কঠিন গ্রুপে পিএসজি, বায়ার্নের প্রতিপক্ষ ইউনাইটেড

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৭:০১ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
কঠিন গ্রুপে পিএসজি, বায়ার্নের প্রতিপক্ষ ইউনাইটেড

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একটি শিরোপার জন্য বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকে। রেকর্ড পরিমান অর্থ দিয়ে নেইমারের পর লিওনেল মেসিকে দলে নিয়ে সফল হতে পারেনি ফরাসি জায়ান্টরা। মোনাকো থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে লক্ষ্য করেই দলে ভিড়িয়েছিল। তবে ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ শিরোপাটা অধরাই থেকে গেছে।

সেই পিএসজির জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবারের মৌসুমও খুব একটা সুখবর দিতে পারবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে। বৃহস্পতিবার মোনকোতে অনুষ্ঠিত নতুন মৌসুমের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুযায়ী সবচেয়ে কঠিন গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত, হওয়া এফ’গ্রুপে খেলবে পিএসজি। গ্রুপে পিএসজির প্রতিপক্ষ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, এসি মিলান ও নিউক্যাসল।

অন্যদিকে হ্যারি কেনের বায়ার্ন মিউনিখ লড়বে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে । গ্রুপ-এ থেকে অবশ্য ফেবারিট হিসেবে এই দুটি দলকেই ধরে নেয়া হয়েছে। গ্রুপের অপর দুই দল এফসি কোপেনহেগেন ও টার্কিশ চ্যাম্পিয়ন গ্যালাতাসারে। বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়ন ও ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটির দ্বৈরথ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফাইনালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে।

১৯৯৯ সালের ফাইনালে শেষ মুহূর্তে গোলে ম্যাচে ফিরে এসে ২-১ গোলের জয় নিশ্চিত করেছিল ইউনাইটেড। সম্প্রতি টটেনহ্যাম হটস্পার থেকে জার্মানীতে খেলতে যাওয়া ইংলিশ অধিনায়ক কেন ড্রয়ের পর টুইটারে গ্রুপের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।’

গ্রুপ-এফ’এ তিন লিগের অন্যতম শীর্ষ তিন জায়ান্টের সাথে ২০ বছর পর প্রথমবারের মত খেলতে আসা নিউক্যাসলও যে সমান তালে লড়াই চালিয়ে যাবে তা তারা গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগেই প্রমান দিয়েছে। চার দলের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোন দল টিকে থাকবে, কিংবা কে ফেবারিট তা আগে থেকে বলা মুশকিল। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে শেষ পর্যন্ত দলে ধরে রাখতে পেরে নক আউট পর্বে যাবার ব্যপারে আশাবাদী পিএসজি।

অন্যদিকে, ডর্টমুন্ড ও গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট মিলানকে টপকে পরের রাউন্ডে যেতে চায় প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল। ডর্টমুন্ড সভাপতি হ্যান্স-জোয়াকিম ওয়াজকে স্কাই জার্মানীকে বলেছেন, ‘এটা সত্যিই কঠিন একটি গ্রুপ। এ ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরাও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত। আশা করছি বিশেষ কিছু নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।’

গত মৌসুমে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তোলা ম্যানচেস্টা সিটি গ্রুপ পর্বে খুব একটা কঠিন কোন প্রতিপক্ষকে পাচ্ছেনা। আরবি লিপজিগ, রেড স্টার বেলগ্রেড ও ইয়ং বয়েজের বিপক্ষে গ্রুপ-জি থেকে সহজেই পরের রাউন্ডে ওঠা সিটির জন্য এখন সময়ের ব্যপার। সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন দলগুলোকে বড় হারের স্বাদ দিতে চায় পেপ গার্দিওলার দল। গত মৌসুমে লিপজিগকে শেষ ১৬’তে দুই লেগ মিলিয়ে ৮-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল সিটিজেনরা।

২০১৬/১৭ মৌসুমের পর প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্সস লিগে ফিরে আসা আর্সেনাল গ্রুপ-বি’তে মোকাবেলা করবে ইউরোপা লিগ বিজয়ী সেভিয়া, ১৯৮৮ ইউরোপীয়ান কাপ বিজয়ী পিএসভি আইনডোভেন ও ফরাসি ক্লাব লেন্সের। প্লে-অপে রেঞ্জার্সকে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৩ ব্যবধানে পরাজিত করে গ্রুপ পর্ব নিশ্চিত করেছে পিএসভি।

অন্যদিকে, দুই দশক পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমবারের মত খেলতে যাচ্ছে লেন্স। ১৯৯৮ সালে ফরাসি দলটি ওয়েম্বলিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে গানার্সদের ১-০ গোলে পরাজিত করেছিল। পরের মৌসুমে উয়েফা কাপ সেমিফাইনালে লেন্সকে পরাজিত করেছিল আর্সেনাল।

১৪ বারের রেকর্ড শিরোপাধারী রিয়াল মাদ্রিদ গ্রুপ-সি’তে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন নাপোলি, পর্তুগালের ব্রাগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমবারের মত খেলতে আসা ইউনিয়ন বার্লিনের মোকাবেলা করবে। মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ১৮ মাস নাপোলির কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দলের মধ্যে মোকাবেলা খুব কমই হয়েছে। ১৯৮৭ সালে ইউরোপীয়ান কাপের প্রথম রাউন্ডে দিয়েগো ম্যারাডোনার নাপোলিকে পরাজিত করেছিল রিয়াল।

গ্রুপ-এইচ’এ বর্তমান স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার প্রতিপক্ষ পোর্তো শাখতার দোনেস্কৎ, বেলজিয়ান ক্লাব রয়্যাল এ্যান্টওয়ার্প। এর আগে একবারই ১৯৫৭/৫৮ মৌসুমে ইউরোপীয়ান শীর্ষ এই ক্লাব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বেলজিয়ামের ক্লাবটি। ঐ আসরে প্রথম রাউন্ডে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে পরাজিত হয়েছিল। ইউক্রেনিয়ান চ্যাম্পিয়ন শাখতার এ বছর হোম ম্যাচগুলো জার্মান শহর হামবুর্গে খেলবে।

গত মৌসুমের রানার্স-আপ ইন্টার মিলান গ্রুপ-ডি’তে লড়বে পর্তুগীজ চ্যাম্পিয়ন্স বেনফিকা, রেড বুল সালজবার্গ ও রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে।

গ্রুপ-ই’তে স্কটিশ চ্যাম্পিয়ন সেল্টিকের প্রতিপক্ষ ফেয়েনুর্ড, এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ও ল্যাজিও। ডাচ চ্যাম্পিয়ন ফেয়েনুর্ড ১৯৭০ সালে ইউরোপীয়ান কাপ ফাইনালে সেল্টিককে পরাজিত করেছিল।

১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর গ্রুপ পর্বে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ ডিসেম্বর গ্রুপ পর্ব শেষ হবে। বর্তমান ফর্মেটে এটাই গ্রুপ পর্বের শেষ মৌসুম। দুই দশক ধরে এই একই ফর্মেটে খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগামী বছর উয়েফা গ্রুপ পর্বে দলসংখ্যা বাড়িয়ে ৩২টির পরিবর্তে ৩৬টি করতে যাচ্ছে। নতুন ফর্মেটে প্রতিটি ক্লাব আটটি করে ম্যাচ খেলবে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের ড্র :
গ্রুপ-এ : বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এফসি কোপেনহেগেন, গ্যালাতাসারে
গ্রুপ-বি : সেভিয়া, আর্সেনাল, পিএসভি আইনডোভেন, লেন্স
গ্রুপ-সি : নাপোলি, রিয়াল মাদ্রিদ, ব্রাগা, ইউনিয়ন বার্লিন
গ্রুপ-ডি : বেনফিকা, ইন্টার মিলান, সালজবার্গ, রিয়াল সোসিয়েদাদ

গ্রুপ-ই : ফেয়েনুর্ড, এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, ল্যাজিও, সেল্টিক
গ্রুপ-এফ : পিএসজি, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, এসি মিলান, নিউক্যাসল
গ্রুপ-জি : ম্যানচেস্টার সিটি, আরবি লিপজিগ, রেড স্টার বেলগেড্র, ইয়ং বয়েজ
গ্রুপ-এইচ : বার্সেলোনা, পোর্তো, শাখতার দোনেস্কৎ , রয়্যাল এন্টাওয়ার্প

প্রথম রাউন্ড : ১৯-২০ সেপ্টেম্বর
দ্বিতীয় রাউন্ড : ৩-৪ অক্টোবর
তৃতীয় রাউন্ড : ২৪-৪৫ অক্টোবর
চতুর্থ রাউন্ড : ৭-৮ নভেম্বর

পঞ্চম রাউন্ড : ২৮-২৯ নভেম্বর
ষষ্ঠ রাউন্ড : ১২-১৩ ডিসেম্বর।


শেয়ার করুন :