পরিসংখ্যানে এগিয়ে ইতালি, সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনা

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০১:২৩ পিএম, ০১ জুন ২০২২
পরিসংখ্যানে এগিয়ে ইতালি, সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনা

রাতে দারুণ এক ফুটবলীয় লড়াই অপেক্ষা করছে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য। ইউরোপ আর আমেরিকার মহাদেশীয় ফুটবল যুদ্ধ মঞ্চায়ন হবে ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। যে মঞ্চের নাম ‘ফাইনালিসিমা।’ এবারের লড়াইয়ে ল্যাতিন আমেরিকা থেকে অংশ নেবে দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ইউরোপের প্রতিনিধি চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি। 

ইউরোপে ইউরো টুর্নামেন্ট থেকে চ্যাম্পিয়ন ও ল্যাতিন আমেরিকায় কোপা আমেরিকা থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দুই দল এই ম্যাচে নিজেদের মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এর আগে দুইবার এই ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স একবার করে শিরোপা ঘরে তুলেছিল। ফলে ইউরো-আমেরিকা লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত দুই মহাদেশই সমানে সমান।

ফাইনালিসিমার তৃতীয় আসরে বুধবার (১ জুন) রাত ১২.৪৫ মিনিটে আজ্জুরিদের মুখোমুখি হবে আলবেসেলিস্তারা। আসন্ন কাতার বিশ্বকাপের আগে ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শিরোপা জিতে নিজেদের উজ্জিবীত করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না আর্জেন্টিনা।

অন্যদিকে বিশ্বকাপে অংশ নিতে না পারার দুঃখ ভুলে এই ম্যাচ দিয়েই আবার নতুন করে শুরু করতে চায় ইতালি। এছাড়া আর্জেন্টিনার বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চলেছেন ইতালি অধিনায়ক জর্জিও কিয়েলিনি। ল্যাতিন আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দলের অধিনায়ককে জয় দিয়েই বিদায় দিতে চায় আজ্জুরিরা। 

দুই দল দুই মহাদেশের হওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ ও বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট ব্যতীত দেখা হয় না বললেই চলে। সর্বশেষ চার বছর আগে ফিফা প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দল দু’টি। যেখানে ২-০ গোলের ব্যবাধানে জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে লিওনেল মেসির দলের।

সর্বশেষ পাঁচ দেখায় আর্জেন্টিনাকে একবারও হারাতে পারেনি ইতালি। চার হারের বিপরীতে সর্বসাকুল্যে এক ড্র-ই সম্বল ওদের! ৩৫ বছর ধরে আজ্জুরিদের বিপক্ষে অপরাজিত আলবেসেলিস্তারা। সর্বপ্রথম ১৯৫৪ সালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয় ইতালি, ফিফা প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলের ব্যবধানে জয়ও পেয়েছিল আজ্জুরিরা।

sportsmail24

দুই দুল সর্বমোট মুখোমুখি হয়েছে ১৫ বার। যেখানে ৬ জয় নিয়ে এগিয়ে রয়েছে ইতালি, ৫ জয় নিয়ে আর্জেন্টিনাও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বাকি চার দেখায় ফল অমিমাংসিত রেখেই মাঠ ছেড়েছে দুই দল।

ঐতিহাসিক ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম, যেখানে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই জয় পায়নি আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি কখনোই ওয়েম্বলিতে হারেননি। আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা তাই স্বাভাবিক ভাবেই চাইবেন যেন তাদের অধিনায়কের রেকর্ডটা অক্ষত থাকুক।

সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সেও ইতালির থেকে অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনা। ইউরো জিতেলেও চলতি বছরের কাতার বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারছে না আজ্জুরিরা। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে নর্থ মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে তাদের। শেষ ৬ ম্যাচে মাত্র দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে রবার্তো মানচিনির দল।

অন্যদিকে লিওনেল স্কলানির অধীনে আর্জেন্টিনা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। দলটি শেষ হার দেখেছে তিন বছর আগে। ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিক্ষে হারের পর থেকে টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত ল্যাতিন আমেরিকান চ্যাম্পিয়নরা। ২০২১ কোপা আমেরিকা জিতে জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা না জেতার বঞ্চনা মুছেচেন মেসি। তরুণ-অভিজ্ঞদের নিয়ে দারুণ সুখি পরিবার এখন আর্জেন্টিনা দল। 

sportsmail24

সব মিলিয়ে মানসিকভাবে ইতালি একটু পিছিয়েই থাকবে। অন্যদিকে ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে উজ্জ্বিবীত আর্জেন্টিনা চাইবে ফাইনালিসিমা’র দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলতে।

ইতালির বিপক্ষে আর্জেন্টিসা স্কলানি একাধিক অনাভিষিক্ত খেলোয়াড়কে স্কোয়াডে রেখেছেন। নেহুয়েন পেরেজ ও মার্কোস সেনেসি তার মধ্যে অন্যমত। এদের হয়তো কারো এই ম্যাচে অভিষেকও হয়ে যেতে পারে।

তবে স্কলানির স্কোয়াড থেকে বাদও পড়েছেন কিছু আলোচিত খেলোয়াড়। লিওনার্দো প্যারাদেস, লুকাস পেরেজ, নিকোলাস ডমিনগুয়েজ, লুকাস আলারিও ও এমিলিয়ানো বুন্দিয়াকে ইতালির বিপক্ষে প্রাথমিক স্কোয়াডেও রাখেননি তিনি।

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে লম্বা স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন আজ্জুরি বস রবার্তো মানচিনি। যেখানে ১২ জন অনাভিষিক্ত খেলোয়াড়কে রেখেছেন তিনি। লক্ষ্য, দলকে ঢেলে সাজানো। ডেভিড ফ্রাট্টেসি, টমাসো পবেগা, স্যামুয়েল রিচি, ফার্দিকো গাট্টির মতো তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলাররা ডাক পেয়েছেন মানচিনির দলে। তবে চিরো ইমমোবাইলের ডাক না পাওয়া আলোচনার জন্ম দিয়েছে ইতালিয়ান গণমাধ্যমে। এছাড়া আরও অনেকে ইনজুরিতেও দল থেকে ছিটকে পড়েছেন।

ইতালির জন্য ভয়ংকর হতে পারে আর্জেন্টিনার বর্তমান দলের হার না মান মানসিকতা। আর্জেন্টিনার এই দলটা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি একতাবদ্ধ। জয়ের জন্য নিজদের নিংড়ে দেয় এরা। অধিনায়ক মেসির সঙ্গে কাঁধে কাধ মিলিয়ে যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে লিওনেল স্কলানির দলটি।

গোলপোস্টের নীচে ২০২১ কোপ আমেরিকা থেকেই আর্জেন্টিনার ভরসার প্রতীক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এছাড়া ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, ওটামেন্ডি ছাড়াও আক্রমণ ভাগে ইতালির চিন্তার কারণ হতে পারেন লাওতারো মার্টিনেজ।

অন্যদিকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়েছে বলে ইতালিকে একদমই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই আর্জেন্টিনার সামনে। বিশ্বকাপ শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে নিজেদের উজাড় করে দিতে চাইবে দলটি।

গোলপোস্টের নীচে মেসির পিসজি সতীর্থ ডোনারুম্মা হতে পারেন আর্জেন্টিনার মাথা ব্যথার কারণ। এছাড়া মাঝ মাঠে ভেরেত্তি, রক্ষণভাগে অধিনায়ক বোনুচ্চি গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের ফলাফলের পার্থক্য।

ঐতিহাসিক ফাইনালিসিমা’র শিরোপা কার হাতে উঠবে? সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে ওয়েম্বলিতে রেফারির শেষ বাঁশি বাজার জন্য। তবে মাঠে নামার আগে মানসিকভাবে আর্জেন্টিনা যে অনেকখানিই এগিয়ে রয়েছে এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সব সময় তো আর মানসিক ভাবে এগিয়ে থাকলেই হয় না, মাঠের খেলাটাই আসল ব্যাপার। এখন সময়ের অপেক্ষা, মেসির হাতে আরেকটি শিরোপা নাকি ল্যাতিন আমেরিকার বিপক্ষে ইউরোপের জয়গান!

স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি 


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

শিরোপাটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই: বোনুচ্চি

শিরোপাটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই: বোনুচ্চি

২০২৬ বিশ্বকাপেও খেলতে পারেন মেসি!

২০২৬ বিশ্বকাপেও খেলতে পারেন মেসি!

কাতার বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলকে বিদায় জানাবেন ডি মারিয়া

কাতার বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলকে বিদায় জানাবেন ডি মারিয়া

চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ  সেরা দল ছিল না: মেসি

চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ সেরা দল ছিল না: মেসি