স্পোর্টসমেইল২৪
২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের ফল দুঃস্মৃতি হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস লিপিবদ্ধ। মাত্র ২ রানে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। শিরোপা জিততে না পারার দুঃখে এখনো পুড়ছে বাংলাদেশ। তবে সেই দুঃখ কিছুটা ভোলার সুযোগ পেয়েছে টাইগাররা। বুধবার এশিয়া কাপের সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচটি সুপার ফোরের হলেও এ ম্যাচে জয়ী দলই ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে খেলবে। ফলে ম্যাচটি অঘোষিত সেমিফাইনালে পরিণত হয়েছে। তাই পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল খেলার ছাড়পত্র পেতে উদগ্রীব বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ২০১২ সালের ফাইনালে হারের প্রতিশোধও নেয়া হয়ে যাবে টাইগারদের।
১৯৮৬ সাল থেকে এশিয়া কাপ খেলছে বাংলাদেশ। নিজেদের মাটিতে ২০১২ আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে টাইগাররা। শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দলটি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে সাকিব-মুশফিকদের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ায় পাকিস্তান। ফাইনালে মাত্র ২ রানে হেরে সেদিন অঝোর ধারায় কেঁদেছেন সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-নাসিররা।
ফাইনাল হারের সেই দুঃস্মৃতি আজও বেশ টাটকা। এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানকে প্রতিপক্ষ হিসেবেই পেলেই ছয় বছর আগের স্মৃতি চোখে ভেসে ওঠে ক্রিকেটপ্রেমিদের। ফাইনালের ওই ম্যাচটি যতটা গুরুত্ব ছিল বুধবারের ম্যাচটিও ততটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ ম্যাচের ফলের ওপরই নির্ভর করছে ১৪তম আসরের ফাইনালে উঠবে কোন দল।
পুরো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোর মিলিয়ে চার ম্যাচের দু’টিতে জিতেছে টাইগাররা। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে বাংলাদেশ। তবে পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে যায় তারা। এছাড়া সুপার ফোরে ভারতের কাছেও হেরে যায় বাংলাদেশ।
সুপার ফোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ে বাংলাদেশকে পাস মার্ক এনে দেন মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস ও মোস্তাফিজুর রহমান। ব্যাট করে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১২৮ রানের নান্দনিক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে ২৪৯ রানের পুঁজি এনে দেন মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুল।
২৫০ রানের পুঁজি নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় বাংলাদেশ। শেষ ওভা কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ মাত্র ৪ রান দিয়ে ৩ রানে ম্যাচের জয় ছিনিয়ে আনেন। আর এতেই ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশ।
টুর্নামেন্টের ফাইনালে যেতে হলে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বুধবার পাকিস্তানকে হারাতেই হবে। তবে শুধুমাত্র পারফরমেন্স দিয়েই নয় ভাগ্য সাথে থাকলে জয় সম্ভব বলে মনে করেন মোস্তাফিজ। বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যেমন ক্রিস গেইল যেদিন ভালো খেলে সেদিন আর কিছু করার থাকে না। তেমনি পাকিস্তানের বেলাতেও একই। তারা যেদিন খেলে, সেদিন কাউকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু ভাগ্য যদি আমাদের পক্ষে থাকে তাহলে তাদের জন্য দিনটি উল্টো হবে। আমাদের ভাগ্যে না থাকলে নাই।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর বাংলাদেশ দল বেশ ফুরফুরা মেজাজে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মোস্তাফিজ বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের কারণে আমরা এখন ভালো অবস্থায় রয়েছি। পরের ম্যাচে ভালো খেলতে আমরা সাহস পাব। এ ছাড়া আমরা জানি, পরের ম্যাচ জিতলেই ফাইনাল খেলতে পারব। তাই আমাদের লক্ষ্য থাকেবে ভালো পারফরমেন্স করা এবং দলের সবাই এ জন্য উদ্গ্রীব।’
অন্যদিকে পাকিস্তান দলকে নিয়ে শঙ্কিত দেশটির সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম। তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের এই দল নিয়ে আমি বেশ শঙ্কিত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে তাদের।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি যে চ্যালেঞ্জের সেটি মানছেন পাকিস্তানের ওপেনার ইমাম-উল হকও। বলেন, ‘আমাদের জন্য পরের ম্যাচটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। আমাদের আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। দলের সবাই ঘুড়ে দাঁড়ানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’
এশিয়া কাপে ও ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১২বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সবগুলো ম্যাচই জিতেছে পাকিস্তান। তবে এশিয়া কাপের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একবারের সাক্ষাতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৩৫ লড়াইয়ে ৩১টিতে জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ৪টিতে জয় বাংলাদেশের। এর মধ্যে তিনটিই এসেছে সর্বশেষ সাক্ষাতে।
আবুধাবিতে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হবে চলমান এশিয়ার কাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সুপার ফোরের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের লড়াই।
বাংলাদেশ দল
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিথুন, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মোমুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোমিনুল হক।
পাকিস্তান দল
সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক), ফখর জামান, ইমাম উল হক, শান মাসুদ, বাবর আজম, শোয়েব মালিক, আসিফ আলী, হারিস সোহেল, শাদাব খান, মুহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, হাসান আলী, মোহাম্মদ আমির, জুনাইদ খান, উসমান সিনওয়ারি ও শাহিন আফ্রিদি।
