দারিদ্রতা তাদের বড় বাঁধা

জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: ১২:৫২ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০২০
দারিদ্রতা তাদের বড় বাঁধা

কিছুদিন আগেও দেশের মেয়েদের খেলাকে বাঁকা চোখে দেখা হতো। তবে নিজেদের প্রতিভায় দেশ ও দেশের বাহিরে থেকে স্বর্ণ জয় করে পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করায় সেই ভুল ধারণার পরিবর্তন এসেছে। মেয়েদেরকে এখন এগিয়ে যেতে বিভিন্ন উৎসাহ জাগানো হচ্ছে। তবে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়েদের সাধ থাকলেও যেন সাধ্য নেই।

দারিদ্রতা আর নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মেয়েরা খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা একটু সহযোগিতা পেলে আরও ভালো করবে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

খেলার জন্য যেসব সরঞ্জামের প্রয়োজন তা তাদের নেই। ছেলেদের কাছ থেকে সরঞ্জাম চেয়ে নিয়ে নিত্যদিনে অনুশীলন করতে হচ্ছে তাদের। খেলার সরঞ্জাম ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তারা দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।

উপজেলার ইকরকুড়ি গ্রামের খুদে অ্যাথলেটিকস সুমাইয়া আক্তার (১৩)। ইকরকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির এ শিক্ষার্থী স্কুল পর্যায়ের খেলায় অংশ নিতেন। অল্প কিছুদিনের প্রশিক্ষণ করার সুবিধায় ২০১৯ সালে কুমিল্লা জেলায় লংজাম্পে পেয়েছিল গোল্ড মেডেল। তবে এরপর আর উচ্চতর প্রশিক্ষণ না পেয়ে ফিকে হয়ে যাচ্ছে সুমাইয়ার স্বপ্ন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুল থেকে জেলা পর্যায়ে খেলা হয়েছিল। একদিন জিল্লুর রহমান স্যার আমার পরিবার ও আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে প্রশিক্ষণ করাতে চান। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। আমরা দরিদ্র হওয়ায় তিনি ফ্রিতে অনুশীলন করাতে চাইলেন। স্যারের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৯ সালে কুমিল্লা জেলায় লংজাম্পে অংশ নিয়ে গোল্ড মেডেল পেয়েছি।’
sportsmail24
সুমাইয়া জানায়, অ্যাথলেটিকসের মধ্যে তার পছন্দ দৌড় এবং লংজাম্প। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা চালিয়ে যেতে চায় সে। তে প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না। বলেন, ‘এ মাসেই (নভেম্বর) ঢাকাতে জুনিয়র মিড খেলা হবে। এতে অংশ নেওয়ার জন্য অন্য জেলায় ক্যাম্পিং হয়। কিন্তু আমাদের এখানে কোন ক্যাম্পিং করানো হয় না। যদি ক্যাম্প করা হতো আমাদের জন্য ভালো হতো।’

একই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কণা। দিনমজুর বাবার তিন মেয়ের মাঝে কণা দ্বিতীয়। সান্তাহার মহিলা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বর্ষে মানবিক বিভাগে পড়াশুনা করছেন তিনি। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ফুটবল খেলায় আগ্রহ দেখায়। এরপর মাধ্যমিকে যাওয়ার পর স্কুলের শরীরচর্চা শিক্ষকের কাছে মেয়েদের জন্য ফুটবল ও ক্রিকেট খেলাধুলা হাতেখড়ি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল পর্যায়ে জেলায় বিজয়ী হওয়ার পর ২০১৯ সালে বিভাগে গিয়ে পরাজিত হয়।

কণা জানান, খেলাধুলার কারণে গ্রামের মানুষরা বিভিন্ন কথা বলতো। ক্ষোভের কারণে দুই মাস খেলা বন্ধ রাখি। পরে বাবা-মা আবারও উৎসাহ জোগায়। মানুষের কথায় তো আর নিজের স্বপ্নকে থেমে রাখতে পারি না। তবে গ্রামের মানুষরা এখন আর কিছু বলেন না। জিল্লুর রহমান স্যার আমার আগ্রহ দেখে তার প্রতিষ্ঠানে ফ্রিতে খেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি নিজেই আমাদের খেলা শেখান।
sportsmail24
তবে দরিদ্র পরিবারের নানা বাধা। কণা বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের কারণে পোশাক ও জুতাসহ খেলার সরঞ্জাম কেনা সম্ভব হয় না। ছেলেদের বল-ব্যাট নিয়ে প্র্যাকটিস করতে হয়। নিজের সরঞ্জাম থাকলে বেশি ভালো হতো। ভালো একজন ব্যাটসম্যান হয়ে ন্যাশনাল টিমে খেলার ইচ্ছা। জানি না সে স্বপ্ন কোন দিন পূরণ হবে কি-না।’

কণার মা কণক বলেন, ‘আগে তো গ্রামের মানুষ বিভিন্ন কটূ কথা বলতো। কিন্তু এখন আর কেউ কোন ধরনের কটূ কথা বলে না। বরং মেয়েদের তারা উৎসাহ দেয়। আমরা গরীব মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে। মেয়েকে খেলার উপকরণ কিনে দিতে পারি না। এছাড়া অনুশীলনের পর যে ধরনের খাবার দিতে হবে সেটাও দিতে পারি না।’

পার-নওগাঁ মহল্লার রওনক জাহান সেতু ২০১৯ সালে বিকেএসপিতে হকিতে চান্স পেয়েছিলেন। তবে পছন্দের তালিকায় ক্রিকেট থাকায় আর ভর্তি হননি। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে বিকেএসপিতে হকিতে চান্স পেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে যায়নি। কারণ, আমার পছন্দ ক্রিকেট। বিকেএসপি থেকে আবারও ফরম তুলেছি। এখন ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছি। জাতীয় নারী ক্রিকেট টিমে খেলার ইচ্ছে আছে।’

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের খেলার ইচ্ছা জেলার তিতাস অধিকারী। ছোট বেলা থেকেই যার নেশা ক্রিকেটের প্রতি। তিতাস অধিকারী বলেন, ‘ছোট থেকেই খেলার প্রতি খুবই দুর্বল আমি। ক্রিকেট খেলা আমার পছন্দ। জাতীয় নারী ক্রিকেট টিমে খেলার ইচ্ছা। জানি না আমার এ স্বপ্ন পূরণ হবে কি-না।’
sportsmail24
জেলার নারী খেলোয়াড়দের সম্পর্কে নওগাঁ বেসিক ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘জেলায় প্রমিলা কোন ক্লাব না থাকায় অনেক মেয়েরা খেলা শিখতে পারছে না। অনেকের স্বপ্ন থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব হয় না শুধুমাত্র অনুশীলনের অভাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে ছয়জন মেয়ে আছে। তারা সবাই দরিদ্র পরিবারের। আবার অনেকের ইচ্ছা থাকলেও দরিদ্রতার কারণে তাদের খেলা শেখা সম্ভব হয় না। যে ছয়জন আছে স্কুল পর্যায়ে তাদের আমি খেলা দেখেছি। তাদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা এগিয়ে যেতে চায়। ভর্তি ফি ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশিক্ষণের বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে সমস্যা হচ্ছে তাদের।’

প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে একজন লংজাম্প এ গোল্ড মেডেল পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) দুইজন একমাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

একাডেমির পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে ১২৫ জন ছেলে এবং ৬ জন মেয়ে রয়েছে। তাদের সকলের বাড়ি আশপাশে। বয়স অনুযায়ী চারটি গ্রুপে ভাগ করে নওগাঁ স্টেডিয়াম মাঠে পর্যায়ক্রমে অনুশীলন করানো হয়। আমার উদ্দেশ্য ভালো একটা টিম তৈরি করা এবং বিভিন্ন লিগে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। তবে তাদের জন্য অন্যরা এগিয়ে আসলে ভালো হয়।’

আব্বাস আলী/নওগাঁ

[sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

নানা সমস্যায় দীর্ঘ ‌দিন ধরে বন্ধ রাজবাড়ীর সুইমিং পুল

নানা সমস্যায় দীর্ঘ ‌দিন ধরে বন্ধ রাজবাড়ীর সুইমিং পুল

অনুদান পেলেন শেরপুরের অসচ্ছল ক্রীড়াবিদ-ক্রীড়াসেবীরা

অনুদান পেলেন শেরপুরের অসচ্ছল ক্রীড়াবিদ-ক্রীড়াসেবীরা

রায়হান যা করেছে তা অবিশ্বাস্য

রায়হান যা করেছে তা অবিশ্বাস্য

সুস্থ ও সবল জাতি গঠনে ক্রীড়াচর্চার বিকল্প নেই : ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

সুস্থ ও সবল জাতি গঠনে ক্রীড়াচর্চার বিকল্প নেই : ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী