বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সমতায় দক্ষিণ আফ্রিকা

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৮:৪১ পিএম, ২০ মার্চ ২০২২
বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সমতায় দক্ষিণ আফ্রিকা

সিরিজের প্রথম ম্যাচে দাপটের সাথে জয় তুলে নিলেও দ্বিতীয় ওয়ানডে লড়াই করতেই পারলো না বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বোলিংয়েও চাপ তৈরি করতে পারেনি টাইগাররা। স্বল্প রানের লক্ষ্য পেয়ে অনায়াসে জয় তুলে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে সমতায় ফিরলো স্বাগতিকরা।

জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে রোববার (২০ মার্চ) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে রাবাদার বোলিং তোপে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। দলের টপ-অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় লোয়ার অর্ডারের দুই ব্যাটার আফিফ-মিরাজের ব্যাটে এ স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৭৬ বল বাকি রেখে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ম্যাচ জয়ে সিরিজ সমতা হওয়া শেষ ম্যাচটি অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হলো।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সতীর্থ লিটন দাসকে নিয়ে জুটি গড়তে ব্যর্থ হন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ওয়ান্ডারার্সের উইকেটের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের টপ-অর্ডারকে শুরুতেই মহাচাপে ফেলে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা।

১২.৪ ওভারে ৩৪ রানের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম ৫ উইকেট তুলে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার তিন পেসার কাগিসো রাবাদা-লুঙ্গি এনডিদি ও ওয়েন পার্নেল। প্রোটিয়া পেসারদের বাউন্সার সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন তামিম-সাকিবরা।

দলীয় ৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর অষ্টম ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার লিটন দাস। ২১ বলে ৩টি চারের মারে ১৫ রানে ফিরলে দলীয় ২৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

৮.১ ওভারে ৩ উইকেট হারানোর পর প্রথম পাওয়ার প্লে বাকি ওভারে ৭ রান তুলেন ইয়াসির আলি রাব্বি এবং মুশফিকুর রহিম। ফলে ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩০ রান। তবে আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি হাঁকানো ইয়াসির আলি ২ রানে ফিরলে ৩৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

টানা উইকেট হারানোর পথে ইনিংসে ১৩ ওভারের চতুর্থ বলে মুশফিকও (১২) ফিরেন সাজঘরে। দলীয় ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে শতরানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং আফিফ হোসেন ধ্রুব। রিয়াদ-আফিফের জুটি থেকে ৬০ রান আসে।

৪৪ বল খেলে ব্যক্তিগত ২৫ রানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সাজঘরে ফিরলে দলীয় ৯৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর দলের পক্ষে ব্যাট হাতে রানের চাকা সচল রাখেন আফিফ এবং মেহেদী মিরাজ। দুজনে মিলে ৮৬ রানের জুটি গড়েন। আফিফ তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশত রান।

ইনিংসের ৪৬তম ওভারে আবার ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। পর পর দুই উইকেট তুলে নিয়ে রানের গতি টেনে ধরেন রাবাদা। ওভারের তৃতীয় বলে আফিফকে ফেরানোর পর পঞ্চম বলে মিরাজকেও তুলে নেন তিনি। ১০৭ বলে ৭২ রান করেন আফিফ। অন্যদিকে, মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৪৯ বলে ৩৮ রান।

শেষ দিকে তাসকিন এবং মোস্তাফিজ ৯ ও ২ রানে অপরাজিত ছিলেন। মাঝে ২ রান করেন শরিফুল ইমলাম। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বল হাতে ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন রাবাদা।

সিরিজে সমতা আনতে ১৯৫ রানের লক্ষ্য পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে কুইন্টন ডি ককের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারেই ৭২ রান তুলে ফেলে প্রোটিয়ারা। তাসকিনের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ডি ককের বিপক্ষে লেগ বিফোর আউটের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার তাতে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় টাইগাররা। তাতেও সাফল্যকে সঙ্গী করতে পারেনি বাংলাদেশ।

তাসকিনের দ্বিতীয় ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ডি কক। সপ্তম ওভারে মিরাজকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। অষ্টম ওভারে শরিফুলকে পরপর তিনটি চার মারেন ডি কক। নবম ওভারে মিরাজকে পরপর দু’বলে চার মেরে ২৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন ডি কক।

১১তম ওভারের শেষ বলে ডি কককে বিদায় করে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙার ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। মিরাজের বলে ব্যক্তিগত ৫২ রানে ডি কককের ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক মুশফিক। তবে সেই মিরাজই দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন। ১৩তম ওভারে ওপেনার জানেমান মালানকে বোল্ড করেন মিরাজ। ৪টি চারে ৪০ বলে ২৬ রান করেন মালান।

দলীয় ৮৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। উদ্বোধনী জুটি ভাঙার কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন ডি ককও। সাকিবের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন ডি কক। ৪১ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬২ রান করেন তিনি। দলীয় ৯৪ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর সাচ্ছেন্দ্যে খেলে দলকে লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যান কাইল ভেরেনি ও অধিনায়ক বাভুমা।

তাসকিনের করা ২২তম ওভার থেকে ১৬ রান পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন ভেরেনি। ২৫তম ওভারে দেড়শতে পা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার রান। ভেরেনি-বাভুমার জুটিতে জয় নিশ্চিতের পথে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ৩৩তম ওভারে এ জুটি ভাঙেন টাইগারদের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে আক্রমণে আসা আফিফ। ৩৭ রার করা বাভুমাকে আউট করেন আফিফ। তৃতীয় উইকেটে ১০১ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন ভেরেনি-বাভুমা।

বাভুমার ফেরার ওভারেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ভেরেনি। শেষ পর্যন্ত রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত করেন ভেরেনি। ভেরেনি ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৭ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ডুসেন অপরাজিত থাকেন ৮ রানে।

বাংলাদেশের মিরাজ-সাকিব-আফিফ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৩৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা।

এ জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের ১২ ম্যাচে ৪ জয়, ৬ হার ও ২টি পরিত্যক্ত ম্যাচের কারণে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নবমস্থানে উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ১৭ ম্যাচে ১১ জয়, ৬ হারে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেই থাকলো বাংলাদেশ।

স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

দলের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে আফিফের ফিফটি

দলের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে আফিফের ফিফটি

বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া: মিরাজ

বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া: মিরাজ

‘আমাকে বলটা দেন, ম্যাচ ঘুরিয়ে দেব’

‘আমাকে বলটা দেন, ম্যাচ ঘুরিয়ে দেব’

৭-৮ বলেই উইকেটের ‘চরিত্র’ বুঝে গিয়েছিলেন সাকিব

৭-৮ বলেই উইকেটের ‘চরিত্র’ বুঝে গিয়েছিলেন সাকিব