ক্যাপ্টেন, আপনাকে ধন্যবাদ

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি মাহমুদুল হাসান বাপ্পি প্রকাশিত: ১২:২৫ এএম, ০৭ মার্চ ২০২০
ক্যাপ্টেন, আপনাকে ধন্যবাদ

এত মাশরাফি! সবাই মাশরাফি! অন্তত জার্সির পেছনে দেখলে তো এমন দ্বন্দেই পড়তে হলো। অধিনায়ককে নেতা হিসেবে বিদায় জানাতেই তা করা। মাশরাফিকে কাঁধে তুলে নেন তামিম। টুকরো টুকরো করে জমা হওয়া ভার কমাতে!

মাশরাফি হাসেন, যাদের প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’ তারাও। তবুও কোথায় যেন কাজ করে অজানা এক শূন্যতা। চারপাশটা হয়ে যায় কেমন ঘোমট, এক মহাতারকার বিদায়ে।

অস্থির হয়ে ধরে আসে তার গলা। চোখ বেয়ে পানিটা পড়তে পড়তেও যেন খুঁজে পায় না গন্তব্য। মনের বিষাদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখের কোণায়। মাশরাফি কাঁদতে চান খুব করে, পারেন না। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ লুকিয়ে রাখতে চান শক্ত বুকের পাজরের নিচে, তাও সম্ভব হয় না।

মাশরাফি ব্যর্থ হন সবকিছুতে। তবে তিনি যখন থামছেন, বলছেন আমি আর থাকছি না বাংলাদেশের অধিনায়ক। তখন এই মহানায়কের প্রস্থান হচ্ছে সাফল্যের মুকুট মাথায় তুলে। যা সগর্বে তিনি উঁচিয়ে রাখতে পারেন চুলগুলোর ওপরে। তার কান্নার ভারাক্রান্ততা পৌঁছে গেছে বাংলার পথে প্রান্তরে, নিশ্চিত হতে পারেন সেটাও।

আরও একটি জিনিস মাশরাফি জেনে রাখতে পারেন- এদেশের কোটি হৃদয় কখনো ভুলতে পারবে না তার নেতৃত্বগুণ। যেমন তার সতীর্থরা পারবেন না প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’কে মিস না করে থাকতে। কখনো খুব অস্বস্তির পরিবেশে একটা ভরসার হাত খুঁজতে গিয়ে পাবেন না তার দেখা।

১০ বছর বয়সে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়েও যে ছেলেটার কিচ্ছু হয়নি। সে ছেলে হাসিমুখে ছুরি-কাঁচি নিচে শুয়েছেন অনেকবার। নেতা হয়েছেন পুরো দেশটার। যার বিদায় বেলায়ও মুখ চওড়া করে হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে যান, পারেন না। বিষাদের রেখা ডানা মেলে। তাতে পুড়ে ছাড়খার হয় তার ভক্ত-সমর্থক কিংবা সতীর্থদের সবকিছু।

তিনি কি তা জানেন না? হয়তো জানেন। মাশরাফি আসলে জানেন অনেক কিছু। জাদুর কাঠির মতো বদলে দেন সব। ২০১৪ সালে যখন মুশফিকুর রহিমের হাত থেকে নেতৃত্ব উঠেছিল তার হাতে, সে বছর তখনো একটিও জয় পায়নি বাংলাদেশ।

এরপর মাশরাফি এলেন দৃশ্যপটে। জেতালেন পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। আগেও বেশ কয়েকবার হয়েছিলেন অধিনায়ক। বিধাতা সহায় হননি তাতে। ইনজুরি থাবায় বরাবরই হয়ে পড়েছেন অসহায়, নেতৃত্বের ভার কাঁধে তুলে মাঠ ছেড়েছেন সতীর্থদের কাঁধে হাত রেখে।

এক পর্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই দায়িত্ব আর নেবেনই না। বাবা গোলাম মর্তুজার অভয়তেই নিয়েছেন। এরপর গড়েছেন ইতিহাস। টুকরো টুকরো সুখস্মৃতির স্তুপ। তিনি হেসেছেন, তার দল কখনো কখনো কাঁদিয়েছে, তিনিও হয়তো। তবে সে ব্যথা আড়াল করেছেন বারবার, চেয়েছেন একা সইতে।

দূরে রেখেছেন সবাইকে। সব দোষ নিয়েছেন মাথা পেতে। আবার আশা দেখিয়েছেন, দলকে জিতিয়েছেন, ঘুচিয়েছেন অধিনায়ক শিরোপা না জেতার আক্ষেপ। বল হাতেও থেকেছেন সবার সামনে।

এই একটা ম্যাচ আগেই তো। সিলেটে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। মাতাভারের উইকেটটা যখন নিলেন, অধিনায়ক হিসেবে শততম উইকেট পূর্ণ হলো তার। এই কীর্তি শতাধিক বছরের ক্রিকেট ইতিহাসেই আছে চারজনার। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, শন পোলক ও জেসন হোল্ডারের মতো নামগুলো উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে যে ছোট্ট লিস্টে।

২০১৪ সালে অধিনায়ক হলেন যখন থেকে, বোলার হিসেবেও সেখানে স্বমহিমায় নিজের উচ্চতা জানান দিয়েছেন রঙিন পোশাকের অধিনায়ক। নেতৃত্বগুণের চাপে আড়াল হয়ে যাওয়া বোলার মাশরাফিও যে আলো জড়িয়েছেন পরিসংখ্যানই তার জানান দিচ্ছে। মোস্তাফিজুর রহমানের ১০৮ উইকেটের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৫ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তিনি।

এই যে অধিনায়কত্ব ছাড়লেন, এদিনও গড়লেন এক ইতিহাস। প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে জয়ের ফিফটি গড়েছেন জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা কিংবা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হারিয়ে দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তানকেম এসব লেখা থাকবে অধিনায়ক মাশরাফির পরিসংখ্যানে।

লেখা থাকবে না জয়ের মন্ত্র জপে দেওয়ার, সতীর্থদের সব সমস্যায় পরম মমতায় নিজের সবটা ঠেলে দেওয়া। মাশরাফির ‘হার না মানা মানসিকতা’ পুরো দলে ছড়িয়ে পড়ার কথাও লেখা থাকবে না রেকর্ড বুকে। যে মানুষটা এতদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষকে হাসিয়েছেন, নেতৃত্বের বাটনটা অন্যদের হাতে দিলেও তার হাসিটাই তো প্রত্যাশা সবার। প্রার্থনা, অধিনায়কের ভালো থাকার। ভালো থেকো অধিনায়ক। ক্যাপ্টেন, আপনাকে ধন্যবাদ।

লেখক : মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, শিক্ষার্থী ও ক্রীড়া লেখক।

 

[স্পোর্টমেইল২৪.কমে সকল মতামত লেখকের নিজস্ব। এর জন্য কর্তৃপক্ষ কোন দায় বহন করবে না। চাইলে আপনিও খেলাধুলার যেকোন বিষয় নিয়ে আপনার চিন্তা, যুক্তি বা মতামত লিখতে পারেন। আমরা আপনার মতামত তুলে ধরবো আমাদের পোর্টালে। লেখা পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়- sportsmailinfo@gmail.com]


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

মাশরাফির শেষ অধিনায়কত্বে জয় উপহার দিল টাইগাররা

মাশরাফির শেষ অধিনায়কত্বে জয় উপহার দিল টাইগাররা

নেতৃত্ব ছাড়লেও আপনি আমাদের প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’ : সাকিব

নেতৃত্ব ছাড়লেও আপনি আমাদের প্রিয় ‘মাশরাফি ভাই’ : সাকিব

অধিনায়কত্ব ছাড়লেন মাশরাফি

অধিনায়কত্ব ছাড়লেন মাশরাফি

এমপি হওয়ায় মাশরাফির এতো সমালোচনা : আশরাফুল

এমপি হওয়ায় মাশরাফির এতো সমালোচনা : আশরাফুল