গোলাপী বলে খেই হারালো বাংলাদেশ, প্রথম দিনেই ভারতের লিড

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ১০:৩৫ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৯
গোলাপী বলে খেই হারালো বাংলাদেশ, প্রথম দিনেই ভারতের লিড

দিবা-রাত্রির টেস্টের গোলাপি বলে ভারতের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম দিনই খেই হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ফলে ৩০.৩ ওভারেই মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ও নিজ বোলারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সে প্রথম দিনই ব্যাট করার সুযোগ পায় ভারত। দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৭৪ রান করে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৮ রানে এগিয়ে গেছে ভারত।

কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে প্রথম গোলাপী বলের টেস্টকে রঙিন করে তুলতে ব্যাপক আয়োজন করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। সেই প্রমাণ মিললো ম্যাচ শুরুর আগ থেকেই। খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগ থেকে পরিপূর্ণ হতে থাকে গ্যালারি। প্রায় ৪০ হাজার ক্রিকেটপ্রেমীদের সামনে নিজেদের প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টে টস ভাগ্যে জয় পান বাংলাদেশের অধিনায়ক মমিনুল হক। টস জিতে প্রথমেই ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন তিনি।

মমিনুলের সিদ্বান্তের পর দু’দলের খেলোয়াড়দের সাথে মাঠের পরিচিত হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎ শেষে ম্যাচ শুরুর জন্য ঘণ্টা বাজান শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিসিআই’র সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি।

শুধু গাঙ্গুলি নন, উপস্থিত ছিলেন ২০০০ সালে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট খেলা দুই দলের সাবেক খেলোয়াড়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

আনন্দমুখর আয়োজন পর ব্যাট হাতে নিজেদের আলোকিত করার পালা শুরু হয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। তবে গোলাপী বলের রঙের মত উজ্জ্বল হতে সর্তকতার সাথে দলের ইনিংস শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস। ৬ ওভার পর্যন্ত ভালোভাবেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন তারা।

তবে সপ্তম ওভার থেকে পাল্টে যায় ভারতীয় বোলারাদের চেহারা। ওভারের তৃতীয় বলে ইমরুলকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন ভারতের পেসার ইশান্ত শর্মা। রিভিউ নিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি ইমরুল। ৪ রান করে ফিরেন তিনি। এর আগে একই ওভারে প্রথম বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন ইমরুল।

ইমরুলকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে অন্য প্রান্ত দিয়ে চেপে ধরেন ভারতের অন্য দুই পেসার উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ সামি। ১১তম ওভারের প্রথম বলে মমিনুলকে এবং তৃতীয় বলে মিঠুনকে শিকার করেন উমেশ। আর ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে বাংলাদেশের মিডল-অর্ডারের মেরুদণ্ড মুশফিকুর রহিমকে বিদায় দেন সামি।

তিনজনই শূন্য হাতে বিদায় নিয়েছেন। তবে মিঠুন-মুশফিকের ব্যাটকে স্পর্শ করে স্টাম্পে আঘাত হানে গোলাপী বল। মমিনুল স্লিপে রোহিতের দুর্দান্ত ক্যাচে থামেন। ফলে ২৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।

এ অবস্থাতেও দলের রানের চাকা ঘুড়ানোর চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার সাদমান। এক প্রান্ত আগলে কাট-পুল-ফ্লিক শটে পাঁচটি দুর্দান্ত চার মারেন তিনি। এতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন সাদমান। তবে সাদমানকে বেশি দূর যেতে দেননি উমেশ। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ২৯ রানে থামেন সাদমান। ৫২ বল মোকাবেলা করে নিজের ছোট্ট ও সুন্দর ইনিংসটি সাজান সাদমান।

৩৮ রানে সাদমানের বিদায়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর দায়িত্ব পান মিডল-অর্ডারে বাংলাদেশের দুই প্রধান ভরসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও উইকেটরক্ষক লিটন দাস। উইকেটে সেট হওযার জন্য মারমুখী মেজাজ দেখান লিটন। বাউন্ডারি দিয়ে নিজের রানের খাতা খুলেন লিটন। মাহমুদউল্লাহ’র সাথে আরও দু’টি চারে ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন লিটন। অন্যপ্রান্তে ভারতীয় পেসারদের সুইংয়ে সতর্ক ছিলেন মাহমুদুউল্লাহ। সতর্ক থাকলেও তাতে লাভ হয়নি মাহমুদউল্লাহর।

ইশান্ত শর্মার বলে পুরোপুরি ব্যাট না নিয়ে ফ্রন্টফ্রুটে খেলতে গিয়ে প্রথম স্লিপের সামনে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ডান-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্তভাবে সেই ক্যাচ নেন ভারতের উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা। এতে ১টি চারে ৬ রানে থেমে যান মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়ে দলের একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে ছিলেন লিটন। ব্যাট হাতে বেশ সাবলীল দেখাচ্ছিল তাকে।

তবে ২২তম ওভারে ভারতের ইশান্তের বাউন্সারে মাথায় ব্যাথা পেয়ে আহত অবসর হয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। পরবর্তীতে আর মাঠে ফিরতে পারেননি তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে ৫টি চারে ২৭ বলে ২৪ রান করেন লিটন। লিটনের পরিবর্তে ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে মাঠে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এমন সুবিধা পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি মিরাজ।

ইশান্তের চতুর্থ শিকার হন তিনি। ২টি চারে করেন ৮ রান। মিরাজের আগে এবাদত হোসেনকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান ইশান্ত। ইশান্তের ডেলিভারিতে এবাদতের অফ-স্টাম্প ভেঙে তিনবার ঘুড়পাকও খায়। ১ রান করেন এবাদত।

লিটনের আহত হওয়া ও এবাদত-মিরাজের বিদায়ে ৯৮ রানে অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এতে শতরানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। অবশ্য দলীয় ৭৩ রানে লিটনের আহত অবসরের পরই দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ।

তবে অন্যপ্রান্ত ভালোভাবেই আগলে রেখেছিলেন নাঈম হাসান। নিজের ইনিংস গড়ার পথে মাথায় বলের আঘাতও পান নাঈম। ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামির বাউন্সার আঘাত হানে নাইমের মাথায়। তবে লিটনের মত মাঠ ছাড়েননি তিনি। মাঠের ভেতর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ব্যাট হাতে লড়াই করেছেন নাঈম। ব্যাট করার সময় ইনজুরিটি খুব বেশি গুরুত্বর মনে হয়নি তার কাছে। কিন্তু আউট হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে লিটনের মত নাঈমও স্ক্যান করান।

দলের স্কোর শতরানে পৌঁছে দিয়ে দলীয় ১০৫ রানে বিদায় নেন নাঈম। ৪টি চারে ১৯ রান করা নাঈমকে শিকার করে ১২ বছর পর দেশের মাটিতে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার পূর্ণ করেন ইশান্ত। তবে সব মিলিয়ে ১০মবার টেস্ট ক্যারিয়ারে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন ইশান্ত।

নাঈমের বিদায়ের পরের ওভারেই ১০৬ রানে নিজেদের ইনিংস গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদকে খালি হাতে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন ভারতের সামি। শেষ পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৩ ওভার ব্যাট করতে পারে। ইশান্ত ২২ রানে ৫টি, উমেশ ২৯ রানে ৩টি ও সামি ৩৬ রানে ২টি উইকেট নেন।

বাংলাদেশকে ১০৬ রানে অলআউট করে প্রথমদিনেই ব্যাট হাতে মাঠে নামে স্বাগতিক ভারত। ব্যাট হাতে মাঠে নেমে ভালো করতে পারেননি মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও রোহিত শর্মা।

২১ বলে ১৪ রান করে আল আমিনের বলে মিরাজের হাতে ক্যাচবন্দি হন। অন্যদিকে এবাদাতের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে ৩৫ বরে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন রোহিত শর্মা।

এছাড়া তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নামা চেতেশ্বর পুজারা সাজঘরে ফেরার আগে তুলে নেন হাফ-সেঞ্চুরি। এবাদাত হোসেনের দ্বিতীয় শিকারের আগে ব্যাট হাতে ১০৫ বল মোকাবেলা করে তুলে নেন ৫৫ রান। তার এ ইনিংসে আটটি চারের মার ছিল।

প্রথম দিনে তিন উইকেট হারালেও ব্যাট হাতে অধিনায়ক বিরাট কোহলি ৯৩ বলে ৫৯ রান এবং ২২ বলে ২৩ রান করে আজিঙ্কা রাহানে অপরাজিত রয়েছেন। প্রথম দিন শেষে ভারতে সংগ্রহ ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান। অর্থাৎ ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৬৮ রান লিড নিয়েছে ভারত।


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

দিবা-রাত্রির টেস্টে বাংলাদেশ একাদশে দুই পরিবর্তন

দিবা-রাত্রির টেস্টে বাংলাদেশ একাদশে দুই পরিবর্তন

ইডেন টেস্টের প্রথম চারদিনের টিকিট শেষ

ইডেন টেস্টের প্রথম চারদিনের টিকিট শেষ

গোলাপী বলের ক্রিকেট টেস্টের ভাবিষ্যৎ নয় : কোহলি

গোলাপী বলের ক্রিকেট টেস্টের ভাবিষ্যৎ নয় : কোহলি

দিবা-রাত্রির টেস্টে কেন গোলাপী বল

দিবা-রাত্রির টেস্টে কেন গোলাপী বল