ব্যয়বহুল ট্রান্সফার: ব্যর্থ দশ ফুটবলার

সৌরভ কুমার দাস সৌরভ কুমার দাস প্রকাশিত: ০৬:২৮ পিএম, ০৩ জুন ২০২২
ব্যয়বহুল ট্রান্সফার: ব্যর্থ দশ ফুটবলার

আধুনিক ফুটবলে টাকা যেন উড়ে বেড়ায়। একজন ফুটবলারকে দলে ভেড়াতে রীতিমত টাকার বস্তা নিয়ে মাঠে নামে ইউরোপের ক্লাবগুলো। এছাড়া অন্যান্য ক্লাবগুলোর সঙ্গে খেলোয়াড় কেনার প্রতিযোগীতা তো রয়েছেই। ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই, ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবগুলোর কাছে টাকা কোনো বাধা হয় না কখনো।

একটা খেলোয়াড় যখন কোথাও ভালো খেলে সবার নজরে আসে, তখন ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় ওই খেলোয়াড়কে নিয়ে। একটা ক্লাব যখন বড় অঙ্কের ট্রান্সফার ফি দিয়ে একটা খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ায়, তখন ওই খেলোয়াড়ের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে।  

অনেক সময় দেখা যায়, বড় অঙ্কের টাকায় বিক্রি হওয়ার পর প্রত্যাশার চাপে ওই খেলোয়াড় ভেঙে পড়ে। ফলে তার পিছনে ক্লাবের বিনিয়োগও ক্ষতির মুখে পড়ে যায়। জলাতান ইব্রাহিমোভিচ, ইডেন হ্যাজার্ড, ওসমান দেম্বেলের মতো ফুটবল বিশ্বে এরকম একাধিক উদাহরণ রয়েছে। সেসব ফুটবলারদের  আদ্যোপান্ত পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছে স্পোর্টসমেইল২৪.কম। 

জলাতান ইব্রাহিমোভিচ (বার্সেলোনা)

ফুটবলের আলোচিত চরিত্র সুইডিশ ফুটবলার জলাতান ইব্রাহিমোভিচ। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারদের একজন তিনি। ২০০৯ সালে তার বার্সেলোনায় যোগদান সাড়া ফেলে দিয়েছিল ফুটবল বিশ্বে। কিন্তু বার্সাতে তার সময়টা জীবন থেকেই হয়তো মুছে ফেলতে চাইবেন তিনি।

২০০৯ সালে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে তাকে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সেলোনা। শুধু টাকা নয়, ইব্রাকে দলে ভেড়াতে স্যামুয়েল ইতোকেও ইন্টার মিলানকে দিতে হয়েছিল বার্সার। যে কিনা ২০০৯ চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার নায়ক ছিল।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! ইব্রা বার্সাতে এসে ম্যাচের ম্যাচ ব্যর্থ হয়ে ক্যারিয়ারের অন্যতম বাজে মৌসুম কাটালেন। অন্যদিকে ইন্টার মিলানে গিয়েই ট্রেবল জিতলেন ইতো।

মাঠের পারফর্মেন্সের যেমন বাজে ছিল, তেমনি বার্সেলোনা কোচ পেপ গার্দিওয়ালার সাথেও সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়েছিল ইব্রার। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনায় ছিলেন তিনি। কিউলদের জার্সি গায়ে ২৯ ম্যাচে ১৬ গোল করেছেন এই সুইডিশ ফুটবলার। মাঝে অবশ্য কিছুদিন ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে লোনেও কাটিয়েছেন ইব্রা। সব মিলিয়ে বার্সেলোনার লস প্রজেক্ট ছিলেন ইব্রাহিমোভিচ।

কেপা আরিজাবলাগা (চেলসি)

৭২ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে গোলরক্ষক কিনে ২০১৮ সালে হইচই ফেলে দিয়েছিল চেলসি। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী গোলরক্ষক ২৭ বছর বয়সী স্প্যানিশ কেপা আরিজাবলাগা।

sportsmail24

কেপা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন কোচের সঙ্গে ঝামেলা নিয়ে। ২০১৯ সালে চেলসির কোচ ছিলেন মারিসিও সারি। এক ম্যাচে তিনি গোলরক্ষক বদল করতে নির্দেশ দেন, সে মোতাবেক কেপাকে তথ্য পাঠানো হয়, বদলি গোলরক্ষকও প্রস্তত। কিন্তু মাঠের ভিতর থেকে জানিয়ে দেন তিনি উঠবেন না। 

এরপর তার পারফর্মেন্সও ক্রমশ নীচে নামতে থাকে। ইতিমধ্যে চেলসি সেনেগাল গোলরক্ষক এডওয়ার্ড মেন্ডিকে দলে ভেড়ায়। মেন্ডির অসাধারণ পারফর্মেন্সে কেপার জায়গা নিয়মিতই হয় সাইড বেঞ্চে।  

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন দলবদলেই স্টামফোর্ড ব্রিজ ছাড়বেন কেপা। যদিও তার পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে এখনো কোনো কিছু জানা যায়নি।

হামেস রদ্রিগেজ (রিয়াল মাদ্রিদ)

২০১৪ বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করেছিলেন কলম্বিয়ান ফুটবলার হামেস রদ্রিগেজ। এরপরই তার উপর চোখ পড়ে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের। ৮০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রদ্রিগেজকে দলে ভেড়ায় মাদ্রিদ।

২০১৪-১৫ অভিষেক মৌসুমে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ১৭ গোল করেছিলেন রদ্রিগেজ। তবে রিয়ালের কোচ হিসেবে ২০১৬ সালে জিনেদিন জিদানের আগমনে কপাল পোড়ে রদ্রিগেজের।

sportsmail24

জিদানের অধীনে কালেভাদ্রে তার সুযোগ মিলত একাদশে। ততদিনে জিদানের সাথে সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছে তার। ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন রিয়ালের ড্রেসিং রুমে।

এরপর বায়ার্ন মিউনিখে লোনে গিয়েছিলেন একবার। সেখান থেকে ফিরে রিয়ালের হয়ে মাত্র আট ম্যাচেই থেমেছে তার যাত্রা! ৮০ মিলিয়ন দিয়ে কিনে ফ্রিতেই তাকে যেতে দিতে ব্যর্থ হয় রিয়াল মাদ্রিদ।

হ্যারি মাগুয়ের (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকদের কাছে এই মুহূর্তে দুঃস্বপ্নের নাম হ্যারি মাগুয়ের। গেলো মৌসুমে তাকে একের পর এক সমালোচনায় বিদ্ধ্ করেছেন সমর্থকরা। কেনই বা করবেন না! মাঠে তার পারফর্মেন্স ছিল জঘন্য।

sportsmail24

অথচ লেস্টার সিটিতে তার পারফর্মেন্স দেখে তাকে কিনতে চেয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে দামে বনিবনা না হওয়ায় সরে আসে সিটি। এরপরেই তাকে রেকর্ড মূল্য ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে দলে ভেড়ায় ম্যানইউ।

ইউনাইটেডে এসে অধিনায়ক হন মাগুয়ের। কিন্তু দিনের পর দিন তার পারফর্মেন্স শুধু নীচেই নেমেছে। আর এখন যদি ইউনাইটেড তাকে বিক্রি করতে চায় তাহলেও লাভ হবে না। কেউই এখন তার দামের অর্ধেকও দিতে চাইবে না।

ইডেন হ্যাজার্ড ( রিয়াল মাদ্রিদ)

২০১৯ সালে চেলসি থেকে ইডেন হ্যাজার্ডকে কিনে বেশ ভালো বিপদেই পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাঠের চেয়ে হাসপাতালের বিছানায় বেশি পাওয়া যায় বেলজিয়ান ফুটবলারকে।

রিয়াল মাদ্রিদে এসে ম্যাচ খেলেছেন কয়টা আর শেষ কবেই বা মাঠে নেমেছেন এটা স্বয়ং হ্যাজার্ডেরও মনে নেই হয়তো। তিন বছরে সর্বসাকুল্যে ৪৮টি ম্যাচ খেলেছেন হ্যাজার্ড। তার অধিকাংশই বদলি খেলোয়াড় হিসেবে।

১০০ মিলিয়ন ইউরোতে ভেড়া ফুটবলারের জায়গা হয় ডাগ আউটে আর না হয় হাসপাতালে। তার ইনজুরির সংখ্যা হয়তো ম্যাচ খেলার সংখ্যার চেয়েও বেশি হতে পারে। এখন পর্যন্ত হ্যাজার্ডকে রিয়াল মাদ্রিদের লস প্রজেক্ট বলা যায়।

পল পগবা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে সাফল্যমণ্ডিত ৪ বছর কাটিয়ে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়েছিলেন পল পগবা। তবে জুভের ফর্ম ইউনাইটেডে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি এই ফরাসি ফুটবলার।

sportsmail24

পগবাকে ফিরে পেয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকেরা। কিন্তু উচ্ছ্বাস হতাশায় পরিণত হতে সময় লাগেনি। কোচের সাথে ঝামেলা, ইনজুরিতে বিব্রত অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করেন পগবা।

ম্যানইউ সমর্থকেরাও বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন তার উপর। এমনকি গ্যালারি থেকে দুয়োধ্বনিও দেয়া শুরু করেছিলেন তারা। ৮৯ মিলিয়ন ইউরোতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এসেছিলেন পগবা। ছয় বছরে টাকার অর্ধেক পরিমাণ সমমূল্যের পারফর্মও করতে পারেননি তিনি। চলতি বছর জুনের শেষেই ক্লাব ছেড়ে যাবেন তিনি।

ওসমান ডেম্বেলে (বার্সেলোনা)

রিয়াল মাদ্রিদের হ্যাজার্ডের সাথে বার্সেলোনা ওসমান দেম্বেলের অনেকাংশেই মিল রয়েছে। ২০১৭ সালে নেইমার চলে যাওয়ার পর ১০৫ মিলিয়ন ইউরোতে দেম্বেলেকে দলে ভেড়ায় বার্সেলোনা। তবে ন্যু ক্যাম্পে আসার পর থেকেই তার নিয়মিত জায়গা চিকিৎসকের ছুড়ি-কাঁচি!

sportsmail24

মাঠে নামলেই ইনজুরি নিয়েই মাঠ ছাড়তেন তিনি। যাকে বার্সেলোনা কিনলো নেইমারের অভাব মেটাতে সেই কিনা মাঠ থেকে বেশি সময় কাটায় হাসপাতালে। দারুণ প্রতিভাবান হওয়া স্বত্তেও মাঠে তার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি দেম্বেলে।

শোনা যাচ্ছে, চলতি বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেই বার্সেলোনা ছাড়বেন তিনি। তাই এখন পর্যন্ত দেম্বেলের উপর বার্সেলোনার বিনিয়োগ পুরোটাই লস প্রজেক্ট!  

ফিলিপ কৌতিনহো (বার্সেলোনা)

বার্সেলোনায় যাওয়ার পর কৌতিনহোর উচ্ছ্বাসটা ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বপ্নের ক্লাব বার্সেলোনায় আসার জন্য লিভারপুলে অনুশীলনও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।

হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি বার্সেলোনায় তার জন্য কি দুঃস্বপ্নের অধ্যায় অপেক্ষা করছে। ১২০ মিলিয়ন ইউরোতে কেনা একটা খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বিশ মিলিয়ন ইউরোর পারফর্মেন্সও পায়নি বার্সেলোনা।

কৌতিনহো ঘরানার এককাধিক ফুটবলার ছিল বার্সেলোনায়। তখন তাই কোচের পরিকল্পনাতেও অনেক সময় থাকতেন না কৌতিনহো। তারপর তাকে লোনে বায়ার্ন মিউনিখে পাঠিয়েছিল বার্সেলোনা।

সেখান থেকে ফিরেও তেমন কিছু একটা করতে পারেননি তিনি। ফলে আবার তাকে অ্যাস্টন ভিলাতে লোনে পাঠানো হয়। চলতি বছর মাত্র ২০ মিলিয়নে তাকে ভিলার কাছেই বিক্রি করে দেয় বার্সেলোনা। লস ১০০ ইউরো!

বেকহ্যাম থেকে কাভানি, ভক্তদের সাথে কোচ-খেলোয়াড়ের দশটি দ্বন্দ্ব

আন্তোনিও গ্রিজমান ( বার্সেলোনা)

স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে সাফল্যমন্ডিত পাঁচ বছর কাটানোর পর বার্সেলোনায় গিয়েছিলেন আন্তোনিও গ্রিজমান। তবে কিউলদের জার্সিতে সফল হতে পারেননি এই ফরাসি তারকা।

২০১৮ সালে বার্সেলোনার প্রস্তাব প্রকাশ্যে বাতিল করেছিলেন গ্রিজমান। সেই তিনি পরের বছরই বার্সেলোনায় যোগ দেন। ১২০ মিলিয়েন তাকে দলে ভেড়ায় বার্সেলোনা।

বার্সেলোনা পুরো টাকাটাই জলে তো গেলোই এখন গ্রিজমানের ক্যারিরারও হুমকির পথে। বর্তমানে পুরোনো ঠিকানা অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে রয়েছেন তিনি। তাকে কেনার সুযোগ থাকলেও কিনতে যায় ছোট মাদ্রিদ।

আলভারো মোরাতা (চেলসি)

ফুটবল বিশ্লেষকেরা বলেন, আলভারো মোরাতার এজেন্ট সবচেয়ে চালাক এজেন্ট! যে খেলোয়াড় সব ক্লাবেই পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয় তাকেই কিনা সব ক্লাব বড় অংকে দলে ভেড়ায়।

২০১৬-১৭ মৌসুমে লা-লিগায় মাত্র ১৫ গোল করেন মোরাতা। এরপরও তার জন্য ৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল চেলসি। ১৮ মাসের চেলসি ক্যারিয়ারে মাত্র ১৬ গোল এসেছিল মোরাতার পা থেকে। ফলে মোরাতার পিছনে করা বিনিয়োগে লসই দেখলো চেলসি

স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি 


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

একুশ শতকের চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘রোমাঞ্চকর’ পাঁচ ফাইনাল

একুশ শতকের চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘রোমাঞ্চকর’ পাঁচ ফাইনাল

মেসি আছে বলেই আমরা বিশ্বকাপের দাবিদার: মার্টিনেজ

মেসি আছে বলেই আমরা বিশ্বকাপের দাবিদার: মার্টিনেজ

দিবালাকে দলে ভেড়ানোর দৌড়ে ইন্টার মিলান ও আর্সেনাল

দিবালাকে দলে ভেড়ানোর দৌড়ে ইন্টার মিলান ও আর্সেনাল

ব্যক্তিগত সব অর্জনের বিনিময়ে হলেও আবারও ফাইনাল খেলতে চান সালাহ!

ব্যক্তিগত সব অর্জনের বিনিময়ে হলেও আবারও ফাইনাল খেলতে চান সালাহ!