শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে রংপুরকে হারিয়ে ফাইনালে মাশরাফির সিলেট

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ১০:১৭ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে রংপুরকে হারিয়ে ফাইনালে মাশরাফির সিলেট

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে আগে দুর্দান্ত একটি লড়াই দেখলো ক্রিকেট ভক্তরা। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে শ্বাসরুদ্ধকর একটি ম্যাচ উপহার দিলো রংপুর রাইডার্স এবং সিলেট স্ট্রাইকার্স। শেষ পর্যন্ত রংপুরকে হারিয়ে আসরে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে উঠলো মাশরাফির সিলেট।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮২ রান করে সিলেট। জবাবে ওপেনার রনি তালুকদারের ৬৬ রানের ইনিংসে জয়ের বন্দরের কাছে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠেনি নুরুল হাসান সোহানের দল রংপুর।

বিপিএলের ইতিহাসে এটাই প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠলো সিলেট। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে সিলেট। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে এই সিলেটকেই ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন এনে এ ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে ইনিংস শুরু করে সিলেটকে দারুণ সূচনা এনে দেন তৌহিদ হৃদয়। পাওয়ার-প্লেতে ৪৪ রান করেন তারা। এ সময় শান্ত ৫টি চারে ২১ বলে ৩০ ও হৃদয় ২টি চারে ১৫ বলে ১৪ রান করেন।

অষ্টম ওভারে সিলেটের রান ৫০ পূর্ণ করেন শান্ত ও হৃদয়। ঐ ওভারেই ম্যাচের প্রথম ছক্কা মারেন হৃদয়। নবম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতে স্পিনার মাহেদি হাসানের বলে লেগ বিফোর আউট হন ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩০ বলে ৪০ রান করা শান্ত। হৃদয়ের সাথে ৫৩ বলে ৬৫ রান যোগ করেন শান্ত।

শান্তর বিদায়ে পিঞ্চ হিটার হিসেবে তিন নম্বরে নামেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে পাঁচ নম্বরে নেমে ১৭ বলে ২৬ রান করেছিলেন তিনি। এবার নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ছক্কা মারেন মাশরাফি।

দশম ওভারে দলীয় ৭৭ রানে হৃদয়কে থামান রংপুরের পেসার হাসান মাহমুদ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ বলে ২৫ রান করেন হৃদয়। হৃদয় ফেরার পর সিলেটের রানের চাকা সচল রাখেন মাশরাফি ও জাকির। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৩তম ওভারে সিলেটের রান ১শতে নেন তারা। ঐ ওভারেই জাকিরকে আউট করেন রংপুরের শ্রীলঙ্কার পেসার দাসুন শানাকা। ১টি চারে ১৩ বলে ১৬ রান করেন জাকির।

১৪তম ওভারে মাশরাফির দু’টি ও জিম্বাবুইয়ান রায়ান বার্লের ১ বাউন্ডারিতে ১৯ রান পায় সিলেট। শানাকার পরের ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা মেরে আউট হন বার্ল। ৬ বলে ১৫ রান করেন তিনি। ডোয়াইন ব্রাভোর করা ১৬তম ওভারে প্রথম বলে আউট হন মাশরাফি। তবে তার আগে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬ বলে ২৮ রানের কার্যকর ইনিংস উপহার দেন সিলেট অধিনায়ক।

ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। হাসানের দ্বিতীয় শিকার হন ৫ বলে ১টি চারে ৬ রান করা মুশি।মুশফিকের ফেরার পর সপ্তম উইকেটে ২১ বলে ৩৬ রান তুলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা ও দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জ লিন্ডে। শানাকার করা শেষ ওভারের ২টি ছক্কা ও ১টি চারে সিলেটকে ১৭ রান এনে দেন লিন্ডে।

১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন লিন্ডে। ১টি ছয়ে ১৫ বলে ২১ রান করে রান আউট হন পেরেরা। এতে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮২ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট। বল হাতে রংপুরের হাসান ৩৪ রানে ও শানাকা ৪৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন।

ফাইনাল নিশ্চিতের জন্য ১৮৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় রংপুর। ইংল্যান্ডের স্যাম বিলিংসকে ১ রানে থামিয়ে দেন সিলেটের পেসার তানজীম হাসান সাকিব। তিন নম্বরে নেমে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে এলিমিনেটর ম্যাচের জয়ের নায়ক শামিম হোসেন। ১টি করে চার-ছয় মারলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে শামিমকে বিদায় করেন পেসার রুবেল হোসেন। ১১ বলে ১৪ রান করেন শামীম।

বিলিংস ও শামিমকে হারিয়ে পাওয়ার-প্লেতে ৩৭ রান পায় রংপুর। রান রেট কম থাকায় উইকেটে এসেই মারমুখী ব্যাট চালান ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান। স্পিনার লিন্ডেকে ২টি, মাশরাফি- লুক উডকে ১টি করে ছয় মারেন পুরান। নবম ওভারে লিন্ডের দারুণ ক্যাচে পুরানকে থামান উড। ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৪ বলে ৩০ রান করেন পুরান। ৬৮ রানে ৩ উইকেট হারায় রংপুর।

এরপর ওপেনার রনি তালুকদারের সাথে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক নুরুল। ১০ম ওভারে এই জুটি ভাঙার সুযোগ তৈরি করেন মাশরাফি। ম্যাশের ডেলিভারিতে ডিপ স্কয়ারে জাকির ক্যাচ মিস করলে ২৯ রানে জীবন পান রনি। জীবন পেয়ে ১৪তম ওভারে এবারের আসরে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন রনি। এ জন্য ৪০ বল খেলেন তিনি।

রনির হাফ-সেঞ্চুরি পর ম্যাচ জিততে শেষ ৬ ওভারে ৬৩ রান দরকার পড়ে রংপুরের। রুবেলের করা ১৫তম ওভারে ভাগাভাগি করে ৪টি চার মেরে রংপুরের স্কোরে ১৭ রান জমা করেন রনি ও নুরুল। পরের দুই ওভারে ১৩ রান পায় রংপুর। শেষ ৩ ওভারে ৩৩ রান দরকার পড়ে রংপুরের।

১৮তম ওভারে শেষবারের মতো আক্রমণে এসে প্রথম বলে রনি-নুরুলের জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন তানজিম হাসান সাকিব। ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৩ রান করা নুরুলকে শিকার করেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে ৫২ বলে ৮২ রান যোগ করেন রনি-নুরুল।

একই ওভারের চতুর্থ বলে রনিরও বিদায় ঘটে। সাকিবের ডেলিভারিটি খেলতে না পারলে বল জমা পড়ে উইকেটরক্ষক জাকিরের হাতে। রান নিতে উইকেট থেকে বের হন রনি। সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভাঙেন জাকির। রান আউট হওয়ার আগে ৫২ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন রনি। সাকিবের করা ওভার থেকে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২ রান পায় রংপুর।

১৯তম ওভারে বল করতে এসে প্রথম চার বলে ৩ রান দেন উড। শেষ দুই বলে মাহেদি ও ব্রাভোকে শিকার করেন উড। ওই ওভারে ৩ রানে ২ উইকেট নেন উড। এমন অবস্থায় শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২৮ রানের সমীকরণ পায় রংপুর।

শেষ ওভারে ৮ রান দিয়ে শানাকার উইকেট নিয়ে সিলেটের ফাইনাল নিশ্চিত করেন রুবেল। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৩ রান করে ম্যাচ হারে রংপুর। সিলেটের পক্ষে উড ৩টি, সাকিব-রুবেল ২টি করে উইকেট নেন।

স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস


শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

মুকিদুলের রেকর্ড গড়া বোলিং

মুকিদুলের রেকর্ড গড়া বোলিং

ফাইনালের টিকিটেই দেখা যাবে ‘বিপিএল কনসার্ট’, মূল্য নির্ধারণ

ফাইনালের টিকিটেই দেখা যাবে ‘বিপিএল কনসার্ট’, মূল্য নির্ধারণ

বিপিএলে সাকিবের ‘সেঞ্চুরি’

বিপিএলে সাকিবের ‘সেঞ্চুরি’

কোচ হাথুুরুসিংহেকে নিয়ে রোমাঞ্চিত তাসকিন

কোচ হাথুুরুসিংহেকে নিয়ে রোমাঞ্চিত তাসকিন