আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের আগে মুশফিকুর রহিম সর্বশেষ কবে দারুণ ইনিংস খেলেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রিকেট সমর্থকদের মাথার ঘাম পায়ে পড়ার অভিপ্রায় হবে। কারণ, টি-টোয়েন্টিতে মুশফিক যে কখনই ঠিক ছন্দে ছিলেন না। টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে বারবারই উঠেছে প্রশ্ন। তবুও সিনিয়র কিংবা অজানা কারণে বারবারই টি-টোয়েন্টিতে জায়গা পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত জায়গাটা আর ধরে রাখতে পারেননি, ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণকে ঠিকই বিদায় বলেছেন এই ক্রিকেটার।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম ভরসা মুশফিকুর রহিম। টেস্ট-ওয়ানডেতে বহুবার দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছিলেন। হয়তো ভবিষ্যতেও তুলবেন। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ওয়ানডে-টেস্টের সেই সুনাম ধরে রাখার মতো ‘কিছুই’ করতে পারেননি মুশফিক সেটা অন্তত নির্দ্বিধায় বলাই যায়।
২০০৬ সালে বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি অভিষেক ম্যাচেই এই ফরম্যাটে যাত্রা শুরু মুশফিকের। অভিষেক ম্যাচে খেলা সর্বশেষ ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে বিদায় বলেছেন মুশফিক। ওই ম্যাচে খেলা মুশফিকের বাকি সতীর্থদের বেশিরভাগই বিদায় জানিয়েছেন পেশাদার ক্রিকেটকে। বাকি যারা এখনো ক্রিকেট খেলছেন, তাদের কেউই আর নেই জাতীয় দলের রাডারে।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে টি-টোয়েন্টি জার্সি তুলে রাখার ঘোষণা দেন মুশফিকুর রহিম। এর আগে বিশ্রামের ছলে এই ফরম্যাট থেকে বাদ পড়া মুশফিক ফিরেছিলেন এশিয়া কাপে। সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় দফায় অধিনায়কত্বের শুরুতেই মুশফিককে ফিরিয়েছিলেন। অধিনায়কের আস্থার পূর্ণ প্রতিদান দিতে পারেননি। গুঞ্জন ছিল, বাদ পড়তে পারেন টি-টোয়েন্টি দল থেকে। তবে এর আগেই বিদায় বলে দিয়েছেন মুশফিক।
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১০২ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। ৯৩ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১৫ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫০০ রান। তার ব্যাটিং গড়ও খুব একটা খেলোয়াড় সুলভ নন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এই রান করেছেন মাত্র ১৯.৪৮ গড়ে।
৯৩ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়া মুশফিক রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেছিলেন ৮ বার। আর পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন মোটে ৬ বার। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পেতে তার অপেক্ষাটা ছিল ৭ বছর। অভিষেকের ৭ বছর পর ২০১৩ সালে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে দেখা পেয়েছিলেন প্রথম হাফ সেঞ্চুরির।
ওই বছরই শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত নিদাহাস ট্রফিতে খেলেছিলেন দারুণ দুই ইনিংস। এর আগে অবশ্য সবসময় তাকে বিবেচনা করা হতো গড়পড়তা মানের ক্রিকেটার হিসেবে। ওই দুই ইনিংসই তাকে করে দিয়েছিল টি-টোয়েন্টি দলের সঙ্গী। তবে রাখতে পারেননি পারফর্মেন্সের ওই ধারাবাহিকতা।
২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচে খেলেছিলেন ৭২ রানের ইনিংস। দুই ম্যাচেই অপরাজিত ছিলেন। সেখানে দেখিয়েছিলেন তাকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কার্যকর মনে না করার মতো নন। বরং, সুযোগ পেলে প্রমাণ করতে পারেন।
পরের বছরও নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন ভারতের মাটিতে। ওই বছরে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষীয় সিরিজে ভারতে খেলার সুযোগ মেলে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে হারাতেও অবদান রেখেছিলেন মুশফিক। ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৪৩ রানে করেছিলেন অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস।
২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার ২৯ বলে ৫০ রানে ভর করে নিউজিল্যান্ডকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষদিকে মুশফিকের ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারায় জয় বঞ্চিত ছিল টাইগাররা।
টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকের উল্লেখ্যযোগ্য এই কয়েকটি ইনিংসের বাইরে নেই বলার মতো কোনো সাফল্য। বাকি ম্যাচগুলোতে খালিই উপহার দিয়েছেন ব্যর্থতা। বিশেষ করে ক্যারিয়ারের শেষদিকে ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং কোনো জায়গাতেই ছিলেন না নিজের সেই ছন্দে। বরং, হারিয়েছেন আস্থা। শেষ ১৫ ইনিংসে খেলেছিলেন মাত্র ৫বার পেরিয়েছিলেন দুই অঙ্কের কোটা। তাতেই জানান দেয় কতটুকু খারাপ অবস্থায় ছিলেন এই ক্রিকেটার।
নিজের সেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন, সেই ধারাটা বুঝতে পেরেছেন এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক। সেই বোঝার জায়গা থেকেই নিজ থেকেই বলে দিয়েছেন ‘বিদায়’। এবার তার পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন ওয়ানডে ও টেস্টে এটাই ক্রিকেট ভক্তকুলের চাওয়া।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর