স্পোর্টসমেইল২৪
প্রবাদ আছে ‘পচা শামুকেও পা কাটে’, শ্রীলঙ্কার জন্য সেটি আবারও প্রমাণ হলো। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন থেকে অনেক আগেই বাদ পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে গেল শ্রীলঙ্কা। এটা শুধু হার নয়, এ হারে শ্রীলঙ্কারও সেমিফাইনালের খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকার বোরিং তোপে মাত্র ২০৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ২০৪ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৭৬ বল হাতে রেখেই ২০৬ রান তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর আগে ৭ ম্যাচ খেলে মাত্র ৩ পয়েন্ট অর্জন করা দক্ষিণ আফ্রিকা শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয় ৯ উইকেটে। এ জয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট অর্জন করে তালিকার ৮ নম্বরে উঠেছে। অন্যদিকে ৭ নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কা ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ৭ নম্বরেই থাকলো। একই সঙ্গে শেষ চারে খেলার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার।
সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হওয়ায় নিয়মরক্ষার ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুক্রবার (২৮ জুন) চেস্টার-লি-স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত ম্যাচে খেলতে নেমেই ইনিংসের প্রথম বলেই শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকে শূন্য হাতে বিদায় দেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা। ফলে শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা।
ধাক্কা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা ভুলিয়ে দেন শ্রীলঙ্কার আরেক ওপেনার উইকেটরক্ষক কুশল পেরেরা ও তিন নম্বরে নামা আবিস্কা ফার্নান্দো। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিপক্ষে মারমুখী ব্যাট চালান পেরেরা ও ফার্নান্দো। ফলে শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারিয়েও ৯ ওভারে ৫৭ রান পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
দলীয় ১৮৪ রানে থিসারা নামের পাশে ২১ রান রেখে ফিরলে লঙ্কানদের ২শ স্কোর করার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তবে শ্রীলঙ্কার টেল-এন্ডাররা ঠিকই শ্রীলঙ্কার স্কোর ২শ অতিক্রম করান। উদানার ১৭, সুরাঙ্গা লাকমলের অপরাজিত ৫ ও লাসিথ মালিঙ্গার ৪ রানে ২শ পেরিয়ে অলআউট হয় শ্রীলংকা।
৩ বল বাকি থাকতে অলআউট হওয়ার আগে ২০৩ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ আফ্রিকার মরিস-প্রিটোরিয়াস ৩টি করে উইকেট নেন।
২০৪ রানের সহজ টার্গেটে ভালো শুরু করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকাও। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ পেসার লাসিথ মালিঙ্গার দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড হন প্রোটিয়ারা ওপেনার কুইন্টন ডি কক। ৩টি চারে ১৬ বলে ১৫ রান করেন তিনি।
ডি কককেও হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে শ্রীলঙ্কার বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন আরেক ওপেনার হাশিম আমলা ও অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিস। বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। তাতে কেবল সফলই হননি তারা, ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই দলীয় স্কোর শতরানে নিয়ে যান আমলা-ডু-প্লেসিস। আর ২৮ দশমিক ১ ওভারে দলের স্কোর দেড়শ স্পর্শ করান তারা।
এ সময় দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। আমলা ৩৯তম ও ডু-প্লেসিস ৩৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। ফলে আমলা-ডু প্লেসিসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সহজ জয়ের পথেই হাটতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত তাই-ই হয়েছে। ৭৬ বল বাকি রেখেই জয়ের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
৫টি চারে ১০৫ বলে আমলা অপরাজিত ৮০ ও ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৩ বলে ডু-প্লেসিস অপরাজিত ৯৬ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পতন হওয়া একমাত্র উইকেটটি নেন শ্রীলঙ্কার মালিঙ্গা।
এদিকে ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদশ, পাকিস্তানের সঙ্গে সেমির সম্ভাবনার পথে ঠিকে রইলেও তা খুবই কঠিন। কারণ, সেখানে ৭ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ৭ পয়েন্ট নিয়ে সেমির পথে রয়েছে সেখানে এক পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে কতটা সম্ভব সেটাই এখন বড় বিষয়।
এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বাকি দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ হলো ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই দুই ম্যাচে জয় পেলেও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়াবে ১০ এ। যেখানে দুই ম্যাচ হাতে নিয়ে ৭ পয়েন্টে সেমির দৌড়ে রয়েছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান। এছাড়া ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট অর্জন করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড রয়েছে ৪ নম্বরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ২০৩/১০, ৪৯.৩ ওভার (কুশল পেরেরা ৩০, ফার্নান্দো ৩০, ডি সিলভা ২৪, কুশল মেন্ডিস ২৩, প্রিটোরিয়াস ৩/২৫, মরিস ৩/৪৬)
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২০৬/১, ৩৭.২ ওভার (ডু-প্লেসিস ৯৬*, আমলা ৮০*, মালিঙ্গা ১/৪৭)
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
