স্বল্প পুঁজিতেও জেগেছিল আশা, পারলো না বাংলাদেশ

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ০১ মার্চ ২০২৩
স্বল্প পুঁজিতেও জেগেছিল আশা, পারলো না বাংলাদেশ

প্রথমে ব্যাট করে ভালো একটি স্কোর গড়তে পারেননি টাইগার ব্যাটাররা। তবে বল হাতে বেশ ভালোভাবেই লড়াই করলো তাইজুল-মিরাজরা। একটা সময় জয়ের আশাও জেগেছিল, তবে ইংলিশ ব্যাটার ডেভিড মালানের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে সে পথে আর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের তিক্ত স্বাদে সিরিজে পিছিয়ে পড়লো টাইগাররা।

বুধবার (১ মার্চ) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে তামিমের সিদ্ধান্তকে যথাযতভাবে কাজে লাগতে পারেননি ব্যাটাররা।

ব্যাট করতে নেমে ৪৭.২ ওভারে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যাট হাতে নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটি এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৩১ রান ছাড়া বাকিরা বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০৯ রান।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ডেভিড মালানের সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সফরকারী ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।

লিটন দাসকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন তামিম। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ দিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান তামিম। ইংল্যান্ডের আরেক পেসার জোফরা আর্চারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দু’টি ও চতুর্থ ওভারে ফ্রি-হিটে ১টি বাউন্ডারি মারেন তামিম। ৪ ওভারের মধ্যে তামিমের ব্যাট থেকে ৩টি চার এলেও অন্যপ্রান্তে সাবধানী ছিলেন লিটন। ১০ম বলে রানের খাতা খুলেন তিনি।

পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে পুল করে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন। ওকসের করা পরের ডেলিভারিতেই লেগ বিফোর আউট হন লিটন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ১৫ বলে ৭ রান করেন লিটন। দলীয় ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন সর্বশেষ বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ১২ বলের মধ্যে ৩টি চার মারেন শান্ত। এরপর ১০ম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই তামিমকে বিদায় করেন ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। ৪টি চারে ৩২ বলে ২৩ রান করেন তামিম।

৫১ রানে তামিমকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। ১৭তম ওভারে ফিল সল্টের ভুলে জীবন পান মুশি। জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ২০তম ওভারে আরেক স্পিনার আদিল রশিদের চতুর্থ বলে স্লগে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে উডকে ক্যাচ দেন ৩৪ বলে ১৬ রান করা মুশি। শান্তর সাথে ৬২ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়তে পারেন মুশফিক।

মুশফিকের বিদায়ে পাঁচ নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান সুবিধা করতে পারেননি। মঈনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট-বলে স্পর্শ করাতে না পারায় সরাসরি বোল্ড হন ১২ বলে ১টি চারে ৮ রান করা সাকিব। ১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

দলকে চাপমুক্ত করতে বড় জুটির চেষ্টা করেন শান্ত ও ছয় নম্বরে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে ১৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত। এ জন্য ৬৭ বল খেলেন তিনি।

৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান দেড়শ পার করে দলকে খেলায় ফেরান শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে রশিদের বলে লেগ সাইড দিয়ে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে জেসন রয়ের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেয়ার আগে ৬টি চারে ৮২ বল খেলে ৫৮ রান করেন শান্ত। মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটিতে ৫৩ রান যোগ করেন শান্ত।

শান্তকে অনুসরণ করে পরের ওভারেই বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। পর পর দুই ওভারে দুই সেট ব্যাটার হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৬২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় টাইগাররা। টেল-এন্ডারে বাংলাদেশের দুই ভরসা আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজও দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।

আফিফকে ৯ রানে বিদায় দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অকেশনাল স্পিনার উইল জ্যাকস। মিরাজকে ৭ রানে থামান আর্চার। ১৮২ রানে অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। এতে ২শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। তবে সেটি হতে দেননি তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে ২৫ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ২শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ।

৪৭তম ওভারে তাসকিনকে ১৪ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙেন আর্চার। ১৮ বল খেলে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তাসকিন। পরের ওভারে মঈনের বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ১৩ বলে ১০ রান করেন তাইজুল। ৪৭.২ ওভারে ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের আর্চার-উড-মঈন ও রশিদ ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে শিকার করেন ওকস ও জ্যাকস।

২১০ রানের টার্গেট দিয়ে শুরুতেই বল হাতে সাকিবকে আক্রমণে আনলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম। ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মারেন ইংল্যান্ডের ওপেনার জেসন রয়। তবে শেষ বলে রয়কে ফেরান সাকিব। মিড তামিমের সহজ ক্যাচে আউট হন ৬ বলে ৪ রান করা রয়।

শুরুর ধাক্কা সামলে ৩১ রানের জুটি গড়ে আরেক ওপেনার ফিল সল্ট ও ডেভিড মালান। নবম ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রমণে এসেই সল্ট ও মালান জুটি ভাঙেন স্পিনার তাইজুল। ১২ রান করা সল্টকে বোল্ড করেন তাইজুল।

নিজের চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পান তাইজুল। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউট হন ৬ রান রান করা জেমস ভিন্স। ১৩তম ওভারে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। এ অবস্থায় ইংল্যান্ডের চাপ বাড়িয়ে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থায় রাখেন পেসার তাসকিন।

তাসকিনের দারুণ এক ডেলিভারিতে স্লিপে শান্তকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইংল্যান্ডের দলনেতা বাটলার (৯)। দলীয় ৬৫ রানে বাটলারকে হারানোর পর তিন নম্বরে নামা ডেভিড মালান ও জ্যাকস সাবধানে খেলে দলের স্কোর ১শ স্পর্শ করেন। এ জুটি ভাঙতে বোলিংয়ে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করেন তামিম। অবশেষে ২৬তম ওভারে মালান-জ্যাকস জুটি বিচ্ছিন্ন করেন মিরাজ। পঞ্চম উইকেটে ৫৭ বলে ৩৮ রান যোগ করেন মালান-জ্যাকস। ১০৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে মঈনকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন উইকেটে সেট ব্যাটার মালান। ৩২তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন মালান। এ জন্য ৯২ বল খেলেছেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির পর চড়াও হন মালান। মিরাজের করা ৩৩তম ওভারে ১টি করে চার-ছয় মারেন মালান।

ওই ওভারে ১২ রান দেন মিরাজ। তারপরও মিরাজের উপর আস্থা রাখেন তামিম। ৩৫তম ওভারের শেষ বলে মঈনের উইকেট উপড়ে ফেলেন মিরাজ। ৩২ বলে ১৪ রান করেন মঈন। এরপর আট নম্বরে নামা ওকসকে ৭ রানে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন তাইজুল। ফলে শেষ ১০ ওভারে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৪ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের।

এ অবস্থায় ক্রিজে মালানের সঙ্গী হন রশিদ। ৪৬তম ওভারে তাসকিনের তৃতীয় বলে চার মেরে ১৬তম ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মালান। তিন অংকে পা রাখতে ১৩৪ বল খেলেন মালান। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।

৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৪৫ বলে অপরাজিত ১১৪ রান করে ম্যাচ সেরা হন মালান। ১টি চারে ২৯ বলে অপরাজিত ১৭ রান করেন রশিদ। অষ্টম উইকেটে ৫৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রান যোগ করেন মালান-রশিদ জুটি।

বাংলাদেশের তাইজুল ৩টি, মিরাজ ২টি ও সাকিব-তাসকিন ১টি করে উইকেট নেন।

স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

সাকিবের বলে ক্যাচ নিলেন তামিম

সাকিবের বলে ক্যাচ নিলেন তামিম

‘বাংলাদেশ ফেভারিট, আমরাও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’

‘বাংলাদেশ ফেভারিট, আমরাও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’

‘পেশাদার জায়গায় ভালো বন্ধুর দরকার নেই’

‘পেশাদার জায়গায় ভালো বন্ধুর দরকার নেই’

শান্তর প্রথম হাফ সেঞ্চুরি

শান্তর প্রথম হাফ সেঞ্চুরি