বাবার মাছ ধরার জালে প্র্যাকটিস ছাড়াও রেসিপি করছি : নিগার সুলতানা

রোকুনুজ্জামান সেলিম রোকুনুজ্জামান সেলিম প্রকাশিত: ০২:৩৯ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০২০
বাবার মাছ ধরার জালে প্র্যাকটিস ছাড়াও রেসিপি করছি : নিগার সুলতানা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। গ্রুপ পর্বে সবগুলো ম্যাচ হেরে শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন সালমারা। তবে দলে হিসেবে ভালো করতে না পারলেও ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে বেশ কয়েকজন ছিলেন উজ্জ্বল। তাদের মধ্যে অন্যতম শেরপুরের মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি। গ্লাভস হাতে উইকেটে পেছনে যেমন সামলিয়েছেন ঠিক তেমনি ব্যাট হাতেও করেছেন রান।

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও বন্ধ রয়েছে ক্রিকেটসহ সকল ধরনের খেলা। খেলা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য নিগার সুলতানা জ্যোতি তার বাবা-মায়ের সাথে সময় পার করছেন। শেরপুরে বাসাবন্দি থাকলেও নিজের ফিটনেস ঠিক রাখতে বিসিবির দেওয়া নির্দেশনা মতো চালিয়ে যাচ্ছে অনুশীলন। সম্প্রতি স্পোর্টসমেইল২৪.কমের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেন তিনি।

প্রশ্ন : কেমন আছেন?
ভালো, আমাদের এলাকা তো লগডাউন। অবশ্য আমি নিজেকে আরও আগেই লগডাউন করে ফেলছি। পুরো বাসাবন্দি।

প্রশ্ন : করোনা আতঙ্কের মাঝে সময় কাটছে কিভাবে?
বিসিবি কাছ থেকে আমরা কিছু নির্দেশনা পেয়েছি, সেগুলো ফলো করছি। পাশাপাশি আমার বাবা তার মাছ ধরার নেট দিয়ে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমার সবকিছুই একাডেমিতে (ঢাকা), এখন সেগুলো আনা সম্ভব না। এখন বাবার মাছ ধরার জাল দিয়ে বানানো নেটেই অনুশীলন করছি।

তিন-চার বছরের মধ্যে এমন টানা বাসায় থাকা হয়নি। প্রথম দিকে বেশি খারাপ লেগেছে, আমরা যারা ক্রিকেট খেলি তাদের ক্রিকেট ছাড়া থাকাটা কষ্টের, সবাইকে মিস করছি। এখন যেহেতু উপায় নেই বাসায় কিছু করার চেষ্টা করছি। বাসায় রান্নার দায়িত্ব আম্মুকে দিয়েছি, ক্লিনিংয়ের দায়িত্বটা আমি নিয়েছি (হাসি..)। ক্লিনিংয়ের দায়িত্বটা আমার।

এছাড়া কয়েকদিন যাবত রেসিপি করার চেষ্টা করছি, ভালো হয় আবার ভালো হয় না, বাট চেষ্টা করতেছি (হাসি…)।

প্রশ্ন : ফিটনেস ধরে রাখতে বিসিবি থেকে কী কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে?
আমরা সাধারণ যেগুলো করি তার মধ্যে কিছু এক্সারসাইজ আছে যেগুলো অল্প স্পেসে বা ঘরের মধ্যে করতে পারি সেগুলো করা। আর যে মাসেলগুলো আমাদের বেশি কাজ করে, বা নিয়মিত ব্যায়াম না করলে পূর্বের অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগে সেগুলো করা। সিম্পল সিম্পল কাজ তবে খুই কার্যকরী, যেগুলো আমরা ঘরে বসেই করতে পারি।

বাসার মধ্যে ব্যাটিং প্রাকটিস করছি, কিপিং প্রাকটিস করার কোন ওয়ে নেই। একটা পরিকল্পনা ছিল, আমার এখানে জায়গা আছে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরের লোক এনে কাজটি করাতে চাইনি। বাইরে থেকে কারো আসাটা এখন আর সেভ নেই।

প্রশ্ন : এমন পরিস্থিতে আগে কখনো পড়া হয়নি, খেলা নেই- বিষয়টি নিয়ে কতটা চিন্তিত?
আমরা যখন ওয়ার্ল্ড কাপ (নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) খেলছি তখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। প্রথমে আমরা বিষয়টি নিয়ে অতটা চিন্তিত ছিলাম না। কারণ, আমাদের দেশে তখনও এটা ধরা পড়েনি। কিন্তু এখন যখন প্রত্যেকটা সময় টিভি খুললেই জানতে পারি দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এমনকি মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

প্রচুর ভয় করে, কারণ আমি নিজেও জানি না আমি সেভ কি না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি সেভ থাকার, কিন্তু অন্যরা এ বিষয়টি করছে কি না? আমরা তো অন্যের মাধ্যমেও আক্রান্ত হতে পারি। সবকিছু মিলিয়ে একটা আতঙ্ক কাজ করে।

প্রশ্ন : সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের কোন স্মরণীয় স্মৃতি?
বিশ্বকাপে আমরা আসলে ভালো কিছু করতে পারিনি। ওয়ার্ল্ড কাপের আগে আমার একটা প্লান ছিল। ওয়ার্ল্ড কাপের তিন মাস আগে থেকে আমি প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কোয়ালিফাই ম্যাচ খেলার পরও আমি আমার প্রাকটিস কন্টিনিউ করেছি। এছাড়া আইসিসির একটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন ও আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য জানতে পেরে সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেটা আমাকে অনেকটা হেল্প করছে।

প্রশ্ন : অন্য দলের চেয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল কোথায় পিছিয়ে রয়েছে?
যদি দুটা ওয়াল্র্ড কাপের কথা বলেন, ২০১৮ এবং ২০২০ সালে। অ্যাজ এ কোয়ালিফায়ার হিসেবে আমরা ভালো পারফর্ম করেছি। ভারতের সাথে কিছু মিসটেক ছিল, বোলিং ভালো হয়নি, পাওয়ার প্লেতে ভালো করতে পারিনি। তবে লাস্ট ওয়ার্ল্ড কাপের তুলনায় এবার আমাদের বোলিং কিছুটা খারাপ হলেও মোটামুটি কিন্তু আমরা…, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা কামব্যাক করেছিলাম। আমাদের বোলিং এবং ফিল্ডিংকে সবসময় স্ট্রোং বলতাম, এখনও বলি। তবে আমরা সবসময় যেটা প্রোবলেম ফিল করতাম তা হলো ব্যাটিংটা।

আমাদের হয়তো অনেকেই অনেক দিন ধরে জাতীয় দলে খেলছেন, তবে আমার কথা হলো- তারা আসলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কয়টা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন বা খেলেছেন। অন্য দেশের সাথে আমাদের ভালো-মন্দের এটা একটা ফ্যাক্ট। বড় দলের সাথে যত ম্যাচ খেলবেন তত ভালো করবেন।

উদাহরণসরূপ বলি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমি যখন প্রথম ম্যাচ খেলি তখন নিজেই মানসিকভাবে নার্ভাস ছিলাম। কারণ, তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, আর আমি প্রথমবার খেলছি। দ্বিতীয় ম্যাচে গিয়ে কিন্তু আমি বিষয়টি ওভারকাম করেছি এবং পারফর্ম করেছি। বিষয়টা হলো এ রকম।

এখন যদি আমাকে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে বলেন আমি বলে দিতে পারবো যে ৫০ থেকে ৬০ রান করবো। কারণ, আমি ওদেরকে চিনি বা জানি। তাদের সাথে খেলে ইউজ টু, কিন্তু আমরা শীর্ষ ৮ দলের বিপক্ষে খেলে অভ্যস্ত না। এছাড়া ম্যাচ কম খেলার কারণে ম্যাচে মাঝে কিছু সিচুয়েশন তৈরি হয়, সেগুলো কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় সে বিষয়ে কিন্তু আমাদের ম্যাচের মধ্যেই শিখতে হবে। সেগুলো আসলে প্রাকটিসের মধ্যে আমরা শিখতে পারবো না। আমাদের বেশি করে ম্যাচ খেলাটা অনেক ইমপোর্টেন্ট, আমি বলবো এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে আছি।

প্রশ্ন : সামনে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ কখনো ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেনি…
ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে হলে আমাদেরকে আগে কোয়ালিফায়েড হতে হবে। এখন করোনাভাইরাসের জন্য সবকিছু প্রায় এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেছে। কবে যে আমরা মাঠে নামবো, এটাই বুঝতে পারছি না। তবুও আমি বলবো, আমরা যারা আছি সবাই যেন সুস্থ থাকি, আবার যেন মাঠে নামতে পারি, আমাদের নিজেদের ফিট রাখতে হবে, কারণ যখন মাঠে নামবো তখনি যেন ভালো করতে পারি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব পেলে কী কী করবেন?
এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে যে, আমাকে কেন ভাবা হয়? বিষয়টি আমি জানি না। তবে হ্যাঁ, যদি কখনো বাংলাদেশ টিমের নেতৃত্ব পাই, প্রথমত হচ্ছে যে আমি আমার দলকে টপ এইট-এ দেখতে চাইবো। আর এর জন্য যে যে কষ্ট করতে হয়, অ্যাজ এ ফুল টিম একসাথে হয়ে সে কাজগুলো করবো। আমরা যখন টপ এইট-এ ঢুকবো তখন আমরা অনেক ম্যাচ খেলতে পারবো, তখন আমরা ম্যাচ জেতাও শুরু করবো। সো, এটা (শীর্ষ আট) আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আর অ্যাজ এ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবশ্যই মাথায় থাকবে টিম যেন এক হয়ে থাকে। আমি মাশরাফি ভাইকে অনেক ফলো করি, ওনার মাঝে এটা আছে। এছাড়া আমি মুশফিক ভাইকে (মুশফিকুর রহিম) অনেক পছন্দ করি। সালমা আপার খেলা দেখতাম। তবে অ্যাজ এ উইকেটকিপার এবং ব্যাটম্যান হিসেবে মুশফিক ভাই, ওনার নেতৃত্বও আমার পছন্দ। ভাইয়াকে ফুলফিল ফলো করার চেষ্টা করি। এছাড়া ন্যাশনাল লিগে এবং ইমার্জিং ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সি করেছি, সেখানে এগুলো ট্রাই করেছি এক্সিকিউট করতে। এখন জানি না বাংলাদেশ টিমে এটা কতটা করতে পারবো। তবে এতোদিন যা শিখে আসছি তার সর্বোচ্চটা দেওয়া চেষ্টা করবো।

প্রশ্ন : খেলা বন্ধ থাকায় প্রত্যেক নারী ক্রিকেটারদের এককালীন ২০ হাজার টাকা দিয়েছে বিসিবি…
আমি মনে করি বিসিবির পক্ষ থেকে এটা অনেক বড় একটা পদক্ষেপ। প্রথম ভাইয়াদের (পুরুষ দল) টাকা দেওয়া হয় তখনি মনে হয়েছিল যে, বিসিবি আমাদের দিকেও নজর দেবে। বিসিবিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পরিমাণটা কম-বেশি নয়, এমন সঙ্কটময় অবস্থায় এটা আমাদের জন্য আশির্বাদ।

আমরা সবাই কিন্তু খুব বড় ফ্যামিলির তা নয়। বিভিন্ন লিগ খেলে তারা যতটুকু টাকা পান সেটা পরিবারে খরচ করেন। সেক্ষেত্রে বিসিবি যখন এটা ঘোষণা করে তখন আমি নিজে থেকেই অনেক খুশি হয়েছি। আমরা যারা বিভিন্ন ট্যুর করি তাদের হয়তো কিছু (টাকা) জমানো থাকে, আর যারা ট্যুর করেন না তারা এ টাকা থেকে ফ্যামিলিতে কিছু দিতে পারবে।

এ জন্য আমি মন থেকে বিসিবিতে ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া এমনও হতে পারে যে, করোনা পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘ হয় সেক্ষেত্রে বিসিবি হয়তো আরও কিছু চিন্তা করতে পারে।

প্রশ্ন : করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে বিসিবি কাছ থেকে দলের জন্য কী কী চাওয়া রয়েছে?
বিসিবি টেষ্টা করে আমাদের খেলানো জন্য। সে জন্যই কিন্তু আমরা এখন আগের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলছি; ডোমেস্টিক বলেন, টুর্নামেন্ট বলেন। তবে বিসিবির হয়তো কিছু করার থাকে না, কারণ শীর্ষ ৮ দলের সূচি করা থাকে। ওদের সূচির মধ্যে যদি কোন ফাঁকা থাকে তখন বিসিবি চেষ্টা করে কোন ম্যাচ আয়োজন করা যায় কি না। তবুও আমি বলবো বিসিবি কাছে, আমাদের যেভাবে টেক কেয়ার করে আসছে সেভাবেই যেন করে, আর আন্তর্জাতিক ম্যাচে যেন আমরা আরও বেশি খেলতে পারি- সে ব্যবস্থা করা। ম্যাচ না খেললে আমার এগুতে পারবো না, ২০১১ সাল থেকে যেখানে আছি সেখানেই পড়ে থাকবো।

প্রশ্ন : করোনাভাইরাসের মধ্যে দরিদ্র বা অসহায়দের জন্য কিছু করা হয়েছে বা কোন পরিকল্পনা…
আপনি ডান হাতে দান করবেন কিন্তু বাম হাত যেন জানতে না পারে, আমি আসলে এটাতে বিশ্বাসী। আমার যতটুকু সম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করতেছি। বাসার কাছাকাছি যারা দরিদ্র আছেন তাদের সাহায্য করছি। এটা আসলে করোনার জন্য না, আমি সবসময়ই চেষ্টা করি তাদের জন্য কিছু একটা করার।

প্রশ্ন : প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস নিয়ে ভক্তদের জন্য কী বার্তা দিতে চান?
আমি সরকারের নির্দেশনাগুলোই বলবো যে, ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা যদি নিজেরা সচেতন হই তাহলে আমরা আমাদের পরিবারকে যেমন বাঁচাতে পারবো তেমনি অন্য মানুষদেরও বাঁচাতে পারবো। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর যা যতটা সম্ভব কাছাকাছি দরিদ্র মানুষজনকে সাহায্য করি।

সময় দেওয়ার জন্য স্পোর্টসমেইল২৪.কমের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
নিগার সুলতানা জ্যোতি : আপনাকেও ধন্যবাদ।


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

নারী ক্রিকেটারদেরও এককালীন টাকা দিচ্ছে বিসিবি

নারী ক্রিকেটারদেরও এককালীন টাকা দিচ্ছে বিসিবি

লাখ টাকা পুরস্কার পেলেন ক্রিকেটার জ্যোতি

লাখ টাকা পুরস্কার পেলেন ক্রিকেটার জ্যোতি

শেরপুরে নাগরিক সংবর্ধনায় সিক্ত এশিয়া কাপ জয়ী জ্যোতি

শেরপুরে নাগরিক সংবর্ধনায় সিক্ত এশিয়া কাপ জয়ী জ্যোতি

বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নে শেরপুরের মেয়ে জ্যোতির সর্বোচ্চ রান

বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নে শেরপুরের মেয়ে জ্যোতির সর্বোচ্চ রান