বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মিস করবে ক্রিকেট বিশ্ব

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৮:২৬ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মিস করবে ক্রিকেট বিশ্ব

প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়াই শুরু হচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। এবারের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। বিশ্বকাপের ৪৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিশ্ব মঞ্চে দেখা যাবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এক সময়ের পরাক্রমশালী দল এবারের আসরে না থাকায় সাবেক ক্রিকেটার এবং ক্রিকেটপ্রেমিদের অনেকেই হতাশ।

২০১৯ সালের ওয়ানডে আসরের পর খেলাটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য ১৩টি দলকে নিয়ে সুপার লিগ আয়োজনের নিয়ম করে। এদের মধ্য থেকে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ সাত দল ও বিশ্বকাপের স্বাগতিক দল সরাসরি মূল আসরে খেলার সুযোগ পাবে। শীর্ষ আটের বাইরে থাকা দলগুলো পরবর্তীতে বাছাই পর্ব খেলবে।

২০২০ সালের ৩০ জুলাই ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপের প্রথম সুুপার লিগ। বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে এ বছরের মে’তে শেষ হয় সুপার লিগ পর্ব।

সুপার লিগ শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ সাত-এর মধ্যে থাকায় বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং স্বাগতিক হিসেবে ভারত।

২৪ ম্যাচে ৮৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নবমস্থানে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেবিলের পরের দিকে ছিল শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস। দলগুলো বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অংশ নেয়। সাথে বাছাইপর্বে নাম লেখায় বিশ্বকাপ লিগ-২ সেরা তিনটি দল ও বিশ্বকাপ চূড়ান্ত বাছাই প্লে অফের সেরা দু’টি দল।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে গ্রুপ ও সুপার সিক্স মিলিয়ে ৫ ম্যাচে ১টি জয় ও ৪টি হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে থাকায় বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাছাই পর্ব থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পায় শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ না পাওয়ায় হৃদয় ভাঙে সে দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক প্রধান কোচ গর্ডন গ্রিনিজ বলেছেন, “ইদানীং খুব বেশি ক্রিকেট দেখি না। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেট। আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার আমায় কষ্ট দিতো। এখন হার সেভাবে আমাকে পোড়ায় না। এর মূল কারণ, অনেক দিন ধরেই আমাদের ক্রিকেটের মান নিচের দিকে নামছে।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক সাবেক ক্রিকেটার ইয়ান বিশপ বলেছেন, ‘একটি দল এক সময় শীর্ষে ছিল। কিন্তু এখন তাদের পারফরমেন্স নিম্নমুখী। সেই দলটি আমরা। গত চার দশক ধরেই নীচের দিকেই যাচ্ছে আমাদের পারফরমেন্স।”

সত্তর-আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল মানেই বিশ্ব সেরা ক্রিকেটারদের মিছিল ছিল। ক্লাইভ লয়েড, গর্ডন গ্রিনিজ, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেইন্স, অ্যান্ডি রবার্টসরা সেটি মাঠে প্রমান করে দেখিয়েছেন।

টেস্টে আধিপত্য বিস্তার করার পাশাপাশি ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরে দাপট দেখিয়ে শিরোপা জিতেছিল ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম আসরে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে এবং পরের আসরে ইংল্যান্ডকে ৯২ রানে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলে ক্যারিবীয়রা।

১৯৮৩ সালে হওয়া বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের কাছে ৪৩ রানে হারে ক্যারিয়বীয়রা।

এরপর বিশ্বকাপের আর কোন আসরের ফাইনালেই উঠতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৯৬ সালে সেমিফাইনাল ও ২০১১ সালের আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো ক্যারিবীয়রা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে লিগ পর্বে ৯ ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন ড্যারেন স্যামি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ক্যারিবীয়দের দলের কোচও ছিলেন তিনি। স্যামি বলেন, “অবশ্যই বিশ্বকাপে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মিস করবো। শুধুমাত্র আমরা নই, সারা বিশ্বই মিস করবে।”


শেয়ার করুন :