লঙ্কানদের হাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে পাকিস্তানে

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৫:৩৭ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭
লঙ্কানদের হাতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে পাকিস্তানে

জঙ্গি হামলার শিকার হওয়া শ্রীলঙ্কা দলের হাত ধরেই আবারও পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে। ২০০৯ সালে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাছে শ্রীলঙ্কা দল বহনকারী বাসে হামলার পর থেকেই পাকিস্তানে নিষিদ্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।

দুই দলের মধ্যকার চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ফিরবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। আগামীকাল (রোববার) গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় ম্যাচকে সামনে রেখে আইন-শৃংখলা বাহিনীর দশ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োগ করবে পাকিস্তান।

জঙ্গি হামলা অব্যাহত থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে কোন কোন মহল শঙ্কা প্রকাশ করায় প্রধান কোচ নিক পোথাসসহ লঙ্কান দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা এ ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন না। তবে স্টেডিয়ামের ভেতরে-বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ২০০৯ সালের বন্দুক হামলায় বেঁচে যাওয়া তৎকালীন খেলোয়াড় ও বর্তমানে লংকান দলের ম্যানেজার ও ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করা আসাঙ্কা গুরুসিনহা এবং হাসান তিলকারত্নে দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফর করছেন।

রিজার্ভ আম্পায়ার হিসেবে ২০০৯ সালের ৩ মার্চ হামলায় আহত হওয়া পাকিস্তানের আহসান রাজাও আগামীকালের ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন। কাপুরুষোচিত সে হামলায় রাজার ফুসফুস ও যকৃতে তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের পর শেষ টি-টোয়েন্টিটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লাহোরে। অবশ্য গত মাসে একই ভেন্যুতে বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজও আয়োজন করেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

তালেবান জঙ্গিরা কর্মকর্তা বহনকারী বাস লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে চালককে মেরে ফেলার সময় আহত হয়েছিলেন রাজা। তবে আরেকটি বাসের চালক নায়োকোচিতভাবে বাসটি চালিয়ে সকলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি’কে রাজা বলেন, ‘লাহোরে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার এ ম্যাচে আম্পায়ারিং করাটা হবে দারুণ এক সম্মানের বিষয়। তারা (শ্রীলঙ্কা) অনেক বড় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পুনরুজ্জীবিত করতে এ ম্যাচটি অনেক বড় প্রভাব ফেলবে।’

রোববারের টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য বড় ধরনের সাহস নিয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং এটি পাকিস্তানের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ দেশের মাটিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট ধ্বংস হবার পথেই ছিল। এক হাজারের মত নিরাপত্তা কর্মীর নিয়োগ থাকবে স্টেডিয়ামে। নিরাপত্তার চাদরে পুরো স্টেডিয়াম ঢেকে ফেলা হবে। এছাড়া আকাশে হেলিকপ্টারে মহড়ার পাশাপাশি সর্বদা টিভিতে মনিটরিং করবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরও একটি ইউনিট।

এটিকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি। এ ঐতিহাসিক ম্যাচের সাক্ষী হবেন পাকিস্তান ক্রিকেটের ভক্তরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্টেডিয়ামগুলো খালি রাখা হয়েছে। আরও ভালো করার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন করা হবে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আগামী মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাকিস্তানে আনতে চাচ্ছে পিসিবি।

তবে এ সফরকে পুরোপুরি সমর্থন করেনি শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা। নিয়মিত অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা, লাসিথ মালিঙ্গা, নিরোশান ডিকবেলা, দুশমন্ত চামিরা এবং আকিলা ধনঞ্জয়া সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রধান কোচ দক্ষিণ আফ্রিকান পোথাস ছাড়া ফিজিওথেরাপিস্ট নির্মলন থানাবালাসিংগামও সফর বর্জন করেছেন।

সফর থেকে বিরত আছেন ২০০৯ সালের হামলায় আহত হওয়া সুরঙ্গা লাকমাল এবং চামারা কাপুগেদারাও। বিশ্ব একাদশের হয়ে গত মাসে লাহোরে খেলে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক থিসারা পেরেরা অবশ্য নিরাপত্তার আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন নিরাপত্তা বিষয়ে তার কোন শঙ্কা ছিল না।

এএফপি’কে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে সত্যিই আমি সন্তুষ্ট, সুতরাং সেখানে আমি কোন সমস্যা দেখছি না।’

শ্রীলঙ্কা দলের লাহোরে ফেরার সিদ্ধান্তে বেশ খুশি দর্শকরাও। রোববারের ম্যাচের টিকেট পেতে পুরো সপ্তাহ জুড়েই লড়াই করতে হলেও কোন কষ্ট অনুভব করছেন না দর্শকরা। লাহোরে বসবাসকারী এক মহিলা বলেন, ‘সত্যিই আমি অত্যন্ত খুশি কেন না আমি কেবল একার জন্য নয় পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও টিকেট কিনতে পেরেছি। তিনি বলেন নিজ মাটিতে দেশের খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে পারার অনুভুতিটাই আলাদা।’

২০০৯ সালে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে হামলার সময় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দেখতে যাওয়ার পথে ছিলেন পাকিস্তানের খেলা দেখতে বিশ্ব ঘুরে বেড়ানো ‘চাচা ক্রিকেট’ হিসেবে পরিচিত সুফি জলিল (জলিল চাচা)। শ্রীলঙ্কার সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে স্বাগতম। অতীতে যা কিছু ঘটেছে তা এখন ইতিহাস। এ ম্যাচ দিয়ে নতুন করে শুরু করবে এবং এ ব্যপারে আমরা সবাই ঔক্যবদ্ধ।’ -এএফপি


শেয়ার করুন :