স্বপ্নের ট্রফি ছোঁয়া থেকে মাত্র একধাপ দূরে দাঁড়িয়ে ইতালি। স্পেনকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখা ইতালি এখন শিরোপা উল্লাসে মাতার অপেক্ষায়। চলতি ইউরোতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইতালি ফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। বরং তারা জানে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে যে কোন দলের বিপক্ষেই জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। জয় করা সম্ভব স্বপ্নের ইউরো কাপ।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিটা ইতালির জন্য যেন কঠিন কিছুর। কারণ, সাম্প্রতিক তো নয়ই, বরং গত চার যুগেও তারা ইউরো ট্রফির স্বাদ পায়নি। ক্ষুধার্ত ইতালি এবার নিশ্চয়ই ট্রফি হাতছাড়া করতে চাইবে না। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তাদের আসতে হয়েছে ফাইনালে। কোনো একক ফুটবলারের উপর নির্ভর না হয়ে দলীয়ভাবে খেলেই সাফল্য পেয়েছে ইতালি। শুধু মাত্র আর একটি ম্যাচ জয় তাদেরকে এনে দিতে পারে ইউরোর শিরোপা।
আরও পড়ুন : হার্ট প্রতিস্থাপনের পরও ফুটবল মাঠে ১৪ বছরের তরুণী
সর্বশেষ ইউরো জয়ের সাক্ষী এ প্রজন্মের কয়জন? তরুণরা তো নয় ই, অনেক মুরুব্বীরা হয়তো ইতালির সর্বশেষ ইউরো জয়ের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। কারণ, ইতালির ইউরো সর্বশেষ ইউরো জয় যে ৫৩ বছর আগে ! হ্যা, হয়তো অবাক হচ্ছেন, কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ১৯৬৮ সালে সর্বশেষ ইউরো কাপ জিতেছিল ইতালি।
এখন পর্যন্ত ইতালি দশবার অংশ নিয়েছে ইউরোতে। দশবারের মধ্যে কেবল শিরোপা জিততে পেরেছে একবারই। সেটা আজ থেকে ৫৩ বছর আগে। সব মিলিয়ে ইতালির ইউরো পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে ইতালিকে 'সাদামাটা' দলই মনে হয়। এর পেছনে কারণও রয়েছে। সম্প্রতি ইতালি যে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে, সেই ইতালিরই সর মিলিয়ে ইউরোতে জয়ের হার ৫০% এরও কম।
পরিসংখ্যান বলছে, ইতালি এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ইউরোতে ৪৪টি ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে জয় পেয়েছে ২১টি তে, ড্র ১৭টি তে আর পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে ৬টিতে। এখন পর্যন্ত ইউরোতে ৫১ গোল করা ইতালি হজম করেছে ৩০টি গোল।
১৯৬০ সাল থেকে শুরু হয় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোর মোট ১৬টি আসর বসেছে। যার মধ্যে পাঁচটি আসরে খেলার জন্য বাছাই পর্বই পার হতে পারেনি ইতালি, আর প্রথম আসরে অংশ নেয়নি দলটি। ১৯৬৪, ১৯৭২, ১৯৭৬, ১৯৮৪, ১৯৯২ এই সালগুলো ইতালি নিশ্চয়ই মনে রাখতে চাইবে না। উক্ত বছরগুলোতে ইউরোর আসর বসলেও মূল পর্বে খেলার যোগ্যতাটুকুও অর্জন করতে পারেনি এবারের ফাইনালিস্টরা।
আরও পড়ুন : ফুটবল মাঠে প্রাণ হারিয়েছেন যারা
১৯৬৪ সালে মূল পর্ব খেলতে না পারা ইতালি কি দুর্দান্তভাবেই না ইউরোতে ফিরে আসে। যারা কিনা ১৯৬৪ সালে মূল পর্বই খেলতে পারেনি, তারা চার বছরের ব্যবধানে ১৯৬৮ সালে ইউরোর মুকুট নিজেদের করে নেয়। চার বছর আগে মূল পর্ব খেলতে না পারা ইতালি ১৯৬৮ সালে শিরোপা লাভ করে। অবাক করার ব্যাপার হলো এই শিরোপা জয়ী দলটি পরের টানা দুই ইউরো (১৯৭২, ১৯৭৬) আবার খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
২০০০ সাল থেকে ২০১৬, এই ১৬ বছরে ইউরোর পাঁচটি আসর বসে। ভাগ্য সহায় থাকলে এই পাঁচ আসরের দুইটিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল ইতালির সামনে। ২০০০ এবং ২০১২ সালে ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি তাদের। আর নয়তো এখন পর্যন্ত ৩ বার ইউরো জয়ী দল থাকতো ইতালি।
সর্বশেষ ফাইনাল খেলেছে ২০১২ সালে। আর এবার ফাইনালে পা রাখলো ২০২১ সালে। সময়ের হিসাবে নয় বছর পর। ঠিক নয় বছর পর এসেও ইতালি নিশ্চয়ই চাইবে না ২০১২ সালের মতো স্বপ্নভঙ্গ হউক।
যেকোন টুর্নামেন্ট এর ফাইনালে উঠা সহজ নয়। একক কোন ফুটবলারের উপর নির্ভর করে কোন দল ফাইনাল খেলতে পারে না। দলীয় ঐক্য এবং প্রচেষ্টারও প্রয়োজন হয়। ইতালিও ঠিক তেমনই দলীয় ফুটবল উপহার দিয়েছিল ২০০০ সালে। সেই বছর দলটির ৭ ফুটবলারই গোলের খাতায় নাম লেখাতে পেরেছিল। দুর্দান্ত খেলা দলটি ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে না পারলেও জয় করেছিল মানুষের মন।
চারবার বিশ্বকাপ জিততে পেরেছে যে দলটি, সেই দলই কিনা মাত্র একবার ইউরোর সেরা হওয়ার স্বাদ পেয়েছে। ইতালির মতো এমন হাই-প্রোফাইল দলের সাথে ইউরোর পরিসংখ্যানটা যেন বেমানানই। অন্ততপক্ষে আরও একটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জয় লাভ করে ইতালি নিজেদের আরও উঁচুতে নিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা ইতালি ভক্তদের।
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]