গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন আর্চার রোমান সানা। এছাড়া আর্চারিত এশিয়া কাপ, ইসলামিক সলিডারিটিসহ আর্চারি বিশ্বকাপের বিভিন্ন স্টেজে নিয়মিতই সাফল্য এনে দিচ্ছেন তিনি। নিজের এমন ধারাবহিকতা ধরে রেখে দেশের হয়ে আরও ১০-১৫ বছর খেলতে চান রোমান সানা। একই সাথে খেলা শেষে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অর্জন ছড়িয়ে দিতে চান নতুন প্রজন্মের মাঝে। যুক্ত হতে চান কোচিং পেশায়।
টোকিও অলিম্পিকের প্রস্তুতি এবং করোনার এ সময়ে কিভাবে কাটছে সময় বা কোথায় গিয়ে থামতে চান -এসব নানা বিষয় নিয়ে স্পোর্টসমেইল২৪.কম-এর সাথে কথা বলেছেন আর্চার রোমান সানা। দেশসেরা এ আর্চারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের সহ-সম্পাদক পার্থ প্রতীম রায়।
করোনার এ সময়ে কেমন আছেন, কেমন চলছে প্রস্তুতি?
রোমান সানা : আলহামদুল্লাহ ভালো। আমরা ওয়ার্ল্ড কাপ স্টেজ-২ খেলতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি। তাই শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই আমাদের অনুশীলন চলছে।
কোথায় অনুশীলন করছেন?
রোমান সানা : টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে আমাদের ক্যাম্প চলছে।
কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ কি আপনার সাথে আছে?
রোমান সানা : জ্বি আছেন, করোনার মধ্যেও তিনি আমাদের সাথে আছেন।
অলিম্পিকে কী লক্ষ্য ঠিক করেছেন?
রোমান সানা : ব্যক্তিগতভাবে সবারই ভালো করার ইচ্ছা থাকে। আমারও নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। প্রত্যেক অ্যাথলেটেরই পদক পাওয়ার ইচ্ছা থাকে। তবে প্রথমবার অলিম্পিকে অংশ নিয়ে পদক পাওয়ার আশা করাটা বোকামি। যতো কিংবদন্তি অ্যাথলেট দেখেন কেউ কিন্তু প্রথমবার অংশগ্রহণ করে মেডেল পায়নি। উইসান বোল্ট, মাইকেল ফেলপসের মতো কিংবদন্তিরাও প্রথমবারে মেডেল পাননি। তবে আমার চেষ্টা থাকে প্রত্যেক ম্যাচে নিজের সেরাটা দেওয়ার। ভালো ফলাফল করার। কেউ তো খারাপ খেলতে চায় না, ইনশা-আল্লাহ চেষ্টা করবো নিজের সেরাটা দিয়ে ভালো পারফর্ম করার।
মাউরো নেসপলিকে (ইতালি) হারিয়ে অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
রোমান সানা : উনি তো অনেক ভালো আর্চার। অলিম্পিকসহ প্রায় সব টুর্নামেন্টে স্বর্ণপদক জয়ী আর্চার। বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আর্চারও তিনি। তিনি তিনবার অলিম্পিক খেলেছেন। সর্বোপরি বিশ্বের সব টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। ওনাকে হারানো এবং ওয়ার্ল্ডকাপের ফাইনাল স্টেজে গিয়ে মেডেল পাওয়া এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।
ওকে (মাউরো নেসপলি) হারানো আমার জন্য সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং খুশির বিষয়। তাকে হারানো আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ছিল। এ অনুভূতি আমি বলে বোঝাতে পারবো না। এটা আমার জন্য খুশির দিন ছিল।
ক্রিকেট বা ফুটবলে অনেক স্পন্সর পাওয়া গেলেও আর্চারিতে ঠিক তেমনটা নেই। এর আগেও আপনি এটি নিয়ে কথা বলেছিলেন। অলিম্পিক সামনে রেখে এখনো কি স্পন্সর সমস্যা আছে?
রোমান সানা : আমাদেরকে তীর গ্রুপ ‘গো ফর গোল্ড’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্পন্সর করেছে। তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। আলহামদুল্লিলাহ, তারা এসেছে বলেই আমরা ওয়ার্ল্ড কাপের টুর্নামেন্টগুলো খেলতে পারছি এবং ভালো করতে পারছি। তবে তাদের মতো যদি আরও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে, তাহলে আমাদের আর্চারি অনেক এগিয়ে যাবে।
ক্রিকেট বা ফুটবলে স্পন্সরের অভাব নেই। তাদের অর্জনটা কোথায় একটু দেখেন? আমাদের এ খেলাটার প্রত্যেকটা ম্যাচই নক-আউট পর্বে হয়। যেখানে এক ম্যাচ হারলেই বাদ। এখানে দ্বিতীয় কোনো চান্স থাকে না। দলগত, মিশ্র দলগত কিংবা ব্যক্তিগত সব ইভেন্টেই নক-আউট পর্বে খেলা হয়। একটা টুর্নামেন্টে কোনো পদক অর্জন করতে হলে কমপক্ষে ৫-৬টা ম্যাচ জিততে হয়।
আমি এশিয়া কাপে দুইবার স্বর্ণপদক জয় করেছি। আমাদের এশিয়া কাপে সর্বনিম্ন হলেও ১৫টা দেশ আর সর্বোচ্চ ৩০টা দেশ খেলতে আসে। ২০১৪ সালে যখন প্রথম এশিয়া কাপে স্বর্ণ পদক পাই তখন দল ছিল ১৭-২১টা (সঠিক মনে নেই)। এশিয়া কাপে স্বর্ণ পদক জয়ের জন্য টানা ছয় ম্যাচ অপরাজিত থাকতে হয়েছে। তারপর ফাইনালে গিয়ে জিতে স্বর্ণপদক পেয়েছি।
আপনি ক্রিকেটে দেখেন, এশিয়া কাপ খেলে কয়টা দেশ? মাত্র পাঁচটা দেশ, তাও আবার পাঁচ বছরে পাঁচটা দেশ হয়েছে। আফগানিস্তান নতুন করে যোগ হয়েছে। সেখানে আজ পর্যন্ত একটা এশিয়া কাপ জিততে পারেনি। সিনিয়র টিমের কথা বলছি, জুনিয়র টিম তো আলহামদুল্লিলাহ, বিশ্বকাপ জয় করেছে। আসলে ক্রিকেট জনপ্রিয় খেলা, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে খেলে। এটা দর্শকপ্রিয় খেলা, তাদের সাথে আমাদের তুলনা হয় না। তারপরও অলিম্পিকভুক্ত খেলাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। আমাদের সরকার এবং ক্রীড়া কর্মকর্তাদের এটা নিয়ে ভাবা উচিত।
অন্যান্য দেশগুলোতে দেখেন, সব খেলার সমান মূল্যায়ন। সেদিক থেকে তাকালে আমাদের ফলাফল দেখলে আর্চারিতে স্প্সর খুবই দরকার। আসলে ম্যাচ না খেললে কখনো অভিজ্ঞতা হয় না, আত্মবিশ্বাস হয় না। আমরা গত এক বছর যাবত কোনো ম্যাচ খেলছি না। ফেলে কনফিডেন্স লেভেলও সেই জিরোতে চলে গেছে। বাইরের দেশের আর্চাররা বছরের ৯-১০টা টুর্নামেন্ট খেলে, প্রতি মাসেই তারা টুর্নামেন্ট খেলে। আমাদের সেই রকম খেলা হয় না।
২০১৮ সালে তীর ‘গো ফর গোল্ড’ আমাদের স্পন্সর করছে। ২০১৯ সালে আমি ৯-১০টা টুর্নামেন্ট খেলছি। তখন আমার কনফিডেন্স লেভেল বেশ উপরে ছিল। তখন আমি বলতে পারতাম, আমি কিছু একটা করতে পারবো। আমরা নিয়মিত গেম খেললেই আমরা আত্মবিশ্বাস পাব এবং সফলতা আসবে। এদিক থেকে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের ফেডারেশনের সহযোগিতা দরকার। বড় বড় কোম্পানিগুলো যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের খুবই উপকার হয়। আগামী ৫-১০ বছর পর আমরা সব টুর্নামেন্ট থেকে পদক আনতে পারবো।
স্পোর্টস এমন একটা মাধ্যম, দেশকে পরিচয় করার অন্যতম একটি মাধ্যম। যেমন- সাকিব আল হাসান ভাইয়ের জন্য আমাদের দেশের নাম বেশ উজ্জ্বল হয়েছে। আগে যখন আর্চারি খেলতে যেতাম তখন কেউ বাংলাদেশকে চিনতো না এবং সমীহ করতো না। তারা এখন আমাদেরকে সমীহ করে। এখন আমরা যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখি।
দেশে নতুন আর্চার কেমন আসছে?
রোমান সানা : এখন আমাদের অনেক খেলোয়াড় বেড়েছে। প্রতিযোগিতাও অনেক বেড়েছে। কে ব্যক্তিগতভাবে পদক পাবে সেটা বলা মুশকিল। এখন যে কেউ যে কাউকে হারাতে পারে। ৪-৫ বছর আগে আমরা ২০-৩০ জন খেলতাম। এখন শুধু ছেলেদের রিকার্ভেই ১০০ জনের উপরে অংশগ্রহণ করে। সারা বাংলাদেশ মিলে ২০০ জনের উপরে খেলোয়াড় আছে। এবার বাংলাদেশ গেমসে ১৭৫ জনকে অংশ নিতে দিয়েছে, তা না হলে প্রতিযোগী ২০০ পার হয়ে যেত।
২০১৯ সালে আপনি অনেক সাফল্য পেয়েছেন। ২০১৯ সালকে কি নিজের ক্যারিয়ারের সেরা বছর বলবেন?
রোমান সানা : হ্যাঁ, এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা বছর।
চলতি বছর অনেকগুলো টুর্নামেন্ট খেলার কথা ছিল। করোনার মাঝেও কি সেখানগুলোতে যাওয়া হচ্ছে?
রোমান সানা : সুইজারল্যান্ড যাচ্ছি। ইনশা-আল্লাহ প্যারিসে যাব। একটা এশিয়া কাপ হওয়ার কথা রয়েছে, তবে জানি না হবে কি-না। সব টুর্নামেন্টই তো প্রায় করোনার কারণে স্থগিত করা হয়েছে। যদি হয় তাহলে যাওয়া হবে।
ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
রোমান সানা : দেশের হয়ে আরও ১০-১৫ বছর খেলার ইচ্ছা আছে। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর কোচ হওয়ার ইচ্ছা আছে। খেলোয়াড়ি জীবনে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা অন্য খেলোয়াড়দেরকে মধ্যে দিতে চাই। যাতে তারা আমার থেকে আরও অনেক ভালো করতে পারে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
রোমান সানা : আপনাকে এবং স্পোর্টসমেইল২৪.কমকেও ধন্যবাদ।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর/আরএস
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]