কোচ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মাশরাফি

পার্থ প্রতীম রায় পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ০২:০৩ এএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
কোচ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মাশরাফি

কোচ নিয়োগের আগে প্রোফাইল এবং কতটুকু অভিজ্ঞ তা জেনেই কোচ নিয়োগ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের সম্পর্কের জানার গভীরতা এবং এদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি জানেন কিনা এসব দেখা হয় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার বেশ আগে থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথে কাজ করছেন সব বিদেশি কোচ। কিছু সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত ছাড়া কখনই কোচিং প্যানেলে মূল দায়িত্বে দেশি কোচদের দেখা যায়নি।

বিদেশি কোচ নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।

মাশরাফি বলেন, ‘কোচ নিয়োগের সময় যে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়, সেখানে আসলে তাকে কি প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌ কি করা হয় কোনো প্রশ্ন? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয়, ‘তোমার কি করার ইচ্ছা?’ হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে। ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করা হয়, ‘দারুণ কোচ, কী সুন্দর পরিকল্পনা, এর মতো কোচই হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, ভুল ওখানেই হয়ে যায়। কারণ, মানুষকে বোঝাতে আমরা সব সময় হাই প্রোফাইল কোচ খুঁজি, যা পরে আর কোনো কাজে আসে না।’

কোচ নিয়োগের সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বোঝে এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া পক্ষপাতি মাশরাফি বিন মুর্তজা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন, আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিম্যাম খেলোয়ারকে নিয়ে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা নিয়ে আসা। তা না হলে তো সে বুঝবেই না, একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কত দিন লেগেছে, বা অতীতে তাদের অবদান কী, একজন মুস্তাফিজ কীভাবে উঠে এসেছে।’

মাশরাফি মনে করে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি সম্পর্কে কোচদের ধারণা থাকে না বলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পদে পদে অপমানের শিকার হতে হয়। বলেন, ‘বারবার বলেছি, আবারও বলছি, দলের আগে কখনোই কোন খেলোয়াড় হতে পারে না। ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে। অফ ফর্ম সব খেলোয়াড়ের জীবনেই যায়। বাদও পড়ে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট থেকে অপমানিত শুধু আমাদের দেশেই বেশি হয়।’

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা কোচদের আরও বেশি পেশাদার মনোভাবের হওয়া উচিত বলে মনে করেন মাশরাফি। কোচদের মানসিকতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘পারর্ফম না করলে বাদ দেবেন স্বাভাবিক। আবার তাকে তো সহযোগিতা করতে হবে, কীভাবে ফর্মে আনা যায় বা তাকে মেন্টালি কীভাবে সাপোর্ট করা যায়। কোনোভাবেই আপনি বুঝতে দিতে পারেন না যে, আপনি তাকে আর আপনার সময়কালে দেখতে চান না। এটার কারণ একটাই, কোনো কোচই আমাদের দেশে কাজ করার আগে আমাদের দেশের ক্রিকেটের ফলোয়ার থাকে না। চাকরির জন্য আসে, শেষ হলে চলে যায়।’

ক্যারিয়ার জুড়ে কাজ করা কোচদের কাজের সম্পর্কেও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন মাশরাফি। সবাই নিজের মতো করে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে তাদের সাথে সবার সম্পর্ক খারাপ হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে সাবেক কাপ্তান বলেন, ‘এ যাবৎকালে প্রায় ৯/১০ জন কোচের সাথে কাজ করেছি আমি। প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারন একেকজনের কাজের ধরন একেকরকম। কিন্তু সব সময় দেখেছি, প্রত্যেক কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুইজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়। পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্য কেউ তাকে আর কিছুই বুঝাতে পারে না। বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে।’

প্রিয় ক্রিকেটারদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে কোচরা অন্য ক্রিকেটারদের ছোট করে ফেলেন বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সফল এ অধিনায়ক। বলেন, ‘ওই পছন্দের জন্য সে আবার দুইজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে, তাদের আর দেখতেই পারে না। এক পর্যায়ে এমন জিদ শুরু করে যে, প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেব, এমন কথা প্রকাশ্যেও শুনেছি কয়েকবার কোচের মুখে। আমার পয়েন্ট হলো, কোচের পছন্দ কিছু খেলোয়াড় হতেই পারে। সেটা সব কোচেরই হয়। অনান্য দেশেও হয়। তবে সেখানে কখনও সেটা প্রকাশ্যে বুঝতে দেয় না, অনুমান করতে হয়। কারণ দলের সেরা ৩/৪ জন খেলোয়াড়ই শুধু ম্যাচ জেতায় না। জেতালেও আপনি একজনের জন্য আরেকজনকে ছোট করতে পারেন না।’

কোচদের ব্যবহারে গোছানো দল যেন অগোছালো হয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। বলেন, ‘দর্শক বা সাংবাদিক অনেক কিছু লিখতেও পারে, বলতেও পারে। যেটা একদম নরম্যাল ব্যাপার। কোচকে বলা হয় ফাদার অফ দ্যা সাইড। সে সবাইকে দেখে রাখবে, প্রয়োজনে কঠোর হবে। আবার দলের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করবে। তার সব কিছুই হতে হবে পজিটিভ। কারও প্রতি কঠোর, কারও প্রতি নমনীয়, এটা এক রকমের বৈষম্যতে রূপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে দেশি কোচদের অবহেলার কথাও তুলে ধরেন মাশরাফি। বলেন, বিদেশি কোচদের অতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমরা দেশি কোচদের অবহেলা করি। বিদেশি কোচরা নিজের প্রোফাইল ভারি করে দেশ ছাড়ে আর দেশের কোচদের উপর চাপ পড়ে বলে জানিয়েছেন মাশরাফি।

বলেন, ‘এক পর্যায়ে তারা (বিদেশি কোচরা) নিজেদের দেশে, না হলে আই পি এল বা আরও ভালো কোনো অফার পেয়ে চলে যাবে। কারণ এত দিনে সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে, নিজের প্রোফাইলও ভারি করেছে। বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২/১৫ লাখ টাকা আর আমাদের কোচরা না খেয়ে মরে। গালিও দেখি আমাদের কোচরাই হজম করে।’

বিদেশি কোচদের বিদায়ে ক্রিকেটারদের সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। বলেন, ‘পরে উনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে। আবার নতুন কোচ, নতুন পরীক্ষা, নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া-আসা।’

সবশেষে বিদেশি কোচের পরিবর্তে দেশি কোচ নিয়োগ দেওয়ার দাবি তুললেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বলেন, ‘তাই আমার মনে হয়, হাই প্রোফাইল কোচ নয়, আমাদের প্রয়োজন আমাদের কোচ, বাংলাদেশের কোচ।’

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর

[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং  সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ‘এ’ দলে মিঠুন-ইমরুল, অধিনায়ক মমিনুল

বাংলাদেশ ‘এ’ দলে মিঠুন-ইমরুল, অধিনায়ক মমিনুল

টি-টোয়েন্টিতে এমন উইকেট মানিয়ে নেওয়া কঠিন : লিটন দাস

টি-টোয়েন্টিতে এমন উইকেট মানিয়ে নেওয়া কঠিন : লিটন দাস

টি-টোয়েন্টিতে  আর কিপিং করতে চান না মুশফিক : ডোমিঙ্গো

টি-টোয়েন্টিতে আর কিপিং করতে চান না মুশফিক : ডোমিঙ্গো

মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় দলের এমন হার : মাহমুদউল্লাহ

মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় দলের এমন হার : মাহমুদউল্লাহ