বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ‘ব্যর্থতার কারণ’ তিনটি

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ‘ব্যর্থতার কারণ’ তিনটি

চলমান বিশ্বকাপে করুণ অবস্থায় থাকা দলগুলোর মধ্যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড অন্যতম। বাংলাদেশের বিপক্ষে ছাড়া এখণ পর্যন্ত চার ম্যাচের তিনটিতেই পরাজিত হয়েছে তারা। সর্বশেষ মুম্বাইয়ে প্রোটিয়াদের কাছে ২২৯ রানে বিধ্বস্ত হয়ে ওয়াডেতে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের লজ্জা পেয়েছে জস বাটলাররা।

দলের এমন পারফর্ম্যান্স বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলেও বেশ প্রভাব পড়েছে। গত আসরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা এখন অবস্থান করছে ৯ম স্থানে। দশ দলের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পর এখন আফগানিস্তান।

চার ম্যাচ করে খেল সমান একটি করে জয় থাকলেও রান রেটে এগিয়ে থেকে ইংল্যান্ডের উপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস এবং বাংলাদেশ (নিচ থেকে উপরে)।

ভারত বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডের এমন করুন দসার তিনটি কারণ বের করতে পেরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিশেষ তিনটি ভুল কী কী...

ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস জয়ের পর ইংল্যান্ডের সুযোগ ছিল নিজেদের আধিপত্য প্রমাণের। মুম্বাইয়ের প্রচন্ড গরম ও আদ্রতার মধ্যেও জস বাটলার বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যে কারণে পুরো দল তাদের সব শক্তি ফিল্ডিংয়েই ব্যয় করেছিল। যদিও টসের সময় ইংলিশ অধিনায়ক বলেছিলেন, এ মাঠটি সাধারণত রান চেজিংয়ের জন্য ভালো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মাথায় না রেখে অতীত ইতিহাস বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড আগেও বেশ কয়েকবার ভুল করেছে। শনিবার বোলিংয়ের সময় পেসার ডেভিড উইলিসহ আরও কিছু খেলোয়াড়ের বারবার পেশীতে টান পড়েছে, প্রচন্ড গরমে যা স্বাভাবিক।

ম্যাচ শেষে অবশ্য নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছিল ইংল্যান্ড। ইংলিশদের কোচ ম্যাথু মট বলেছেন, ‍“আমরা যা ভেবেছিলাম গরম তার থেকেও অনেক বেশি ছিল।”

ভারতে বেশ কয়েক সপ্তাহ কাটানোর পর মুম্বাইয়ের আবহাওয়া সম্পর্কে না জানার বিষয়টি অনেকটা খোঁড়া যুক্তি হিসেবেই অনেকে বিবেচনা করছে। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসির হুসেইন ২০১৯ বিজয়ী অধিনায়ক এউইন মরগানের সাথে তুলনা করে বলেছেন, “মরগানও পরিসংখ্যান ব্যবহার করতেন, কিন্তু তার মধ্যে ঠিক ঐ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সৎ সাহসও ছিল। তোমাকে অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগে থেকে একটা মাইন্ড সেট করার বিষয় অনেক সময় কাজে আসে না।”

রান তাড়া করে সফল হতে পারছে না ইংল্যান্ড
ওয়ানডেতে সাম্প্রতি পরে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ডের ব্যর্থতার বিষয়টি সবাই অবগত। বাটলারেরও এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিৎ ছিল। গত আট ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই পরে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড পরাজিত হয়েছে। এ তালিকায় শনিবারের ম্যাচের আগে এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬৯ রানের পরাজয়ের ম্যাচটিও রয়েছে।

যদিও সেই ক্ষতিকে খারাপ ফলাফল হিসেবে তারা দেখতে নারাজ। হুসেইন বলেন, “সর্বশেষ ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা যখন একে অপরের মোকাবেলা করেছিল তখন ইংল্যান্ড খুব অল্প রানে হেরেছিল। সে কারণেই পরিসংখ্যানের দিকে ইংল্যান্ডকে সতর্কতার সাথে নজর রাখতে হবে।”

নতুন বলে সাফল্যের অভাব
রিস টপলি ছাড়া আর কোন বোলারই এবারের বিশ্বকাপে নতুন বলে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না। এদিকে আঙুলের চোটের কারণে টপলি ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন।

এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের তিনটি পরাজয়েই প্রতিপক্ষ ওপেনাররা বড় রান করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার রেজা হেনড্রিক্স করেছেন ৮৫ রান। টপ অর্ডায়েরর বড় পার্টনারশীপই মূলত ইংল্যান্ডের হারের মূল কারণ।

তিন ম্যাচে মাত্র দুই উইকেট পাওয়া ক্রিস ওকস দল থেকে বাদ পড়েছেন। তিন ম্যাচে তার গড় ছিল ৬৭.৫। কিন্তু তার পরিবর্তে দলে আসা অন্যরাও নিজেদের প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। ডেভিড উইলি ও গাস এ্যাটকিনসন ৯ ওভার করে বল করে যথাক্রমে ৬১ ও ৬০ রান দিয়েছেন। এই সুযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা ৭ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড় সমান স্কোর গড়ে তুলে।

বেশ কিছুদিন ধরেই ইংল্যান্ডে দল নির্বাচনে ধারাবাহিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। লিয়াম লিভিংস্টোন, স্যাম কারান ও ওকসের পরিবর্তে তারা প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বেন স্টোকস, উইলি ও এ্যাটকিনসনকে মূল দলে রেখেছে। তারপরও মূল দলে তাদের মাত্র তিনজন খেলোয়াড় ছিল ৩২ বছরের নীচে। টি-টোয়েন্টি বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এদের উপর ভর করেই ২০১৯ সালে ওয়ানডেতে বিশ^কাপ জয় করেছিল।

২০১৫ বিশ্বকাপ হতাশার পর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আবারও ইংল্যান্ডের সামনে সময় এসেছে নতুন করে ওয়ানডে ফর্মেটে সবকিছু চিন্তা করার। নতুন প্রজন্মের ওয়ানডে ক্রিকেটারদের উন্নতিতে কাজ করার বিকল্প নেই। চলতি বিশ্বকাপের পর হয়তো এ চিন্তা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রবল হবে।


শেয়ার করুন :