কাতার বিশ্বকাপে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’

আরিফুল হক বিজয় আরিফুল হক বিজয় প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২২
কাতার বিশ্বকাপে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’

বাংলাদেশ থেকে কাতারের দূরত্ব কয়েক হাজার মাইল। স্বাভাবিকভাবেই কাতারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটাও বেশ দূরত্বের। তবে একটা জায়াগায় সেই দূরত্বে একদম শূন্যতে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। অবাক হলেও সত্যি, বাংলাদেশের তৈরী পোশাকে মাতবে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের ২০২২ সালের আসর। এই আসরের লাখখানেক টি-শার্টের পিছনের দিকটায় স্টিকারে লেখা থাকবে’ মেইড ইন বাংলাদেশ’।

ফুটবলের ইতিহাসে বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’। এই আসরকে ঘিরে পৃথিবীর বুকে অজস্র সীমান্তের লক্ষ কোটি মানুষ মেতে ওঠে উল্লাসে। বাংলাদেশও তার একটি। অথচ কখনো এই আসরের ধারেকাছেও ঘেষতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল দল। বাঙ্গালীর এই একটা আক্ষেপ থেকে গেলেও এবার তার কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে পেতেই পারে। পরভূমে নিজ দেশের নাম দেখতে পাওয়ার সান্ত্বনা।

কাতারের এই মহামঞ্চের জন্য ফিফা থেকে ৬ লাখ টি-শার্টের অর্দার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বন্দরনগরী খ্যাত চট্টগ্রামের একটি পোশাক তৈরী প্রতিষ্ঠান এই বিশাল পরিমান টি-শার্টের অর্ডার পেয়েছে। এই টি-শার্ট পরেই ফিফার অফিসিয়াল কর্মীরা ঘুরে বেড়াবেন বিশ্বকাপের এক ভেন্য থেকে আরেক ভেন্যূতে।

শুধু ফিফার কর্মীরাই নয়, এই টি-শার্ট শোভা পাবে খেলা দেখতে আসা অনেক দেশের ভক্তদের গায়েও। ইতোমধ্যে এই বিশাল পরিমাণ পোশাক তৈরীতে রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করেছে কারখানার শ্রমিকরা। এতো পরিমাণ পোশাক প্রস্তুত করেও তাদের ক্লান্তি নেই। বিশ্বের বুকে তারা যে বাংলাদেশের নাম দেখতে চায়।

ফিফার এই টি-শার্টগুলো তৈরীর দায়িত্ব পেয়েছে চটগ্রাম নগরের ফকিরহাট গোসাইলডাঙ্গায় সনেট টেক্সটাইল। ২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ৬ লাখ পিস টি-শার্ট তৈরির আদেশ দেয় রাশিয়ার বিখ্যাত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান স্পোর্টমাস্টার। তার কাতার বিশ্বকাপের পোশাকের অফিসিয়াল পার্টনারের দায়িত্ব পেয়েছে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো এমন একটি আসরের জন্য পোশাক বানাতে পারাটা দেশের জন্য গৌরবের বলে মতামত দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এর আগে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য সাড়ে ৪ লাখ পিস জ্যাকেট এবং ২০ সালে ইউরো কাপের ৪ লাখ টি-শার্ট তৈরির কাজ পায় চট্টগ্রামের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্বকাপের মতো একটি মহাযজ্ঞের অংশ হতে পেরে সনেট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও বিকেএমইএর পরিচালক গাজী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘তিন লাখ টি-শার্ট পাঠানো হয়েছে। আরও তিন লাখ টি-শার্ট রপ্তানির অপেক্ষায় আছে। এর আগেও রাশিয়া বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপের টি-শার্ট আমরা করেছিলাম। বিশ্বের বড় একটি ইভেন্টের টি-শার্ট তৈরি করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

এই টি শার্টগুলোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দেশীয় ফেব্রিক্স আর সুতা। বিভিন্ন বয়সীদের জন্য পাঁচ ধরনের টি-শার্ট বানানো হচ্ছে।। দেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে পরম মমতায় বিশেষ এসব পোষাক তৈরি করছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। শ্রমিকরা বলেন, ‘চার বছর পরপর বিশ্বকাপ খেলা হয়। আর তখন আমাদের তৈরি জার্সিগুলো তারা পরবে, এটা ভাবতে অনেক ভালো লাগা কাজ করেছে। আমাদের অনেক গর্ব হচ্ছে।’

পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই বিভিন্ন ডিজাইন, সাইজ ও রঙের টি-শার্ট তৈরি করা হচ্ছে। টি-শার্টে ‘ফিফা বিশ্বকাপ কাতার ২০২২’, ‘ফুটবল ইজ অ্যামেজিং’ এবং ‘প্লে’ লেখা সহ স্টেডিয়ামের ছবির স্কেচ রয়েছে।

সনেট টেক্সটাইলের কাটিং ম্যানেজার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ফিফার অফিসিয়াল টি-শার্টে মেড ইন বাংলাদেশ লেখা আছে এবং এটা আমাদের দেশের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হতে পেরে আনন্দিত এবং কাটিং থেকে প্যাকেজিং পর্যন্ত সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য কাজ করছি।’

বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ না থাকুক, বাংলাদেশের পতাকার ধারক তো থাকছে। আরও থাকছে দেশের গৌরবের বিষয়। কাতারের মহামঞ্চে নানান জাতির গায়ে শোভা পাবে বাংলাদেশের এক টুকরো গৌরব। টি-শার্টের পেছন দিকটায় আপন মহিমায় জ্বলজ্বল করবে একটি ট্যাগ, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’।

স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

৬৮ বছরের ইতিহাস ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ড

৬৮ বছরের ইতিহাস ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ড

মেসি থেকে রোনালদো, কাতারে শীর্ষ ২০ ফুটবলারের ‌‘শেষ’ বিশ্বকাপ

মেসি থেকে রোনালদো, কাতারে শীর্ষ ২০ ফুটবলারের ‌‘শেষ’ বিশ্বকাপ

দশ বিস্ময় কিশোর, কাতার বিশ্বকাপ আলোকিত করতে পারেন যারা

দশ বিস্ময় কিশোর, কাতার বিশ্বকাপ আলোকিত করতে পারেন যারা

কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর ‘আশার আলো’ পাঁচ তারকা

কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর ‘আশার আলো’ পাঁচ তারকা