ক্রিকেটে স্লেজিং অন্যতম আলোচনার বিষয়। অনেক সময় প্রতিপক্ষের ব্যাটার বা বোলারকে কিছু একটা বলে উত্তেজিত করার নামই স্লেজিং। এটা হতে পারে হাস্যরসাত্মক, হতে পারে আক্রমণাত্মক বা অদ্ভুত!
অনেক উদাহরণ আছে যেখানে প্রতিপক্ষের স্লেজিং হজম করতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে যান। ফলে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে আর নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন বা বোলার হলে লাইন বা লেন্থ হারিয়ে ফেলেন।
অনেকেই আছেন প্রতিপক্ষের স্লেজিংয়ের পাল্টা জবাব দিয়ে রীতিমতো কথা যুদ্ধ লাগিয়ে দেন মাঠের মাঝখানে। খেলাও চলে সঙ্গে চলে কথার লড়াই। আবার বিপরীত দিক থেকে অনেকেই প্রতিপক্ষের স্লেজিংকে পাত্তা না দিয়ে চুপ থাকতেই বেশি পছন্দ করেন।
এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা স্লেজিং করলেই যেন নিজের সেরা ছন্দে ফিরে যান। স্লেজিং মনোসংযোগ হারানোর বদলে আরও বেশি ভালো খেলা শুরু করেন।
কাতার বিশ্বকাপের ‘বিশেষ’ পাঁচ তথ্য
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা এক সময়ে স্লেজিং নিজেদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র মনে করতো। ধারণা করা হয় স্লেজিংয়ে তারাই বিশ্বসেরা। তবে শুধু অস্ট্রেলিয়া নয় পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশই স্লেজিং করে থাকে।
স্লেজিং শব্দটা আসলে কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে বা সর্বপ্রথম কোথায় বা কে ব্যবহার করছিল এটার সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার কোন তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আধুনিক ক্রিকেটে প্রায়ই প্রতিপক্ষের ক্রিকেটারকে ক্ষেপানোর জন্য ক্রিকেটাররা স্লেজিং করে থাকেন।
ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক আলোচিত স্লেজিং হয়েছে, যেগুলো নিয়ে এখনও আলোচনা চলে ক্রিকেটমহলে। সেখান থেকে আলোচিত শীর্ষ পাঁচ স্লেজিংয়ের ঘটনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছে স্পোর্টসমেইল২৪.কম।
শচীন টেন্ডুলকার (ভারত) ও আব্দুল কাদির (১৯৮৯)
১৯৮৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ভারতের সাবেক কিংবদন্তি ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকারের। ম্যাচটি ছিল ওয়ানডে ফরম্যাটের, কিন্তু আলোকস্বল্পতায় ৫০ ওভার শেষ হবে না বলে ম্যাচটি বাতিল করে দেন আম্য়য়াররা।
কিন্তু স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের দাবিতে ২০ ওভারের ম্যাচ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্বিতীয় ইনিংসের এক পর্যায়ে পাকিস্তানি স্পিনার মুসতাক আহমেদের এক ওভারে দুই ছক্কা হাকান অভিষিক্ত শচীন!
তখন পাকিস্তানের সিনিয়র স্পিনার শচীনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন, “বাচ্চাদের কেন মারছ? পারলে আমাকে মেরে দেখাও।” শচীন বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের, মুখের চেয়ে ব্যাটেই জবাব দিতে পছন্দ করেন আর এবারও সেটাই করলেন।
পরের ওভারে কাদির বোলিং আসলে এক ওভারে ২৮ রান নিয়ে চুপ করিয়ে দেন। ওভারটি ছিল এমন- ৬ ০ ৪ ৬ ৬ ৬। যদিও শেষ পর্যন্ত মাত্র চার রানের ব্যবধানে ম্যাচটি হেরে যায় পাকিস্তান।
সুনীল গাভাস্কার (ভারত) ও স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
নিজের উপর পেসার কমাতে ও প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওপেনিং না নেমে চার নম্বরে নামার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের সাবেক ব্যাটার সুনীল গাভাস্কার।
কিন্তু বিধি বাম! স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই ভারতের দুই উইকেট তুলে নেন উইন্ডিজ পেসার ম্যালকম মার্শাল। ফলে যখন গাভাস্কার ব্যাটিংয়ে আসেন তখনও ওপেনিং পরিবেশই ছিল।
তাই ভিভ গাভাস্কারকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলেন, “এটা কোনো ব্যাপার না তুমি কখন ব্যাট করতে আসলে, স্কোর এখনও শূন্য।”
স্টিভ ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া) ও পার্থিভ প্যাটেল (ভারত)
২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলছিল ভারত। সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যাট করছিলেন অজি ব্যাটার স্টিভ ওয়াহ! তখন তার মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক পার্থিব প্যাটেল।
১৮ বছর বয়সী পার্থিব উইকেটের পিছন থেকে ওয়াহকে বলেন, “দেখি তুমি যদি তোমার সেই বিখ্যাত স্লগ সুইপ খেলতে পারো এবং একটা মিস করো কিনা!”
পার্থিবের স্লেজিং মোটেও পছন্দ হয়নি ওয়াহর। উত্তরে কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, “ একটু তো সম্মান দেখাও! আমি যখন প্রথম টেস্ট খেলি তুমি তখন ন্যাপকিন পড়তে।” ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম মজার স্লেজিংয়ের ঘটনা এটি।
অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ (ইংল্যান্ড) ও যুবরাজ সিং (ভারত)
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম আলোচনার স্লেজিংয়ের ঘটনা এটি। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং করছিল যুবরাজ সিং। আচমকাই যুবরাজ সিংকে কিছু একটা বলে ক্ষ্যাপান ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। যুবরাজ এতটাই ক্ষেপে গিয়েছিলেন বেশ কয়েকবার ফ্লিনটফের দিকে তেড়েও গিয়েছিলেন।
পরের ওভার করতে আসেন তরুন পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। ফ্লিনটফের উপর যে রাগ হয়েছিল তার পুরোটাই যেন ব্রডের উপর ঝাড়লেন যুবরাজ। ওভারেচ ছয় বলের প্রত্যেকটাকেই উড়িয়ে মারলেন বাউন্ডারির বাইরে! নতুন এক রেকর্ড সৃষ্টি হলো, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক ওভারে ছয় বলে ছয় ছক্কা!
যদিও ওই ম্যাচে যুবরাজকে ফ্লিনটফই আউট করেছিলেন কিন্তু এই স্লেজিং কখনোই ভুলতে পারবেন না তিনি।
স্যার ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড) ও স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার কোনো এক ম্যাচে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসকে বল করছিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম। বেশ কয়েকবার বোথামের বল ব্যাটেই লাগাতে পারেনন ভিভ।
তখন এগিয়ে গিয়ে বোথাম ভিভকে বলেন, “এটার ওজন পাচ আউন্স, লাল রংয়ের ও গোলাল্র। তোমার এটি মারার কথা ছিল!”
ঠিক পরের বলেই বোথামের বলকে উড়িয়ে মাঠের বাইরে পাঠান ভিভি। আর বোথামকে বলেন, “তুমি তো জানো এটা দেখতে কেমন, এবার যাও খুঁজে নিয়ে আসো।”
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি