিকিট কেটেই ঢুকতে হয়। সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলের দিকে ঢলে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনের বর্তমান হাল-চালের সাথে এটির কিছুটা মিল রয়েছে। কপোত-কপোতীর ভীড় এখানেও আছে। নিরিবিলি সময় কাটাতে যুগলরা পছন্দ করেন এই প্রাকৃতিক পরিবেশ।

প্রাণী বিশেষ করে পাখির অভয়ারণ্য লালবাগের গার্ডেন। বড় বড় গাছ রয়েছে। সব মিলিয়ে সুনিবিড় পরিবেশ। ফটকের সামনেই বড় করে সাইনবোর্ডে লেখা আছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ইতিবৃত্ত। সেখানেই জানা গেল, সেই সতের’শ দশকে রাজা হায়দার আলী বাগান করার অভিপ্রায় করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেন। কাজ অসমাপ্ত রেখেই পরপারে চলে যান হায়দার আলী। তারই বড় ছেলে টিপু সুলতান রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করার পর পিতার ইচ্ছা পূরণে নিয়োজিত হন। সম্পূর্ণ করেন বিশাল বাগান তৈরির কাজ। যা এখন ব্যাঙ্গালুরু নগরীর হাজারও মানুষের বিনোদন, চিত্তকে প্রশান্তি এনে দেওয়ার স্থান হিসেবে পরিচিত।

এখানে রয়েছে একটি গ্লাস হাউস। যেখানে প্রতি বছর দুবার ফুলের প্রদর্শনী হয়। বছরের ২৬ জানুয়ারি ও ১৫ আগস্ট হয় ফুলের মেলা। গ্লাস হাউস আবার ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল। ৪৫ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা করলেও এখন ২৪০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন। ১ হাজার প্রজাতির গাছ আছে। যার মধ্যে কিছু কিছু আছে শতবর্ষের পুরনো।
sportsmail24
ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতোই অনেক লোককে ঘুমাতে, সুবিশাল গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থা আছে। ছবি তোলার জন্য দারুণ সব ব্যবস্থা রয়েছে।

টকে রয়েছে স্থানীয় এক রাজার মূর্তি। কাঠের তৈরি ঘড়ি, বড় বড় বেঞ্চ, সুবিন্যস্ত গাছ-গাছালির মাঝেই রয়েছে নাম ফলক। শেষ প্রান্তে পাথরের এক পাহাড় আছে। যার চূড়ায় আবার মন্দির বানানো হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের। ওই চূড়া থেকে ব্যাঙ্গালুরু শহরের বড় বড় বিল্ডিংগুলোর দিকে তাকালে চোখে জুড়াবে অপূর্ব নান্দনিকতায়।

গার্ডেন থেকে বের হওয়ার রাস্তা অনেক। যার মধ্যে একপাশে রাস্তার দুধারে ফুলের বাগান, বাহারী গাছ রয়েছে। প্রিয়জনসহ অনেকেই বিকেলের সময়টা ঘুরতে আসেন। দম্পতি, পরিবার, ছাত্র-ছাত্রী, বুড়ো মানুষরা সকাল-বিকেল এখানে আসেন যান্ত্রিকতাকে নির্বাসিত করে ক্ষণিকের জন্য প্রকৃতির স্নিগ্ধতাকে আলিঙ্গন করতে।

বিদেশি দর্শনার্থীর আনাগোনাও রয়েছে। আমাদের মতোই জার্মানি, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ভারত ভ্রমণার্থীদের দেখা মিললো লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেনে। দক্ষিণ কোরিয়ার দুই সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এর আগে গার্ডেনের ভেতর বিদেশি পর্যটকদের একটা দলের সঙ্গেও আমরা ছবি তুলেছিলাম। দুই ভদ্র মহিলার সঙ্গে আমার ছবি তুলে দিয়েছিলেন শামীম ভাই।

অস্তাচলের আগেই গার্ডেন থেকে বের হয়ে হোটেলের উদ্দেশে রওনা হই আমরা। সাহসিকতার স্বরুপ চোখে না পড়লেও হায়দার আলী এবং টিপু সুলতানের প্রকৃতি প্রেমের অপার নিদর্শনই বহন করছে এ গার্ডেন।

চলবে...

সবগুলো পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- ভারত ভ্রমণের দিনলিপি


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

মিশন এবার ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ ব্যাঙ্গালুরু

মিশন এবার ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ ব্যাঙ্গালুরু

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেছানোর দাবি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পেছানোর দাবি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের পদ্ধতি বাতিয়ে দিলেন ব্র্যাড হগ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের পদ্ধতি বাতিয়ে দিলেন ব্র্যাড হগ

অনুদান দিতে পারেন সাকিবের ফাউন্ডেশনে

অনুদান দিতে পারেন সাকিবের ফাউন্ডেশনে