শচীনের শততম শতকের ম্যাচে ছিল বাংলাদেশের জয়ধ্বনি

পার্থ প্রতীম রায় পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ০৮:৫৩ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০২২
শচীনের শততম শতকের ম্যাচে ছিল বাংলাদেশের জয়ধ্বনি

নিরানব্বই থেকে একশ! ব্যবধানটা ছোট হলেও শচীন টেন্ডুলকারের জন্য এই অপেক্ষাটা বেশ বড়। কারণ সেঞ্চুরি সংখ্যা নিরানব্বই থেকে একশতে নিতে যে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছরের বেশি সময়! অনেক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছালেও কাঙ্খিত সেই শততম শতকটি করতে পারেননি লিটল মাস্টার। সেই আক্ষেপটা ঘুচেছে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে এসে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারে শততম এবং শেষ সেঞ্চুরিটি।

১৬ মার্চ, ২০১২! এশিয়া কাপের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা বাংলাদেশের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। আর টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে চোখ করে নেমেছে ভারত।

ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ২৫ রানে পেসার শফিউল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ। এরপরে অবশ্য প্রতিরোধ গড়েন শচীন টেন্ডুলকার এবং তরুণ বিরাট কোহলি। দু’জন মিলে গড়েন ১৪৮ রানের জুটি।

দলীয় ১৭৩ রানে বিরাট ফিরলেও সেঞ্চুরির দিকেই আগাচ্ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। সঙ্গী সুরেশ রায়নাকে নিয়ে বাংলাদেশকে ভালোভাবেই মোকাবিলা করছিলেন লিটল মাস্টার।

ভারতীয় ইনিংসের ৪৪তম ওভারের চতুর্থ বল! ৯৯ রানে অপরাজিত শচীন টেন্ডুলকার। আর মাত্র একটি রান করলেই সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি ছুয়ে ফেলবেন। অপেক্ষায় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। 

সাকিব আল হাসানের করা মিডল স্ট্যাম্প বরাবর বলটি আলতো করে লেগ সাইডে পুশ করে নন স্ট্রাইক প্রান্তের দিকে দৌড় শুরু করেন শচীন টেন্ডুলকার। আর সেই নন স্ট্রাইক প্রান্তে পৌঁছানোর সাথে সাথে মিরপুরের ২৫ হাজার দর্শকের অভিবাদন আর করতালিতে সিক্ত হন শচীন। সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি, এতো অবিশ্বাস্য-অকল্পনীয়, শচীন বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে!

তবে শততম সেঞ্চুরির এই দিনটিকে নিজের করে রাখতে পারেননি লিটল মাস্টার। ম্যাচটি নিজেদের কবজায় করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। শচীনের রেকর্ডময় সেই সেঞ্চুরিতে ভর করে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেট ২৮৯।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে ২৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করা এক রকম কঠিনই মনে হচ্ছিলো। তবে সেই লক্ষ্যকে সহজ করে তুলেছিলেন সাকিব-তামিমরা। শচীনের রেকর্ডের ওই ম্যাচটিকে কোনোভাবেই ভারতের হাতে তুলে দেয়নি। বরং, ওই ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনাল খেলার পথে এক ধাপ এগিয়ে যায় টাইগাররা।

ম্যাচ জিততে হলে বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড হবে! এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নামেন দুই ওপেনার নাজিমউদ্দিন আর তামিম ইকবাল। ২৯০ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৫ রানেই প্যাভিলিয়নে নাজিমউদ্দিন।

তিনে নামা জহুরুল ইসলাম এবং ওপেনার তামিম ইকবাল মিলে দু’জন স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ১১৩ রান। এই দুইজনের ব্যাটে তখন জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ। জয়ের স্বপ্ন দেখা টাইগার সমর্থকদের হতাশ করে মুহূর্তেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তামিম আর জহুরুল।

দু’জনের বিদায়ের পর ৮৫ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ১৩৪ রান। আর বাংলাদেশের হাতে আছে ৭ উইকেট। এমন সময়ই ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন সাকিব। তার ব্যাটে ভর করে টাইগারদের স্কোরবোর্ডে ৫ ওভারে যুক্ত হয় ৫৫ রান। আর এতেই শেষ ৯ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ৭২ রান।

এমন সময়ই বিদায় সাকিবের। উইকেটে তখন মুশফিকুর রহিম আর নাসির হোসেন। নাসির যেখানে ব্যাট হাতে একের পর এক বাউন্ডারি আদায় করে নিচ্ছেন, ঠিক সে সময় রানিং বিটুইন দ্য উইকেট ছাড়া আর কোনো ভাবেই রান করতে পারছিলেন না মুশফিক। ম্যাচ হেলে যাচ্ছে ভারতের পক্ষে।

এমন সময় ম্যাচের ৪৮তম ওভারে টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে আবারও জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন মুশফিক। শুধু জয়ের স্বপ্ন দেখানো নয়, জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন এই উইকেটরক্ষক। ইংনিসের ৪৮তম ওভার থেকে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয় ১৭ রান। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার কেবল মাত্র ১৬ রান।

৪৯ তম ওভারের প্রথম বলটিই নো বল করেন প্রবীন কুমার। পাশাপাশি সেই বল থেকে চার আদায় করে নেন মুশফিক। আর প্রথম লিগ্যাল ডেলিভারিতে আরও একটি ছক্কা হাঁকান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

শেষ ১১ বলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার কেবল মাত্র ৫ রান। পরের তিন বলে তিন রান তুলে নিলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিল কেবল মাত্র দুই রান। সেই সময় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে প্যাভিলিয়েন ফেরেন নাসির।

শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ৫ রান তুলে নিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক-সাকিব-তামিমদের ব্যাটিং নৈপ্যুণের দিনে ম্লান হয়ে যায় শচীনের সেঞ্চুরি।

শচীনের শততম সেঞ্চুরির দিনে কেন হেরেছিল ভারত? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকেই ম্যাচ হারের জন্য দায়ী করেন শচীনের ধীরগতির ব্যাটিংয়ের। তাই তো শচীনের শততম সেঞ্চুরির প্রশংসার চেয়ে সমালোচনাটাই হয় বেশি। ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ দল।

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

লিটল মাস্টার শচীনের কালজয়ী সব ইনিংস

লিটল মাস্টার শচীনের কালজয়ী সব ইনিংস

মোশারফ রুবেল : জীবনযুদ্ধে পরাজিত লড়াকু এক যোদ্ধা 

মোশারফ রুবেল : জীবনযুদ্ধে পরাজিত লড়াকু এক যোদ্ধা 

অনুজ রাওয়াত : জার্নি ফ্রম উত্তরাখন্ড টু আইপিএল

অনুজ রাওয়াত : জার্নি ফ্রম উত্তরাখন্ড টু আইপিএল

শেন ওয়ার্ন, কিংবদন্তিদের চোখে ‘কিংবদন্তি’

শেন ওয়ার্ন, কিংবদন্তিদের চোখে ‘কিংবদন্তি’