নাটকীয় ম্যাচে খুলনার বিদায়, কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
নাটকীয় ম্যাচে খুলনার বিদায়, কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম

ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটনের বিধ্বংসী ব্যাটিং এবং দলের সাবেক অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে উঠলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। টুর্নামেন্টের এলিমিনেটর ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ৭ রানে হারিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম। এ হারে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলো মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিনের প্রথম ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৯ রান করে চট্টগ্রাম। ওয়ালটন ৪৪ বলে অপরাজিত ৮৯ রান করেন। পঞ্চম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে ৫৮ বলে ১১৫ রানের জুটি গড়েন ওয়ালটন।

মিরাজ ৩০ বলে ৩৬ রান করেন। এরপর বল হাতে ২ উইকেটও নেন মিরাজ। ১৯০ রানের জবাবে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮২ রান করে খুলনা। শেষ দিকে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও শেষ ওভারে মিরাজের বোলিং নৈপূণ্যে মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে হেরে যায় খুলনা।

ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই মিড উইকেট দিয়ে চার মারেন চট্টগ্রামের ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার কেনার লুইস। চতুর্থ বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে হাকান ছক্কা। লুইসের এমন শুরুর মধ্যে ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। খুলনার পেসার খালেদ আহমেদের করা ওভারের শেষ বলে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন লুইসের সতীর্থ জাকির হাসান।

তিন নম্বরে নামা অধিনায়ক আফিফ হোসেনকে দ্রুত বিদায় দেন খুলনার বাঁ-হাতি পেসার রুয়েল মিয়া। ১৬ রানে ২ উইকেট পতনের পর চট্টগ্রামের রানের চাকা ঘুড়ান লুইস ও তার স্বদেশি ওয়ালটন। তবে মারমুখী মেজাজে ছিলেন না তারা। তাই ৭ ওভার শেষে চট্টগ্রামের রান ছিলো ২ উইকেটে ৪১।

শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরার করা অষ্টম ওভারের প্রথম দুই বলে ১০ রান আদায় করে নেন লুইস। তবে পরের ওভারের প্রথম বলে থামতে হয় লুইসকে। ৩২ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৯ রান করেন তিনি। দলীয় ৫৪ রানে লুইসের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন শামিম হোসেন। ১০ম ওভারের প্রথম দুই বলে ২টি চার মারেন শামিম। তবে চতুর্থ বলে লেগ বিফোর হলে এডিআরএস নিয়েও নিজেকে বাঁচাতে পারেননি, ৭ বলে ১০ রান করেন শামিম।

১০ ওভার শেষে চট্টগ্রামের স্কোর ৪ উইকেটে ৬৬ রান। এ অবস্থায় রানের গতি বাড়াতে মনোযোগী হন ওয়ালটন ও ক্রিজে নতুন ব্যাটার মেহেদি হাসান মিরাজ। মাহেদির করা ১২তম ওভারে ১৮ রান তুলেন তারা। খালেদের করা ১৩তম ওভারে ১৪ রান তুলেন ওয়ালটন-মিরাজ।
রুয়েলের করা ১৫তম ওভারে ২২ রান তুলেন ওয়ালটন-মিরাজ। ওই ওভারে ২টি করে চার-ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ওয়ালটন।

১৬তম ওভার থেকে ১৪ রান তুলেন ওয়ালটন-মিরাজ। তবে ১৭তম পেরেরা ৫ রান দিলেও, ১৮তম ওভারে ১০ রান দেন মাহেদি। এতে দেড়শ রান স্পর্শ করে চট্টগ্রাম। নিজের দ্বিতীয় ওভারে পেরেরা ৫ রান দিলেও তৃতীয় ও ইনিংসের ১৯তম ওভারে ২০ রান দেন পেরেরা। প্রথম চার বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ওয়ালটন। এতে ৪৩ বলে ৮৮ রানে পৌঁছে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান ওয়ালটন।

শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩০ বলে ৩৬ রান করা মিরাজকে বোল্ড করেন খালেদ। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৫৮ বলে এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১১৫ রানের জুটি গড়েন ওয়ালটন ও মিরাজ। আর এ জুটিতে ২৮ বলে ৭৮ রান তুলেন ওয়ালটন। পঞ্চম বলে ছক্কা মারেন ইংল্যান্ডের বেনি হাওয়েল। ফলে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৯ রানের সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম। খুলনার খালেদ ২টি, নাবিল-রুয়েল ও মাহেদি ১টি করে উইকেট নেন।

১৯০ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে চট্টগ্রামের স্পিনার নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন খুলনার হয়ে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার। আগের ম্যাচে ফ্লেচারের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ১৮২ রান করা মাহেদি আজ ছিলেন ফ্লপ। ২ রান করে নাসুমের শিকার হন মাহেদি।

পঞ্চম ওভারের প্রথমে বলে বিদায় ঘটে তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকারের। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়া সৌম্য করেন ১ রান। ৪৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে খুলনা। তবে দলকে চাপ অনুভব করতে দেননি ফ্লেচার ও নতুন ব্যাটার মুশফিক। ১২ ওভারেই দলের স্কোর শতরানে পৌঁছে দেন তারা।

হাওয়েলের করা ১০ম ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন মুশফিক। ওই ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩০তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ফ্লেচার। ১৩তম ওভারের প্রথম বলে ফ্লেচার-মুশফিক জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন মিরাজ। ২৯ বলে ৪৩ রান করা মুশফিককে বিদায় দেন। মুশফিকের বিদায়ের পর দেখেশুনে খেলেছেন ফ্লেচার ও ইয়াসির আলি।

মিরাজের করা ১৫তম ওভারে প্রথম বলে ফ্লেচারের ছক্কার পর জীবন পান ইয়াসির। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে ৫৬ রানের সমীকরণ দাঁড় করে খুলনা। শরিফুল ইসলামের ১৭তম ওভার থেকে ১৩ রান নেন ফ্লেচার-ইয়াসির। মৃত্যুঞ্জয়ের করা ১৮তম ওভার থেকে ১৯ রান পায় খুলনা। সেখানে ইয়াসির ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন।

শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য ২৪ রানের সমীকরণে ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন ইয়াসির। তবে শরিফুলের তৃতীয় বলে ডিপ পয়েন্টে হাওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইয়াসির। ২৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন ইয়াসির। ফ্লেচার-ইয়াসির ৩৮ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৬৫ রান তুলেন।

ইয়াসিরের বিদায়ের ওভারে ৮ রান পায় খুলনা। শেষ ওভারে ১৬ রানের প্রয়োজন পড়ে তাদের। মিরাজের করা প্রথম তিন বল থেকে ৩ রান নিতে পারেন ফ্লেচার-পেরেরা। চতুর্থ বলে ফ্লেচারের ব্যাট থেকে বাউন্ডারি আসে। পঞ্চম বলে ১ রান নিতে পারেন ফ্লেচার। আর শেষ বলে পেরেরাকে আউট করে চট্টগ্রামের জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ।

শেষ ওভারে ১ উইকেট নিয়ে ৮ রান দেন মিরাজ। আর খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮২ রান। ফ্লেচারের ৫৮ বলে ৮০ রানের অনবদ্য ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত বৃথা যায়। চট্টগ্রামের মিরাজ ৪০ রানে ২ উইকেট নেন। ১টি করে শিকার ছিল নাসুম-শরিফুল ও মৃত্যুঞ্জয়ের। ম্যাচ সেরা হন চট্টগ্রামের ওয়ালটন।

স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস

[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

বিপিএলের ‘ধারাভাষ্যে’ তামিম ইকবাল

বিপিএলের ‘ধারাভাষ্যে’ তামিম ইকবাল

বিপিএল ২০২২ : পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশ

বিপিএল ২০২২ : পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশ

আইপিএলে দল পাওয়ার দিনে বিপিএলে ডু প্লেসিসের সেঞ্চুরি

আইপিএলে দল পাওয়ার দিনে বিপিএলে ডু প্লেসিসের সেঞ্চুরি

স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভুল সংশোধন করলেন মৃত্যুঞ্জয়

স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভুল সংশোধন করলেন মৃত্যুঞ্জয়