রণক্লান্ত, হারের ভারে ভারাক্রান্ত

জান-ই-আলম জান-ই-আলম প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ২৫ এপ্রিল ২০২০
রণক্লান্ত, হারের ভারে ভারাক্রান্ত

সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই আমরা কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। তারপর ভাগ ভাগ হয়ে ট্যাক্সি নিয়েছিলাম সবাই। শামীম ভাই, পলাশ ভাই, আসিফ মাহমুদ তপু ও আমি এক ট্যাক্সিতে। মারকুইস স্ট্রিটের মির্জা গালিব রোডের সেই আগের হোটেলেই গিয়ে উঠেছিলাম আমরা চারজন।

২৪ মার্চ, দিনটা ভ্রমণ ক্লান্তি, র্নিঘুম রাতের ধকল মিলিয়ে কেটে গিয়েছিল। ওই দিন বিকেলেই বাংলাদেশ দল ব্যাঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় এসেছিল। সে দিনটা সত্যিই অনেক নিরুত্তাপ কেটেছিল। কারণ, টানা তিন হারে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বিদায়ের প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।

বিষন্ন মনকে চাঙ্গা করতে কলকাতা দর্শনের একটা পরিকল্পনা করি আমরা। যার শুরুটা হয়েছিল মারকুইস স্ট্রিট, নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখার মধ্য দিয়ে।

কলকাতার সঙ্গে নিউ এজের রিপোর্টার আতিফ আজম ভাইয়ের সম্পর্কের একটা যোগসূত্র আগেই জানতাম। এবার কলকাতায় তাকে পেয়ে পুরো ছবিটা দেখতে পেলাম। তার মুখেই জানলাম, তার শৈশবের অনেকটা কেটেছে কলকাতার মারকুইস স্ট্রিট, নিউ মার্কেট এলাকায়। তার আত্মীয়-স্বজন রয়েছে কলকাতা শহরে, বর্ধমানে।

আমাকে ও তপু নিয়ে নিউ মার্কেট ঘুরলেন আতিফ ভাই। ছোটবেলায় কোথায় সময় কাটতো, ঘুরতেন সেসব দেখালেন। আমরা তিনজন একসাথে জুস খেলাম। ‘ক্যাথলিন’ নামক একটা দোকান দেখালেন, যেখান থেকে চকলেট, আইসক্রিম, কেক কিনতেন।

পরে নিয়ে গেলেন একটা কফি শফে। আকারে বেশ বড়। এখানকার চা, কফি বেশ জনপ্রিয়। পরিবেশনার মাঝেও ভিন্নতা আছে। এক শিখ ধর্মালম্বী বুড়ো এটির মালিক ছিলেন। এত বছর পর সেই বুড়োকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
sportsmail24

চায়ের পর্ব শেষে গলি ধরে রিকশায় গেলাম এক বাড়ির সামনে। এই বাড়িতেই তার শৈশব কেটেছে। তার মতো আমুদে মানুষের (যারা আতিফ ভাইকে চিনেন, তারা জানেন) স্মৃতিকাতর হওয়া কঠিন। কিন্তু বাড়িটার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। ঘুরে ঘুরে সিড়ি, গেইট দেখালেন।

পুরোনা পরিচিত কাউকে খোঁজার চেষ্টা না করেই ফেরার পথ ধরলেন। তার মাধ্যমে আমিও মারকুইস স্ট্রিটসহ এই জনপদের বেশ কিছু জায়গায় ঘুরলাম।

২৬ মার্চ ইডেন গার্ডেন্সে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচটা নিছক আনুষ্ঠানিকতার অবলম্বন হয়েই টিকে ছিল। একদিন আগে অর্থাৎ ২৫ মার্চ, শুক্রবার সকালে তাসকিন আহমেদ ঢাকায় ফিরেছিলেন। তার আগেই চলে গিয়েছিলেন আরাফাত সানি। এ দিন কলকাতায় এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

সংবাদ সম্মেলন জুড়ে কার্যত ক্রিকেট কূটনীতিতে নিজেদের অদক্ষতা, অযোগ্যতা, অসহায়ত্বের বর্ণনাই দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি। তাসকিনের প্রতি অবিচার হয়েছিল বলেই মত দিয়েছিলেন তিনি। ব্যাঙ্গালুরুতে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের আত্মাহুতির মিছিলে ধেয়ে আসা হারের প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন পাপন। ওই ম্যাচে স্লো ওভার রেটের জন্য মাশরাফিদের জরিমানা করেছিল আইসিসি।

বাংলাদেশ দল শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করেছিল ইডেনের পাশে মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গনে। মাশরাফি বলেছিলেন, শেষ ম্যাচে কোনো কিছু হারানোর নেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে খেলবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও অধিনায়ক সান্ত্বনা যুগিয়েছিলেন এই বলে যে, এত যখন খারাপ হয়েছে সামনে নিশ্চয়ই ভালো কিছু আছে।

ম্যাচের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল। তারপরও বাংলাদেশকে সমীহের চোখে দেখেছে দলটি।
টানা তিন হারে রণক্লান্ত বাংলাদেশ। হারের ভারে ভারাক্রান্ত একটা দলকেই ২৬ মার্চ (শনিবার) ইডেনের ২২ গজে দেখা গেল। মানসিকভাবে ভঙ্গুর মাশরাফি বাহিনী বল হাতে ভালোই টেনে ধরেছিল ব্ল্যাক ক্যাপসদের। মোস্তাফিজের ২২ রানে পাঁচ উইকেট শিকারে নিউজিল্যান্ড ১৪৫ রানের বেশি যেতে পারেনি।

কিন্তু ব্যাট হাতে নামতেই বাংলাদেশ দলের বিপর্যস্ত, ভেতরে ভেতরে চুরমার হয়ে যাওয়া প্রতিচ্ছবিটা ফুটে ওঠে। ৭০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

৭৫ রানের হেরে যায় মাশরাফির দল। স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চে এই প্রথম মাঠের ক্রিকেটে হারল লাল-সবুজের বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় এক দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ আসর।

কঠিন গ্রুপে পড়ে সুপার টেন পার হতে পারলো না টাইগাররা। সাইড বেঞ্চে বসেই বিশ্বকাপ কাটিয়ে দিলেন পারফরমার নাসির হোসেন। দেশ থেকে উড়ে যাওয়া শুভাগত, সাকলাইনরা সুযোগ পেলেও এতদিন দলের সঙ্গে থাকা নাসির একটি ম্যাচেও একাদশে ঠাঁই পাননি।

২৭ মার্চ সকালেই ঢাকায় ফিরে যায় বাংলাদেশ দল।

এদিকে ২৬ মার্চ ম্যাচ সকালেই শামীম ভাই ও আসিফ মাহমুদ তপু ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। তারা ২৭ মার্চ সকালেই বাস ধরতে চান এবং টিকিট কিনে ফেলেন। আরও দুইটা দিন থাকতে চাই এবং ম্যাচ শেষে রাতে ঠিকমতো না ঘুমিয়ে ভোরে রওনা হওয়ার ধকল এড়াতে আমি ও পলাশ ভাই ফেরার টিকিট করিনি।

খুব সকালে শামীম ভাই, আসিফ মাহমুদ তপু ঢাকার বাস ধরতে হোটেল ছাড়লেন। তাদের সঙ্গে বিটিভির মাহবুবুর রহমান মাহবুবও রওনা হয়েছিল। ঢাকায় ফিরতে আমার মনও কেমন যেন করছিল। কিন্তু কলকাতায় কিছু পছন্দের, আগ্রহের স্থান দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না। তাই থেকে যাই আরও দু’দিন।

এর মাঝে আমাদের হোটেলে এসে উঠেছিল অধুনালুপ্ত বাংলামেইল ডটকমের সুলতান মাহমুদ রিপন ভাই, জাগো নিউজের রামিন তালুকদার। তারা বিশ্বকাপের শেষ পর্বে কলকাতায় এসেছেন। তাই দু’জন গেলেও আরও দু’জনের অর্ন্তভুক্তিতে আমাদের দলটা চারজনের সংখ্যাতেই বহাল থাকলো।

চলবে...

সবগুলো পর্ব পড়তে ক্লিক করুন- ভারত ভ্রমণের দিনলিপি

 [sportsmail24.com এর ওয়েবসাইট এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও ব্রাউজ করে পড়তে পারবেন। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস থেকেও খেলাধুলার সকল নিউজ পড়তে পারবেন। ইনস্ট্রল করুন স্পোর্টসমেইল২৪.কমের অ্যাপস ]


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

বিদায়... ‘বাপু’র ভক্ত ব্যাঙ্গালুরু

বিদায়... ‘বাপু’র ভক্ত ব্যাঙ্গালুরু

ক্রিকেটের স্থগিতাদেশ বাড়ালো ইংল্যান্ড

ক্রিকেটের স্থগিতাদেশ বাড়ালো ইংল্যান্ড

দেশে করোনার প্রভাব সম্পর্কে আইসিসিকে জানিয়েছে বিসিবি

দেশে করোনার প্রভাব সম্পর্কে আইসিসিকে জানিয়েছে বিসিবি

নির্ধারিত সময়েই বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা

নির্ধারিত সময়েই বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা