রিয়াল মাদ্রিদকে ‘না’ বলা দশ ফুটবলার

আরিফুল হক বিজয় আরিফুল হক বিজয় প্রকাশিত: ০৪:৫৮ পিএম, ২২ মে ২০২২
রিয়াল মাদ্রিদকে ‘না’ বলা দশ ফুটবলার

ফুটবল ক্লাবগুলোর ইতিহাসে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের বেশ পুরনো ঐতিহ্য রয়েছে। এই ক্লাবে যুগ যুগ ধরে খেলে গেছেন ফুটবলের অনেক কিংবদন্তি, রথী-মহারথীরা। বর্তমানে ক্লাব মাতাচ্ছেন সময়ের সেরা ফুটবলাররা। প্রত্যেক ফুটবলারের স্বপ্ন থাকে বিশ্বের নামকরা কোনো ক্লাবে খেলা। সে দিক থেকে রিয়াল মাদ্রিদও অনেকের স্বপ্ন।

মজার ব্যাপার হলো- ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটির প্রস্তাব পেয়েও ‘না’ করে দিয়েছেন অনেক ফুটবলার। এমন দশ জনের দিকেই আলোকপাত করেছে স্পোর্টসমেইল২৪.কম।

স্টিভেন জেরার্ড (ইংল্যান্ড)
রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ডাক পেয়েছিলেন ইংলিশ কিংবদন্তি ফুটবলার স্টিভেন জেরার্ডও। ভালো অঙ্কের পারিশ্রমিক দিয়েই তাকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। তবে সেই প্রলোভনে পা না দিয়ে নিজ শহরের ক্লাব লিভারপুলেই এক জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জেরার্ড।

সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, ‘ক্যারিয়ার জুড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার জন্য আমার কাছে কয়েকটি বিকল্প ছিল। কিন্তু আমি আমার শহরের ক্লাবের (লিভারপুল) সাথে বন্ধনের কারণে সেটা করিনি।’

‘নিজেকে চ্যালেঞ্জ না করে এবং ভিন্ন কোনো দেশে না যাওয়ার কারণে আমার অনুশোচনা হতে পারে। তবে আমার প্রিয় ক্লাবটি ছেড়ে যাওয়া আমার জন্য আরও বড় অনুশোচনা ছিল। আমি মাদ্রিদের একজন বড় ভক্ত, তারা একটি বিশেষ ক্লাব। কিন্তু লিভারপুল আমার এক নম্বর ক্লাব’ - জেরার্ড আরও যোগ করেন।

নেইমার (ব্রাজিল)
মাত্র ১৩ বছর বয়সে নেইমারের সামনে রিয়ালে যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। এমনকি ২০১৩ সালে যখন তাকে নিয়ে বার্সেলোনা-রিয়াল যুদ্ধ লাগার উপক্রম, তখন খুশি মনে বার্সেলোনা বেছে নিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা।

নেইমার বলেন, ‘আমি ১৩ বছর বয়সে প্রথমবার ইউরোপে এসেছি। সেই সময় আমার মোটেও ভালো লাগেনি। আমি নিজেকে সুখী দেখতে এবং অল্প বয়সের কারণে ব্রাজিল থেকে দূরে থাকতে চাইনি।’

ফ্রান্সেসকো টট্টি (ইতালি)
রিয়াল মাদ্রিদ তিনবার টট্টিকে সই করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ইতালীয় ক্ললাব রোমার প্রতি দুর্বলতা ছিল টট্টির। তাই আর স্পেন ফিরেননি এই তারকা। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেছি। বেশ কিছু দিন আমর এক পা ভিতরে এবং এক পা বাইরে ছিল। তারপরে আমি দেখলাম যে, রোমার সাথে থাকতেই আমার মন সায় দিচ্ছে। এই মুহুর্তগুলোর জন্যেই আমি তখন দূরে (রিয়ালে) যাই নি।’

‘তবে অবশ্যই পিছনে ফিরে তাকালে, রিয়াল মাদ্রিদকে না বলার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা উচিত ছিল। রিয়াল মাদ্রিদই আমার একমাত্র দল হতে পারতো। একটি ভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা প্রত্যেকের জন্য সুন্দর কিছু হতে পারে। সেটা হোক আমার পরিবার বা আমার জন্য।’ - টট্টি যোগ করেন।

রয় কিন (আয়ারল্যান্ড)
ক্যারিয়ারের গোধূলিতে রিয়াল মাদ্রিদ রয় কিনের সঙ্গে ১৮ মাসের চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে সায় দেননি সাবেক আইরিশ ফুটবলার। তিনি বলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ আমাকে দেড় বছরের চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। মাইকেল (কেনেডি) মাদ্রিদে গিয়েছিলেন এবং চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।’

‘এটি আমার সামনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু আমি গ্রহণ করিনি। একবার ভাবুন স্পেনে যাওয়া, সেখানে দেড় বছর বসবাস করা, একটি ভিন্ন ভাষা শেখা, সংস্কৃতি শেখা। আপনি এখানে থাকতে পারবেন , কিন্তু আপনার এই ভালোবাসা ক্ষনিকের। একদিন শেষ হয়ে যাবে।’ - কিন যোগ করেন।

পল পগবা (ফ্রান্স)
ফ্রান্স তারকা পগবাকে ২০১৬ সালে নিজেদের শিবিরে ভেড়ানোর চেষ্টা করে রিয়াল। কিন্তু তিনি জুভেন্টাস থেকে তার সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেই পুনরায় যোগদান করার সিদ্ধান্তকে ভালো মনে করেন।

পগবা বলেন, ‘সত্যি বলতে, রিয়াল মাদ্রিদ আমার কাছে এসেছিল এবং আমি সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। একই সঙ্গে আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেও যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু আমি সবসময় এটা (ম্যানইউ) আমার হৃদয়ে অনুভব করতাম। মন আমাকে ইউনাইটেডে ফিরে আসতে বলেছিল। আমি আমার পছন্দের জন্য কখনোই অনুশোচনা অনুভব করি না।’ – পগবা যোগ করেন।

জিয়ানলুইজি বুফন (ইতালি)
ক্যালসিওপোলি কেলেঙ্কারির পর ২০০৬ সালে জুভেন্টাস যখন সিরি-এ থেকে বি-তে নির্বাসিত হয়, তখন রিয়াল মাদ্রিদ চেয়েছিল বুফনকে দলে ভেড়াতে। তখন জুভেন্টাস থেকে বুফনের ইচ্ছাকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। তখন পুরনো ক্লাবেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন এ কিংবদন্তি খেলোয়াড়।

এ প্রসঙ্গ উঠতেই বুফন বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, সত্য হলো ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিয়ানকোনারির সাথে আমার একটি চুক্তি আছে। আমি ইতালিতে সত্যিই ভালো অনুভব করছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে রিয়ালের সবচেয়ে কম সমস্যা হলো গোলকিপিং।’

কিলিয়ান এমবাপে (ফ্রান্স)
রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার সম্ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করতা সর্বশেষ খেলোয়াড় হলেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে এর আগেও ২০১৭ সালে প্রথমবার এমবাপের জন্য মোনাকোর কাছে ধরণা দিয়েছিল মাদ্রিদ। তবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে স্বদেশের পিএসজিতে যোগ দেন তিনি।

এমবাপে বলেন, ‘আমি অনুভব করেছি যে রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে পিএসজিতে আমার খেলার সুযোগ বেশি হবে।’

প্যাট্রিক ভিয়েরা (ফ্রান্স)
২০০৪ সালে ভিয়েরা আর্সেনালকে লিগ শিরোপা এনে দেওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদের তার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু শেষ সময়ে নিজের মত বদলে ফেলেন ফ্রান্সের কিংবদন্তি মিডফিল্ডার।

ভিয়েরা বলেন, ‘আমি সত্যিই মাদ্রিদে চলে যাওয়ার কাছাকাছি ছিলাম। এই চুক্তিটি দুটি ক্লাবের মধ্যে হয়েছিল। তাই যখন আমার চলে যাওয়ার সময় হয়েছিল, আমি আমার মন পরিবর্তন করেছিলাম। কারণ আমি আর্সেনালে থাকতে ও আমার ক্যারিয়ার শেষ করতে চেয়েছিলাম।’

লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
২০১৪ সালে সুয়ারেজ যখন লিভারপুলের হয়ে খেলছিলেন, তখন সেই সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন। স্পষ্টতই, রিয়াল মাদ্রিদ তাকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সুয়ারেজ বার্সেলোনায় যাওয়ার জন্য তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

এ নিয়ে সুয়ারেজ বলেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ আমার প্রতি খুব আগ্রহী ছিল, কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল বার্সার হয়ে খেলা। যখন আমি 'বার্সেলোনা' নামটি শুনি, তখন আমি এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করিনি।’

মার্কো ভেরাত্তি (ইতালি)
মার্কো ভেরাত্তি পিএসজিতে থাকাকালীন ২০১৬ সালে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি পিএসজিতে থাকার পক্ষে ছিলেন।

ভেরাত্তি বলেন, ‘মাদ্রিদ? আমার প্রতি তাদের আগ্রহ ভালো ছিল। কিন্তু আমি জানিয়েছিলাম আমি অন্যের সাথে আলোচনা করতে চাই না। আমি পিএসজির হয়ে কিছু জিততে চাই।’

স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

চেলসির জন্য টুখেলের নজরে ৯ ইংলিশ তরুণ

চেলসির জন্য টুখেলের নজরে ৯ ইংলিশ তরুণ

গার্দিওয়ালার ‘বিখ্যাত’ দশ উক্তি

গার্দিওয়ালার ‘বিখ্যাত’ দশ উক্তি

অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস: অস্ট্রেলিয়ার আরেক নায়কের চিরবিদায়

অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস: অস্ট্রেলিয়ার আরেক নায়কের চিরবিদায়

২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান তারকাদের গল্প

২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান তারকাদের গল্প