বেদনার রঙ নাকি নীল! রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদাল কি জানেন এটা? হয়তো জানেন, হয়তো না! তবে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সেই নীল রঙের গেঞ্জি আর শর্টস পড়েই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন টেনিস কিংবদন্তী সুইস তারকা রজার ফেদেরার।
ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে জুটি বাঁধলেন স্প্যানিশ টেনিস তারকা রাফায়লে নাদাল নামক ভদ্রলোকের সঙ্গে। যার সাথে ক্যারিয়ারের প্রায় অধিকাংশ সময় জুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন টেনিস কোর্টে। অথচ সেই চীরপ্রতিদ্বন্দ্বীকেই দেখা গেল ফেদেরারের বিদায়ী ম্যাচ শেষে সবচেয়ে বেশি চোখ ভেজাতে!
তখন সবে পেশাদার ক্যারিয়ারের বিদায়ী ম্যাচ শেষ হলো ফেদেরারের। নাদালের সঙ্গে জুটি বেধে হার দিয়েই শেষ করেছেন ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। প্রতিপক্ষ আনন্দ উল্লাসে মত্ত নেই, ফেদারের মুখে নেই ম্যাচ হারের হতাশা!
কোর্টে উপস্থিত থাকা নোভাক জকোভিচ, অ্যান্ডি মারেসহ বাকিদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। তবে সবার সাথে হাত মেলাতে মেলাতে এক পর্যায়ে আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না ফেদেরার। চোখ ভেঙে শুরু হলো অশ্রু বৃষ্টি। রীতিমতো ছোট বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদলেন।
পাশে বসা নাদালও পারলেন আর নিজেকে আটকে রাখতে। ক্যারিয়ার জুড়ে চীরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিদায়ে এমন কাকে কাঁদতে দেখেছিল বিশ্ব, কোনো খেলায় কি আদৌ এরকম দৃশ্য দেখা গিয়েছিল! হয়তো না!
২০০৫ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে ফেদেরারকে হারিয়ে ওই সময়ে বড়সড় অঘটনের জন্ম দিয়েছিলেন নাদাল। এই জয়েই টেনিস বিশ্বের পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন এই স্প্যানিশ।
Just an amazing sporting moment, thanks @rogerfederer for all those amazing moments https://t.co/Lzmuhm5fjz
— Sundar Pichai (@sundarpichai) September 24, 2022
এরপর ক্রমশ হয়ে উঠেছেন ফেদেরারের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্বী। সেখান থেকে বন্ধু হয়ে উঠতেও খুব একটা সমস্যা হয়নি টেনিসের দুই জীবন্ত কিংবদন্তীর।
ফেদেরারের টেনিস থেকে বিদায়ে জীবন থেকে একটা অধ্যায়ের শেষ হয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে নাদালের। বলেন, “আমাদের এই খেলার ইতিহাসে অনন্য এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও অবসান ঘটা।”
শুধু নাদাল অবশ্য নয়, লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় লেভার কাপের ম্যাচ খেলতে, দেখতে হাজির হাজির হওয়া প্রত্যেককেই কাল দেখা গেছে চোখ মুছতে। কেনই বা তারা চোখ থেকে অশ্রু ঝড়াবেন না, টেনিসের মহাকাশ থেকে ‘ফেদেরার’ নামক ধ্রুবতারা যে কালই খসে পড়েছে!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও কাল ছিল রজার ফেদেরারের দখলে। এই সুইস তারকার বিদায়ে পুরো ক্রীড়া বিশ্বের সকলেই কাল দুঃখে ভারাক্রান্ত হতে দেখা গেছে। কেনই বা হবেন না, রজার ফেদেরার তো আর কখনোই টেনিস হাতে কোর্টে নামবেন না। সেই বিখ্যাত ব্যাকহিল শটে মুগ্ধ করবেন না কাউকে!
অনেকটা সময় কাঁদার পর নিজেকে সামলিয়ে ফেদেরার বললেন এটা দুঃখের নয় বরং সুখের কান্না। সুইস টেনিস কিংবদন্তী বলেন, “আমি সুস্থ আছি, সুখে আছি, সবকিছু ভালোই চলছে । এটা তো একেবারে শেষও নয়! আপনি জানেন, জীবন নিজের গতিতেই বয়ে চলে!”
সে ফেদেরার যতই এটাকে আনন্দাশ্রু বলে চালাতে চান না কেন, সবাই জানে দুই যুগের বেশি সময় ধরে আধিপাত্য দেখিয়েছেন যেখানে সেটা ছেড়ে যতে ফেদেরারের হৃদয়ে ঠিক কতখানি রক্তখরণ হচ্ছে।
টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে বিশবার যে গ্রান্ডস্ল্যাম জয় করা যায় সেটা বিশ্ব দেখেছে ফেদেরারের হাত ধরে। সবচেয়ে বেশি সময় র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকার রেকর্ডও তার দখলে।
End of an Era..Take a bow Legend!????????#RogerFederer #GOAT???? #rogerfederer pic.twitter.com/TdZfBLdVfp
— Ankesh Dubey ???????? (@iAnkeshdubey) September 15, 2022
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালে টেনিস কোর্টে অভিষেক হয়েছিল ফেদারের। দুই যুগের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে নিজেকে নিয়ে গিয়েছে সত্যিকারের কিংবদন্তীদের কাতারে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৫২৭টি ম্যাচ। উইম্বলডনে রেকর্ড আট, ইউএস ওপেনে টানা পাঁচ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ছয় ও ফরাসি ওপেনে এক, সবমিলিয়ে এক কুড়ি গ্রান্ডস্ল্যাম জিতেই বিদায় নিলেন এই সুইস তারকা।
বয়স হয়ে গিয়েছিল ৪১, ইনজুরিটাও পিছু ছাড়ছিল না বেশ অনেকদিন ধরেই। ২০২১ সালে উইম্বলডনের সেমিফাইনালের পর হাটুঁর চোট তাকে আর টেনিস কোর্টেই নামতে দেয়নি।
হাঁটুর এই চোট অবশ্য নতুন নয়। এই চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করেই শেষ কিছুদিন মাঠে নেমেছেন। অবশেষে আর হলো না, বুঝে গেলেন বিদায়ের সময় হয়েছে।
'যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের এই অমোঘ বাণীটাই হয়তো শুক্রবার দিনগত রাত থেকে সমস্ত ফেদেরার ভক্তের মনে বেজেছে, হয়তো এখনো বেজে চলেছে।
বাজবেই না কেন! একদিকে যেমন বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পরীক্ষা। তেমনি ফেদেরারকে আর কোর্টে দেখতে না পারার বেদনা! সব মিলিয়ে দুঃখ ভারক্রান্ত অবস্থা সমস্ত ফেদেরার ভক্তের। নাহ, হয়তো শুধু ফেদেরার ভক্ত নয়, পুরো টেনিস ভক্তদেরই একই অবস্থা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি